Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিতু হত্যা মামলা ‘আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনি’

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের তদন্ত নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজাল আর সন্দেহের তীর যখন নিজের দিকে তখন মুখ খুললেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। ‘সবাই বিচারক, আর আমি কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনি’ শিরোনামে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাস্টাসে তিনি তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
গতকাল সোমবার ছিল তার ছেলের জন্মদিন। মাকে ছাড়া এটাই তার প্রথম জন্মদিন উল্লেখ করে বাবুল আক্তার বলেন আমার দুই সন্তান এখনও তাদের মাকে খুঁজে ফিরে। তিনি এখন তার দুই সন্তানকে আগলে রাখার কাজেই ব্যস্ত উল্লেখ করে বলেন, আমিও মিতু হত্যার বিচার চাই। যারা আমার সন্তানদের মা হারা করেছে তাদের বিচার হতেই হবে।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তর পুলিশ সুপার হিসাবে ঢাকায় বদলি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে গত ৫ জুন ভোরে বন্দর নগরীর ও আর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে যায় দুর্বৃত্তরা। খুনের পর নিজে বাদী হয়ে মামলা করেন তিনি এবং দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় এসে শ্বশুর বাড়িতে ওঠেন।
শুরুতে এই হত্যাকাÐের জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও পরে পুলিশের তদন্তে গতিপথ পাল্টায় পুলিশ। ধরা পড়ে কয়েকজন আসামি। দুইজন ক্রসফায়ারে প্রাণ হারায়। পুলিশ নিশ্চিত হয় এ খুনের মূলহোতা আবু মুসা সিকদার। এর মধ্যে ২৪ জুন রাতে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে নিয়েও সন্দেহের গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। তবে এই বিষয়ে বাবুল আক্তার কিংবা পুলিশ বিভাগ নীরব থাকে। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাবুলের ইচ্ছায় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে হঠাৎ করে বাবুল আক্তারের শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। সন্দেহের তীর ছুঁড়েন বাবুলের প্রতি। এ নিয়ে কিছু কিছু মিডিয়ায় প্রতিবেদনও আসতে থাকে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাও মিতুর স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদে মনোনিবেশ করেন। মূলহোতা হিসাবে যে মুছা শিকদারকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয় তাকে ধরার চেষ্টা বাদ দিয়ে দৃশ্যত তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও ভিন্ন কিছু খুঁজতে শুরু করেন। এক পুলিশ কর্মকর্তার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাকেও টেনে আনা হয় বাবুল আক্তারের উপর-বলা হয় ওই ঘটনা ছিল খুনের আর নেপথ্যে ছিল বাবুলের পরকিয়া। এসব অভিযোগের জবাব দেন বাবুল।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, শ্যালিকাকে (মিতুর খালাতো বোন) বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাসে রাজি না হওয়ায় তার শ্বশুর তাকে নিয়ে এসব বলছেন। বাবুল বলেন, তার শ্বশুরের পরিবার যৌথ পরিবার। মা-হারা দু’টি সন্তানকে নিয়ে সেখানে থাকার মতো পরিবেশ ছিল না। অন্য বাসায় চলে যাবেন এমন কথা বলার পর তার শ্বশুর তাকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলে। তিনি বলেন, টাকা দাও আমি নতুন ঘর করে দিব। একপর্যায়ে তার শ্বশুর কিশোরী শ্যালিকাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। তিনি বাবুলকে জানিয়ে দেন, বিয়ে করে এ বাড়িতেই থাকতে হবে। মা-বাবার সাথে কোন যোগাযোগ রাখা যাবে না।
বাবুল লেখেন, আমার শ্বশুর বললেন, হয় আমাকে আমার বাবা-মা ছাড়তে হবে, না হয় শ্বশুর-শাশুড়ি ছাড়তে হবে। আমি কী মরে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম? কী জানি! তবে আমি চুপ ছিলাম, কৃতজ্ঞ ছিলাম।
মিতুর মা-বাবা এখন সন্দেহ করছে বাবুলকে। এ প্রসঙ্গে বাবুল লেখেন, আমার মুখ্য অপরাধের তালিকায় বাচ্চামেয়ে বিয়ে না করে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে নিজের মত থাকাটাই হয়ত এক নম্বরে জায়গা পাবে। না হয় মিতুর মৃত্যু পর তার মা কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, ‘১৪ বছরের সংসারে অশান্তি হয়নি বাবুল-মিতুর।’ এমনকি গতমাসে (২৫ জানুয়ারি) তিনি চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি বাবুলকে সন্দেহ করি না।’ মিতুর বাবা মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে নানা অপপ্রচারের প্রেক্ষিতে বলেছিলেন, ‘এসব কথা ভিত্তিহীন। তদন্ত ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য এসব রটানো হচ্ছে।’ আমার শ্যালিকা শায়লা বলেছিল, ‘ভাইয়া আর আপুর সংসারে কোন অশান্তি ছিল না।’ আর কয়েকমাস গড়াতেই আজ ভিন্ন কথন!
বাবুল বলেন, আরও কত গল্প যে শুনতে হবে জানি না। কারণ, আমার শ্বশুর তো বলেই রেখেছেন যে আমার দেশে-বিদেশে পরকীয়া আছে। আমার শ্বশুর পক্ষ তাদের কথা রেখেছেন, আমাকে অপমানিত করার জন্য চেষ্টায় কোন ত্রæটি রাখেননি। ‘তোমারে পচাইয়া ছাড়মু, শান্তিতে থাকতে দিমু না।’- কথাটি অক্ষরে অক্ষরে রাখার নিরন্তর সাধনা করে যাচ্ছেন তারা।
নিহত আকরামের বোন রিনি অভিযোগ করেছেন যে আমার প্রভাবে পুলিশ আকরাম হত্যার অভিযোগ থেকে আমার নাম বাদ দিয়েছিল। অথচ তিনি তখন আমার নামে কোন অভিযোগই করেননি। রিনি তখন আদালতে অভিযোগ করেছিলেন যে আকরামের স্ত্রী তার ফুপাতো ভাই মুনের সাথে পরকীয়ার সম্পর্কের জের ধরে আকরামকে খুন করে। ঐ অভিযোগে আকরামের স্ত্রী, তার কথিত প্রেমিক মুন এবং আকরামের শ্বশুর-শাশুড়ির নাম উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া ঘটনার সময় আমি দেশেও ছিলাম না।
এত বছর পর রিনি আগের সব অভিযোগ ভুলে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে তার ভাই হত্যার বিচার চাইতে গিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের (আমার শ্বশুর) কাছে। আর নিহত আকরামের স্ত্রী থাকেন মাগুরা এবং ঝিনাইদহে; আমার পদোন্নতির আগ পর্যন্ত আমি থাকতাম চট্টগ্রামে। আর আমার বছরে একবারও বাড়ি যাওয়ার মত সময় সুযোগ হত না। পরিচয় ছাড়া, যোগাযোগ ছাড়া, দেখা সাক্ষাৎ ছাড়াও যে পরকিয়া হয় এটা জানা ছিল না।
আমি চাই আমার স্ত্রী হত্যার সঠিক বিচার হোক। সে আমার সন্তানদের মা, আমার পৃথিবীর ভিত ছিল সে। তাকে হারিয়ে আমি এবং আমার বাচ্চা দুটোর চেয়ে বেশী কষ্ট কেউ পেয়েছে বলে আমার বোধ হয় না। এখনও সামলে উঠতে পারিনি আমরা। বাচ্চাদের একটা স্বাভাবিক জীবন দেয়ার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরমধ্যেই যে যা ইচ্ছে বলছে, ছাপছে।
বাবুল বলেন, কথাগুলো একান্তই পারিবারিক। মেয়ে হারিয়ে মা-বাবার কষ্ট প্রকাশের একটা মাধ্যম হয়ত এসব ভিত্তিহীন অসংলগ্ন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাবার্তা, তাই আমি প্রত্যুত্তোরে এতটুকু শব্দ করতেও নারাজ। কিন্তু এখন কথাগুলো পরিবারের সীমা পেরিয়ে লোকের ঘরে ঘরে বিনোদোনের উৎস হিসেবে স্থান পেয়েছে। তাই আজ কিছু বলতে হল। এত স্বল্প পরিসরে সবটুকু বলে শেষ করা সম্ভব নয়। যদি সব বলতে বসি তবে হয়ত একটা বই-ই হয়ে যেত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ