Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বন্ধুত্ব নয় -ঢাকা বারের নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সমাবেশে খালেদা জিয়া

| প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন হলে জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে
স্টাফ রিপোর্টার : ‘দেশের স্বার্থ বিকিয়ে বন্ধুত্ব নয়’ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি আমার বাংলাদেশের স্বার্থ আগে দেখব, তারপর অন্যের কথা হবে। অবশ্যই সকলের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকবে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে, কিন্তু আমার দেশের স্বার্থের বাইরে যেয়ে আমি কাউকে অধিক কিছু দিয়ে দেবো, আর বাংলাদেশ থাকবে না, সেটা হতে পারে না’। ‘আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমানে সমান, কেউ বলে দেবে, তার ইচ্ছামতো তা করব, তাদেরকে খুশি রাখার জন্য সেটা নয়। এখন তিস্তার পানি নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা চাই, তিস্তার পানি ন্যায্য হিস্যা আমাদের দিতে হবে, তাছাড়া অন্য কোনো কিছু আমরা মানব না’। গতরাতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নিবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন।
‘বির্তকিত’ ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ দিয়ে সরকার আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনের ইলেকশনের কী পরিকল্পনা, সেটা তারা (সরকার) করে রেখেছে। কীভাবে বিজয়ী হবে, সেটাও করে রেখেছে। যার জন্য বসিয়েছে তাদের আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ সিইসি কোনোভাবে একজন যোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তি নন। তাহলে বুঝতে পারছেন, আওয়ামী লীগের মতলবটা মোটেও ভালো নয়’।
‘আমরা বিশ্বাস করি, যদি ফেয়ার নির্বাচন হয়, ভবিষ্যতে জনগণ আবারো আমাদের ক্ষমতায় বসাবে’।
ঢাকা বারের মতো আসছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও দলসমর্থিত প্যানেলকে বিজয়ী করতে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক নীল প্যানেলে খোরশেদ আলম সভাপতি ও আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিজয়ী হয়েছে। মোট ২৭ পদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষসহ ৬টি পদে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থক আইনজীবীদের সাদা প্যানেল।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের বিজয় উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার হাতে পুস্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দন জানান।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের অনেক বেতন-টেতন পায়, টাকা-পয়সা আয় করার অনেক সোর্স আছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গ্যাসের দাম কম ছিল সেজন্য বাড়ানো হয়েছে। দেখেন, এদের আমলেই বোধহয় ৫ দফা গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ‘আবার বলছে, বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। তাহলে মানুষ তো গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল দিতে দিতে শেষ হয়ে যাবে। গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, অথচ গ্যাসের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। গ্যাসের চাপ এতো কম, কোনো কোনো দিন রান্না করাই মুশকিল হয়ে যায়’।
জনসম্পৃক্ত এসব বিষয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান খালেদা জিয়া।
‘মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। আমাদের কর্মসূচি দিতে হবে’।
বিএনপির আমলে গৃহস্থালি একচুলা ও দুই চুলার মূল্যের সাথে বর্তমান সময়ে বৃদ্ধির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এদেশের পরিস্থিতি যা করছে, দেশকে আর দেশ রাখেনি। জনগণের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এখন তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে- এই স্বপ্ন দেখছে। দেশের মানুষকে তারা মানুষই মনে করে না। তারা মনে করে তারা রাজা, আর সাধারণ মানুষজন সব প্রজা, এদের কোনো দাম নেই, মানসম্মান বলতে কিছু নেই’।
‘সরকার দেশকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে। দেশের অবস্থা খুব খারাপ, মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে’।
উন্নয়নের নামে বৃহৎ বৃহৎ প্রকল্প করে উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি, দুর্নীতি-লুটপাট, জমিদখল, টেন্ডারবাজী প্রভৃতি কর্মকা-ের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা দেশেকে অস্বস্তিকর পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
পুলিশকে দলীয়ভাবে ব্যবহারের অভিযোগও করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
‘পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়, কীভাবে কী করবে তারা। আপনারা দেখেছেন, গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ কীভাবে আগুন ধরিয়ে গরীব মানুষের বাড়ি-ঘর পুড়িয়েছে। তাহলে বুঝা যায়, এই গাড়ি-ঘোড়ায় কারা আগুন দেয়? আমরা যখন আন্দোলন করেছি, তখনও কিন্তু পুলিশ দিয়ে তারা আগুন দিয়ে কিংবা বোমা মেরে দোষ আমাদের নামে চাপিয়েছে, আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। কিন্তু ওইসব কাজ করেছে পুলিশ’।
‘গাইবান্ধায় মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকা-ের সাথে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য কাদের খানের সম্পৃক্ততার প্রমাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের শরিকরাই এসব করছে। তাদের শরিকদের মধ্যে এমনো আছে, যাদের ইতিহাস আছে, অতীতে অনেক মানুষ খুন করার, হত্যা করার। জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না, তারা কখনো নিজের এলাকা থেকে নির্বাচিত হতে পারে নাই। এবার আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে জোর-জুলুম করে পুলিশের সাহায্য নিয়ে নির্বাচনে জিতেছে’।
‘আগামী দিনেও তারা (সরকার) এভাবে জিততে চায়। তারা মুখে বলছে, মানুষকে দেখানোর জন্য, আগামীতে বিএনপি আসলে নির্বাচন টাফ হবে। এটা বলার জন্য বলছে। কিন্তু আগামী দিনের নির্বাচনে পরিকল্পনা কী তা তারা করে রেখেছে’।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। সব দলের অংশগ্রহণের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়’।
‘আওয়ামী লীগ চোরাপথে ক্ষমতায় যেতে চাই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আইনের শাসনে বিশ্বাস করি, জনগণের কল্যাণে বিশ্বাস করি, ন্যায় বিচারে বিশ্বাস করি, আমরা চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন।”
দলের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনগুলো নতুনভাবে সংগঠিত করার কথাও বলেন খালেদা জিয়া।
অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত কর্মকর্তা রুহুল আমিন, কাজী আবদুল বারিক, সারওয়ার কায়সার, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুল কালাম আযাদ, আফানুর রহমান রহমানসহ মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ মিয়া আলম, মোসলেহউদ্দিন, ইকবাল হোসেনসহ শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ