পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ থেকে : গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আ’লীগ দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় খুনি শনাক্তসহ গ্রেফতার করে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে পুলিশ। সক্ষম হয়েছেন খুনের কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে।
গত বছরের শেষ দিন থার্টি ফাস্ট নাইটের প্রথম প্রহরে (সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা) নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন এমপি লিটন। দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান তিনি। মৃত্যু সংবাদ মহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয় এ খুনের ঘটনা। খুনিরা এমপিকে গুলি করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই ঘটনায় লিটনের ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করে। তবে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হলেও মামলার বর্ণনায় জামায়াত-শিবিরের প্রতি অভিযোগের তীর ছোড়া হয়। নৃশংস এ হত্যাকা-ের পর পুলিশ প্রশাসন নড়ে-চড়ে বসে। আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে প্রশাসনের তোলপাড় শুরু হয়। সভা-সমাবেশে এমপি লিটন হত্যাকা-ে জামায়াত শিবিরের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়। প্রকৃত খুনি ধরতে চলে পুলিশের বিরামহীন অভিযান। চলে ধর-পাকড়। এমপি লিটনকে খুনের মাধ্যমে জামায়াত-শিবির পথের কাঁটা সরিয়েছে বলে ধারণা নিয়েই প্রথমে কাজ করে তদন্তকারী দল। কারণ নিহত লিটন সব সময়েই জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাই জামায়াত-শিবির লিটনের প্রতি ছিল ক্ষুব্ধ। এ হত্যাকা-ের শুরু থেকেই সরকার ও দলের পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হয়। সেই সাথে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সংশ্লিষ্টতাও খতিয়ে দেখে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিরামহীন কাজ করে খুনি পাকড়াও করতে। গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে খুনির তথ্য না পাওয়ায় আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করে তদন্তকারী দল। এমপির পরিবার হতাশায় ভোগেন খুনি ধরা না পড়ায়। শুধু জামায়াত শিবিরকে নিয়েই তদন্ত না করে অন্যান্য দিক বিবেচনা করে তদন্তের আহ্বান জানানো হয় বাদীর পক্ষ থেকে। পুলিশ মরিয়া হয়ে ওঠে খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে। দলীয় কোন্দল ছাড়াও নিহতের পরিবার ও স্বজনদেরও সন্দেহের মধ্যে রাখে পুলিশ। দফায় দফায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয় তদন্তকাজে। একপর্যায়ে খোঁজা হয় এমপির গোপন শত্রুকে। জামায়াত-শিবির ছাড়াও দলীয় কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় কোন শক্তি এ কিলিং মিশন হাতে নিতে পারে কি-না তাও খতিয়ে দেখে পুলিশ। পুলিশের কর্মকা- সর্বমহল ও সরকারের কাছে সমালোচিত হয়। সুন্দরগঞ্জবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন খুনি ধরা না পড়ায়। এমপি লিটনের প্রকাশ্য শত্রু ছাড়াও গোপন শত্রুর সন্ধান চালায় পুলিশ। পরবর্তী এমপি হওয়ার খায়েস কার তাও দেখা হয় খতিয়ে। খুনের তথ্য উদ্ঘাটন না হওয়ায় পুলিশের কর্মকা- প্রশ্নবিদ্ধ হয়। লিটনের খুনি ধরা না পড়ায় পুলিশের মাঠ পর্যায় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভোগেন স্নায়ু চাপে। কিন্তু পুলিশ হাল ছাড়েননি। পুলিশের দাবি ছিল তথ্য-উপাত্ত অনেক পাওয়া গেছে যেকোন সময় খুনি ধরা পড়বে। খুনি ধরার আশাকে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে চলে পুলিশ। এমপি লিটনকে খুন করে খুনিরা পালিয়ে যায়। লিটন খুনের গডফাদার সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও জাপার সাবেক এমপি ডা. আ. কাদের খানের ইন্ধনে খুন হওয়ার বিষয়ে কারও নজরই ছিল না। কাদের খানের খায়েস ছিল পরবর্তী এমপি হওয়ার। লিটনের সাথে কাদের খানের মতবিরোধ ছিল। এমপি লিটনের সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় উপজেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক চন্দন কুমারেরও। কাদের খান এই সুযোগে চন্দন কুমারকে কাছে টেনে নেন। মোট অঙ্কের টাকা দেন চন্দনকে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করতে। অবশেষে খুনের পরিকল্পনা করে কাদের খান। পরিকল্পনা মোতাবেক এমপি লিটনকে খুন করে কাদের খান। কিন্তু কাদের খানের আরেক পথের কাঁটা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে শেষ না করলে তার এমপি হওয়ার পথ পরিষ্কার নয়। তাই কাদের খান পথ সুগম করতে পরিকল্পনা করে শামীম পাটোয়ারীকে খুন করার। কিলারদের সাথে মোবাইল ফোনে খুনের পরিকল্পনা পুলিশের আড়ি পাতায় ধরা পড়ে। পুলিশ দেখে আশার আলো। সব দিক বিশ্লেষণ ও নিশ্চিত হয়ে কাদের খানকে রাখে নজরবন্দি করে। এরই ফাঁকে কিলারদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। কিলারদের জিজ্ঞাসাবাদে এমপি লিটনকে খুনের স্বীকারোক্তি ছাড়াও কাদের খানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। অবশেষে কাদের খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় তাকে। রিমান্ডের মেয়াদ শেষ না হতেই গত শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় খুনের স্বীকারোক্তি দেন কাদের খান। এই স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে পুলিশ তার সফলতা রক্ষা করতে পেয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামির মামলায় এভাবে খুনি বের করতে পুলিশকে অনেক খড়-কুটো পোড়াতে হয়েছে। এদেশের পুলিশের ভাবমর্যাদা, সুনাম ধরে রেখেছে পুলিশ এমপি লিটনের খুনি শনাক্ত করে। এসাফল্য পুলিশের। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হায়দার মোঃ আশরাফুজ্জামান জানান, খুনি শনাক্তে আমরা সফল হয়েছি।
খুনের স্বীকারোক্তি কাদের খানের
এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকা-ে গ্রেফতারকৃত কাদের খান পুলিশের কাছে খুনের ঘটনা সম্পর্কে তার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, বাস্তবায়ন সম্পর্কে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে কাদের খান খুনের দায় স্বীকার করেছেন। এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি কাদের খানকে গ্রেফতার করে ১০ দিনে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডের মেয়াদ শেষ না হতেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কাদের খান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু হায়দার মোঃ আশরাফুজ্জামান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়
এমপি লিটনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা কাদের খানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ গাইবান্ধার রাজনৈতিক মহলসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে হত্যাকা- যেন তারই প্রতিফলন। খুনের এই রাজনীতি প্রতিহত করার বিপক্ষে সোচ্চার মতামত দিয়েছেন সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। সরেজমিনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মতামত থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তারা অবিলম্বে কাদের খানের ফাঁসি এবং তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান।
হত্যার দায় থেকে বাঁচতে ভারতে অবস্থান
এমপি লিটন হত্যাকা-ে জড়িত ননÑ এমন অকাট্য প্রমাণ রাখতে ভিসা-পাসপোর্টে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত বছর ১৯ অক্টোবর ভারতে যান এবং চলতি বছর ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতে অবস্থান করেন। কাদের খান ভিসা-পাসপোর্টে ভারতে অবস্থান করলেও এমপি লিটন হত্যা মিশন সফল করতে চোরাই পথে তিনি দুই থেকে তিনবার ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন। ভারতের আসাম রাজ্যের একটি স্থলবন্দর দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশে আসেন তিনি। এর আগেও তিনি কয়েক দফা চোরাইপথে ভারতে আসা যাওয়া করেন। এই হত্যা মিশনে কাদের খান যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজের সাথেও বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। কাদের খান সর্বশেষ চোরাই পথে বাংলাদেশে এসে ৩১ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে এমপি লিটন হত্যা মিশন সফল হওয়ার খবর নিশ্চিত হয়ে কাদের খান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যায়। এমপি লিটন হত্যার পর আবার পাসপোর্ট-ভিসায় চলতি বছর ৬ জানুয়ারি ভারত থেকে কাদের খান দেশে ফেরেন। পুলিশ ও ঘাতকদের স্বীকারোক্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।