পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : দৃশ্যমান উন্নয়নে সরকারের অধিক মনোযোগে বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে বেসরকারি খাতে। নিজস্ব অর্থায়নে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ করতে গিয়ে বাড়তি রাজস্বের দরকার হচ্ছে সরকারের। দীর্ঘদিন ধরে স্তিমিত থাকা বেসরকারি খাত এই অর্থ সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্লেষকরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার উন্নয়নের রাজনীতি করতে গিয়ে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছেন যা হুমকিতে ফেলেছে বেসরকারি খাতকে- বিশেষ করে দেশে-বিদেশে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা রপ্তানি বাণিজ্যকে। এই অবস্থা থমকে থাকা বিনিয়োগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে- এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতানুযায়ী, সরকার সপক্ষে কোনো যুক্তি উত্থাপন করতে না পারলেও ছয় মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিল। এমন সময়ে এই ঘোষণা আসলো, যখন দেশে বিদেশি বিনিয়োগে তেমন গতি নেই; গতবারের সমান বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে। নানা সংস্থার হয়রানির ভয়ে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন না বা পাচ্ছেন না- যে কারণে ব্যাংকে পড়ে আছে বিতরণযোগ্য ৮১ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পেছনে রপ্তানি বাণিজ্য। জটিল পরিস্থিতিতে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসেবে ভারসাম্য; বহিঃবাণিজ্যের ব্যাপক ঘাটতিতে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে ঋণ করতে হচ্ছে সরকারকে। গ্যাস ও বিদ্যুতের বাড়তি দামে রপ্তানি আয় আরও কমে গিয়ে এই পরিস্থিতিকে বেশি জটিল করে তুলবে বলে ভয় বিশ্লেষকদের।
“গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ানো হলে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে”- ঘোষণা আসার আগে এমন বার্তা সরকারকে দিয়েছিল সবগুলো ব্যবসায়ী সংগঠন। কিন্তু এরপরও ‘দৃশ্যমান উন্নয়নের স্বার্থে নিরুপায়’ সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিল। এখানে দেশের বেসরকারি খাতের চেয়ে ‘উন্নয়নের রাজনীতিকে’ বড় করে দেখা হয়েছে বলে অনুযোগ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা; আর এই সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে কড়া সমালোচনা করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
গ্যাসের কারণে নতুন ও পুরনো দুই ধরনের বিনিয়োগই অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে বলে ইনকিলাবকে জানান রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী।
তিনি বলেন, “অনেক উদ্যোক্তা মেশিনারিজ আনলেও গ্যাসের অভাবে শিল্প চালু করতে পারছেন না। আর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে পুরনো শিল্প ধীরে ধীরে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছে। ব্রেক্সিট, ট্রাম্প প্রশাসন, প্রতিযোগী মুদ্রার অবমূল্যায়ন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা সংস্কারে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে সক্ষমতায় পিছিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান।”
এসব দিক বিবেচনায় রফতানিমুখী শিল্পের স্বার্থে সরকারকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান এই সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ। তিনি বলেন, “জনগণকে জিম্মি করে বৃহৎ সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাড়াতে গ্যাসের কৃত্রিম সংকট তৈরির পাশাপাশি গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে।” তিনি বলেন, “জনগণের পকেট কেটে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ যোগান দেয়া সরকারের বিশেষ মনোযোগের বিষয়। একই কারণে এতদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকা সত্তে¡ও দাম কমায়নি। একটি বড় সুযোগ থেকে দেশের অর্থনীতি ও মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। যুক্তি আর জনস্বার্থ বিবেচনার সময় বা আগ্রহ কোনোটাই সরকারের নেই। সরকারের বিশ্বাস- জনস্বার্থবিরোধী যা খুশি তাই তারা করতে পারে।”
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর জন্য গত মাসের শুরুতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। চিঠিতে লেখা হয়, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে দেশের শিল্প খাতের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।’
“যেখানে দেশের জ্বালানির ৭৪ শতাংশ পূরণ হয় প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে, সেখানে এক বছরের মধ্যে দু’বার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে শিল্প ও বিনিয়োগ খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
চিঠিতে বলা হয়, ‘শিল্প খাতে ব্যবহৃত মোট গ্যাসের বেশিরভাগ ব্যয় হয় টেক্সটাইল মিল এবং তৈরি পোশাক শিল্পে। টেক্সটাইল মিলগুলোতে স্পিনিং, উইভিং, ডাইং এবং ফিনিশিং ইউনিট গ্যাসে পরিচালিত হয়। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে পণ্য উৎপাদনে যে খরচ বাড়বে সেই বর্ধিত টাকা বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না। ফলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিই একমাত্র সমাধান নয়। অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ, সিস্টেম লস এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি রোধ করা হলে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট উপাদান- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও ভূমির ব্যবহার, মূল্য নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি নীতিমালার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সমন্বয় প্রয়োজন। সমন্বয়হীনভাবে বছর বছর গ্যাসের দাম বাড়ালে মানুষের জীবনযাত্রাসহ সামগ্রিক শিল্প-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
গ্যাসে সরকারের লোকসান না হওয়ায় দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ-উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতার মাঝে আবার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি জটিল করবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ।
‘দেশে বিনিয়োগ কম’ উল্লেখ করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় দেশে বিনিয়োগ আরও কমবে বলে ইনকিলাবের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। বলেন, যারা নির্দিষ্ট ও নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের ওপর চাপ পড়বে বেশি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকায় নিযুক্ত প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেবে। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, ‘একজন গ্যাসনির্ভর শিল্পোদ্যোক্তা যদি না জানেন কীভাবে এবং কতদিন পর পর গ্যাসের দাম বাড়ানো -বে- তাহলে তিনি সঠিক পরিকল্পনা করতে পারবেন না।’
“এবার যেভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে তার পেছনে কী ধরনের যৌক্তিকতা কাজ করছে সেটা পরিষ্কার নয়”, বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
“গ্যাস খাতে নীতির সমন্বয় সঠিকভাবে হচ্ছে না” উল্লেখ করে তিনি পরামর্শ দেন, গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চালন লাইন ও নতুন কূপ খননের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে গুরুত্ব বিবেচনা করে গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে নীতি গ্রহণ করা উচিত।
ড. জাহিদ বলেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বিতরণ কোম্পানির মুনাফা বাড়বে ঠিক, কিন্তু বিনিয়োগ আরও কমে যাওয়ায় ব্যাংকে অলস টাকা আরও বাড়বে যা অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
“গ্যাস নির্ভরশীলতা কমাতে গিয়ে উৎপাদন যেন পিছিয়ে না যায়।” মূল্য সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে ‘আম ছালা’ সবই হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, যেহেতু সরকার মজুদ গ্যাসের ওপর চাপ কমাতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই রপ্তানি খাতের জন্য সরকারকে অবশ্যই প্রণোদনা দেয়া উচিত। তা না হলে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়বে।
গত দুই বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিম্নগতি রয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ইনকিলাবকে বলেন, এ সিদ্ধান্তের কারণে পোশাকশিল্পের সব শাখাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় যে মূল্যে পোশাক উৎপাদিত হবে তা বিক্রির বাজার খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন মনে করেন, সস্তা শ্রম ও গ্যাস ছাড়া বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ নেই।
“শিল্পের কাঁচামাল ও মেশিনারিজসহ সবই আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশ ভারতের তুলা থেকে শুরু করে মেশ-নারিজ- সবই আছে। এ দুই সম্পদ কাজে লাগিয়ে রফতানিতে ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আসছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে ক্রমেই প্রতিযোগী সক্ষমতা হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।”
বলেন, এভাবে চললে রফতানির বাজার হারাতে হবে। কারণ বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় ক্রেতারা পণ্যের দাম কমাতে চাপ দিচ্ছেন।
“একদিকে পণ্যের দাম কমছে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এ অবস্থায় টিকে থাকতে হলে ব্যবসায়ীদের লোকসান দিয়ে ব্যবসা করতে হবে, নয়তো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।”
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের দাম দুই ধাপে ২২ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী, শিল্পের জন্য প্রতি ঘন মিটার গ্যাসের দাম ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে মার্চে ৭ টাকা ২৪ পয়সা, আর জুনে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা করা হয়েছে। বাণিজ্যিকে প্রতি ঘন মিটার গ্যাসের জন্য ১১ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বেড়ে মার্চে হবে ১৪ টাকা ২০ পয়সা এবং জুনে ১৭ টাকা ০৪ পয়সা। সিএনজির দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে প্রতি ঘন মিটারে ৩৮ টাকা ও জুনে ৪০ টাকা দাঁড়াবে। এ ছাড়া ১ মার্চ থেকে আবাসিক খাতে দুই চুলার জন্য ৮শ’ এবং এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা গুনতে হবে গ্রাহকদের। দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে দাম আরও বাড়বে। এ সময় থেকে দুই চুলার জন্য ৯৫০ এবং এক চুলার জন্য ৯০০ টাকা দিতে হবে গ্রাহকদের।
এই ঘোষণা আসার একদিন পরেই শুক্রবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ঘোষণা দেন বিদ্যুতেরও দাম বাড়ানোর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।