Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সাজা হলেও খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে পারবেন -ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ

| প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘ওটা সাজানো মিথ্যা মামলা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা মেলেনি। তারপরও সাজা হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। শুধু প্রার্থীই নয়; নির্বাচন সময়ে দলের ও জোটে নেতৃত্বও দিতে পারবেন’ এ অভিমত ব্যক্ত করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইন অনুযায়ীই বেগম জিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘পিলখানার ট্রাজেডি : সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে ২০ দলের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে একটা ধারণা পরিষ্কার করে বলে দেই। বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হলে উনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন নাÑ এটা সঠিক কথা নয়। এ ধরনের প্রচারণা অমূলক। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনোবল দুর্বল করতে সুকৌশলে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আমি পরিষ্কার করে বলছি, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার যদি সাজাও হয় তাহলে তার জনপ্রিয়তা আরও অনেক বেড়ে যাবে। যা ভোটে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যারা বাংলাদেশের রাজনীতি বোঝেন, রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা কেউ আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন না। তিনি বলেন, ধরে নিলাম, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে গেলো, ভালো কথা। সাজা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী আমরা আপিল ফাইল করবো। আপিল হলো যে বিচার হয়েছে এর ধারাবাহিকতা। তখন আমরা উচ্চ আদালত থেকে তার জন্য জামিন নেবো। বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হলেও নির্বাচনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ তথা প্রার্থী হতে পারবেন। শুধু প্রতিদ্ব›িদ্বতাই নয়, বরং তিনি দল এবং জোটের নেতৃত্ব দিতে পারবেন। উনি যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যান তাহলে তিনি আগামী ৩ বছর বা ৭ বছর জেলখানায় থাকবেন, এটা হয় না। বাস্তবতা এটা নয়। দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আপিল ফাইল করার পরপরই আমরা জামিনের জন্য দরখাস্ত করবো। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী সাধারণত ৩ বছর সাজা হলে এমনিতেই জামিন হয়। আর ৭ বছর সাজা হলে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে জামিন নিশ্চিত হবে। খালেদা জিয়া জেলখানা থেকে আবার মুক্ত হয়ে ফিরে আসবেন। এটাই হলো বাস্তবতা। কিন্তু এটা নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা কথাবার্তা হচ্ছে; যা অমূলক।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন কি করবেন, না করবেন এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে বলেন, ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন তিনি চান না। আগামীতে প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক নির্বাচন হবে। সেটা হবে, যদি তিনি তা সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করেন। যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হয় তাহলে আমাদের দলীয় সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা যেগুলো ২০০৭-৮ সালে করা হয়েছিল সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। তাহলে বলবো দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের অন্যতম এই নেতা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই। আমরা আলাপ-আলোচনা, সংলাপ করতে চাই। সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান এই রাজনৈতিক সংকট ও গণতন্ত্রের সংকটের নিরসন চাই। কিন্তু সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর বিকল্প থাকবে না। দেশের মানুষই তখন রাস্তায় নামবে, আন্দোলন করবে। আন্দোলনের মাধ্যমে সেই দাবি আদায় করতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই, থাকবে না। আগামী একাদশ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো এক দলীয় পাতানো নির্বাচন বাংলাদেশের মাটিতে আর হবে না। সুতরাং সেটা যদি কেউ চিন্তা করে থাকে বা সেই ধরনের কোনো পরিকল্পনায় থাকেন তারা বাস্তব অবস্থা থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন আছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি চলবে, আন্দোলনও চলবে। আন্দোলন হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। যাতে করে সকল শ্রেণির মানুষ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। সেই ভোটের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা; এবং কোন দল কোন রাজনৈতিক জোট আগামীতে দেশ শাসন করবে। খালেদা জিয়া একদিকে যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, অন্যদিকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোট দেয়ার যে পরিবেশের কথা বলছি তার জন্য কাজ করছেন।
পিলখালা ট্যাজেডি সম্পর্কে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই হত্যাকান্ড বিশাদময়, বিচার কিছু হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যারা এ হত্যাকান্ডের পেছনে ছিল, তাদের কিন্তু বিচার এখনও হয়নি। এটা একটা বিরাট রহস্য। যে ৫৭ জন অফিসার প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সবাই ছিলেন দেশপ্রেমী ও ব্রাইট (উজ্জ্বল সম্ভাবনা) অফিসার। তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের সময় সরকার যে অবহেলা দেখিয়েছে এই হত্যাকান্ড নিবারণের ব্যাপারে সেটা আমরা সবাই জানি। এখনও এই প্রশ্ন থেকেই গেছে। এ হত্যাকান্ডের বিচার হতেই হবে। কারা এর পেছনে জড়িত ছিল। কি উদ্দেশ্যে ও ষড়যন্ত্র ছিল তা উদঘাটন করতেই হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ