Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঁচ শতাধিক এজেন্সির হজযাত্রী কোটার বাইরে

| প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনে চরম অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে হাব ও এক শ্রেণির হজ এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন এই অনিয়মের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। এই অনিয়মের কারণে হজ কার্যক্রমে অংশ নেয়া ৫ শতাধিক এজেন্সির হজযাত্রীই সম্পূর্ণ কোটার বাইরে পড়ে গেছে। তবে যারা কোটার বাইরে পড়ে গেছেন অস্বচ্ছ প্রতিযোগিতা ও অনিয়মের কারণেই একতরফাভাবে পিছিয়ে পড়েছেন। এজন্য এই প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করে নতুন করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রাক নিবন্ধনের দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিগুলো। ইতোমধ্যেই হাবের পক্ষ থেকে অনিয়মের বিষয়টি ধর্মমন্ত্রীকে মৌখিক ও লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। মন্ত্রী অনিয়মের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়ে বিষয়টির সুরাহার আশ্বাস দিলেও চারদিনেও কোন সিদ্ধান্ত দেননি। এনিয়ে হজ এজেন্সিগুলো উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কিছু এজেন্সি আইনের আশ্রয় নেয়ার চিন্তা করছেন বলেও জানা গেছে।
গত ১৯ ফেব্রæয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত প্রাক নিবন্ধন শুরুর প্রথম তিনদিনেই প্রাক নিবন্ধনের সিরিয়াল চলতি বছরের সউদী সরকার নির্ধারিত বেসরকরি হজযাত্রীদের নির্ধারিত কোটা ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৫২ জন ছাড়িয়ে যায়। আর এই সময়ের মধ্যেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, গোপনে নোটিশ জারি, রাতেও ব্যাংকে ভাউচার গ্রহণ, মফস্বল এলাকায় ব্যাংকের শাখায় রহস্যজনকভাবে বেশি হজযাত্রীর প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়া, ঢাকায় কয়েকটি ব্যাংকে সকাল ১১টায় টাকা জমার পর তা বিকাল ৪টায় পোস্টিং হয়ে প্রাক নিবন্ধনের সিরিয়াল পড়ার ঘটনা ঘটে।
এই অনিয়মের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হাব কার্যালয়ে হাবের জরুরি ইসি সভায় এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবির পাশাপাশি বিকল্প কয়েকটি প্রস্তাব দিয়ে হাব নেতারা ধর্মমন্ত্রীর বাসায় যান। ২৩ ফেব্রæয়ারি সকাল ১১টায় হাব সংবাদ সম্মেলন ডেকেও রাতে মন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তা স্থগিত করে। ধর্মমন্ত্রী অনিয়মের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সমস্যা সমাধানে হাবের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব চান। হাব নেতারা ২৩ ফেব্রæয়ারি রাতে মন্ত্রীকে লিখিত প্রস্তাব দেন। কিন্তু তারপর এ ব্যাপারে আর কোনো কিছুই জানানো হয়নি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, নিবন্ধন চালুর পর থেকে কোনো হজ এজেন্সী যদি নিয়মের বাহিরে কোনো রকম কার্যক্রম করে বা ডাটা এন্ট্রি /ভাউচার/ টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির বাহিরে অস্বাভাবিক এবং অনিয়ম করে, তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্মারকে বলা হয়েছিল, একটি এজেন্সি তাদের নির্ধারিত কোটা ১৫০ জনের কম হলে ব্যাংকের কোনো ভাউচার জমা দিতে পারবে না এবং কোনো ব্যাংক আংশিক হজযাত্রীর কোনো ভাউচার গ্রহণ করবে না।
অথচ ১৯ ফেব্রæয়ারি রাতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট থেকেই জানা যায়, ২৯৩টি এজেন্সি ১৮টি ব্যাংকের ৮৬ শাখার মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার হজযাত্রীর ভাউচার জমা দিয়ে প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন করে ফেলেছে। যাদের কেউই ১৫০ জনের কোটা পূর্ণ করেনি। এই জন্য তাদের বিরুদ্ধে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ওই দিন রাত ৯টায় কারণ দর্শানোর নোটিশও জারি করা হয়। একই নোটিশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রতিও জারি করা হয়। যা হজ নিউজ পোট্রালে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরক্ষণেই রাতে আবার দেখা যায়, আরেকটি স্মারকে তাদেরকে ক্ষমা দেয়া হয়েছে। তাদের জমা দেয়া ভাউচারগুলোও বাতিল করা হয়নি। অথচ অনিয়মকারিকে শাস্তি দেয়ার কথা ছিল। এতে সম্পূর্র্ণ অনিয়মের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠে। এতে যারা সরকারের আইন মেনে একত্রে ভাউচার জমা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিল তারা প্রাক নিবন্ধনে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে।
আবারও ১৮ ফেব্রæয়ারি এবং ২০ ফেব্রæয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পৃথক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় যে, কোনো আংশিক অর্থাৎ ১৫০ জনের কমের হজযাত্রীর ভাউচার জমা দেয়া যাবে না। অথচ ২০ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যায় এজেন্সিগুলোর ডাটা এন্ট্রির নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৭টা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবারও সার্ভার ওপেন করা হয়। আগের নোটিশে ব্যাংক টাকা নেয়ার জন্য বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলা হয়েও আকস্মিক গোপনীয় নোটিশ জারি করে বলা হয়, ব্যাংক ৭টা পর্যন্ত ভাউচার জমা নেবে। অনিয়মের আরো বড় প্রমাণ হচ্ছেÑ সেই নোটিশটি সার্ভারে প্রকাশ করা হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। অধিকাংশ এজেন্সি তখন সার্ভার বন্ধ করে চলে যায়। অথচ ওইদিন ওই সময়ের মধ্যেই অধিকাংশ এজেন্সির অগোচরে কিছু এজেন্সির প্রায় ৩০ হাজার হজযাত্রীর আংশিক ভাউচার ডাটা সার্ভারে গ্রহণ করা হয় এবং তাদের প্রাক নিবন্ধনের সিরিয়াল পড়ে যায়। এতে যারা নিয়ম মেনে ১৫০ জনের ডাটা এন্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল তারা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে।
২০ ফেব্রæয়ারি রাতে আবার নতুন সার্কুলার জারি করে জানানো হয়, ২২ ফেব্রæয়ারি থেকে ১৫০ জনের কম হলেও ব্যাংক ভাউচার জমা দেয়া যাবে। এই নোটিশটি রাতে ছাড়ার কারণে অনেকের দৃষ্টিতেও আসেনি। পরদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সরকারি বন্ধ ছিল। এছাড়া অনেক এজেন্সি আগে এটা জানতেন না বলে আগে কোনো ভাউচার প্রিন্ট করেনি। যারা ১৫০ জনের ডাটা এন্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। অথচ কিন্তু কিছু এজেন্সি ঠিকই আগেই ভাউচার প্রিন্ট করে রাখে তারা ওই সার্কুলার অনুযায়ী ২২ তারিখ সকালেই ব্যাংকে গিয়ে ভাউচার জমা দিয়ে প্রাক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে সিরিয়ালে এগিয়ে যায়। আকস্মিক স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এই ধরনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন অন্যায়ভাবে কাউকে সুবিধা দেয়ার জন্য করা হয়েছে বলে এজেন্সিগুলোর অভিযোগ। ঢাকার বাইরে কোনো শাখা থেকে দুই হাজারেরও বেশি হজযাত্রীর ভাউচার জমা পড়েছে। কুমিল্লার মুরাদনগর আল আরাফা ব্যাংকের শাখা থেকেই ২৫২৭ জনের প্রাক নিবন্ধনের রেকর্ড রয়েছে। এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় দ্রæত কোনো ব্যবস্থা না নিলে মন্ত্রণালয়ের নিয়ম ও আইন মানতে গিয়ে সিরিয়ালে পিছিয়ে পড়া এজেন্সিগুলো আইনের আশ্রয় নিবে বলে জানিয়েছে।
দু’টি সংবাদ সম্মেলন আজ
এদিকে, ২০১৭ সালে প্রাক-নিবন্ধিত সকল হজযাত্রীদের হজে প্রেরণের দাবিতে আজ বেলা দু’টায় সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র গোলটেবিল মিলনায়তনে বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ আব্দুল্লাহ আল-নাসের এবং সকাল ১১টায় একই স্থানে সাগর রুনী হলে হাব সমন্বয় পরিষদের আহŸায়ক ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র হাবিবুর রহমান মিজানের উদ্যোগে পৃথক দৃ’টি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজ করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • মো: ফজলে এলাহী ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:১০ এএম says : 0
    হজ্জ এর ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নিয়ে এ ধরণের অনিয়ম মেনে নেয়া যায়না। মাননীয় মন্ত্রী এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করে স্বচ্ছতার সাথে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করে পূণরায় প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করবেন বলে আমরা আশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • ফরহাদ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৬:৩৫ পিএম says : 0
    আমরা যারা কস্টকরে কোটা পেয়েছি তাদের কোন অনিয়ম করলে আমরাও মামলা করবো
    Total Reply(0) Reply
  • নাছির ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৭:৩১ পিএম says : 0
    ১৫০ কোটা কেন করা হল ? জদিনাই নিতে পােড়? ১১০/১২০ কোটা করা হঊক !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ