Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আগামী নির্বাচন খুব সহজ হবে না

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে দলীয় এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সংসদীয় দলের সভাকক্ষে বৈঠকে তিনি দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, আগামী নির্বাচন খুব সহজ হবে না। কারণ, নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করবে। নির্বাচনে একটি শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা মোকাবেলা করতে হতে পারে, সেজন্য সবাইকে প্রস্তুতি রাখতে হবে। শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা অতিক্রম করার জন্য দলকেও সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে। এলাকায় গিয়ে ভালো কাজের মাধ্যমে জনগণের মন জয় করতে হবে। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার কথা আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের নবমতলায় সরকারি দলের সভাকক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় বৈঠকটি শুরু হয়ে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, মন্ত্রী শাজাহান খান, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, ড. হাছান মাহমুদ, মুন্নুজান সুফিয়ান, মনিরুল ইসলাম, এ কে এম শামীম ওসমান, শামসুল হক চৌধুরী প্রমুখ। বৈঠকের শুরুতেই সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, আগে দলের সাধারণ সম্পাদকই সংসদীয় দলের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তার একার পক্ষে এত দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে। এ কারণেই নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে এবার সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ সময় দলীয় এমপিরা লিটনকে অভিনন্দনও জানান।
বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় এমপিদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ নির্বাচনী এলাকায় বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। কে কী করছেন, কার কী অবস্থা- তার সব রিপোর্টই আমার কাছে আছে। জনবিচ্ছিন্ন হলে কেউ পার পাবেন না। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক সংসদ সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোর তথ্য জোগাড় এবং বিশ্লেষণ করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে দলের সংসদ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
টাঙ্গাইলের এক আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নেত্রী আমাদের নির্বাচন কমিশনে যেতে বলেছেন। সব ভোটের তথ্য নির্বাচন কমিশন থেকে জোগাড় করতে বলেছেন। ওই সব নির্বাচনে কারা প্রার্থী ছিল, কে কত ভোট পেয়েছিল, সব তথ্য বিশ্লেষণ করে ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
রাজশাহী অঞ্চলের এক এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বলেছেন, এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন না বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
আরেক এমপি বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোন সংসদ সদস্য কী করছেন, সব তথ্যই রাখছেন বলে জানিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী। তিনি বলেছেন, এলাকায় কোন সংসদ সদস্য কী করেন সবকিছুর তথ্য তার কাছে আছে। এছাড়া এলাকায় গ্রুপিং বা কোন্দল না করারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
তার কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে বলেও সতর্ক করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি এমপিদের উদ্দেশে বলেন, শুধু উন্নয়ন দিয়ে হবে না। ক্ষমতায় যেতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। অতীতে জনগণের কাছ থেকে অনেক কিছু নিয়েছেন, এখন জনগণকে দিন।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, কানাডার আদালতের রায়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল, তা শেষ পর্যন্ত কানাডার আদালতেই প্রমাণ হয়েছে। তারা অতীতে যে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়েছে, সেটিও প্রমাণ হয়েছে। এরা মানুষ মারে, পুলিশ মারে, নাশকতা করে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই আগুনসন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞসহ সব অপকর্মের বিষয়ও জনগণের সামনে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক করতে হবে।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, দলীয় এমপিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সবাইকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে। কাজেই নির্বাচনে একটি শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা মোকাবেলা করতে হতে পারে। এ কারণে সবার মধ্যে সে ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে। শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা অতিক্রম করার জন্য দলকেও সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন-সফলতাগুলো জনগণের সামনে ভালভাবে তুলে ধরতে হবে।
নির্বাচনী এলাকায় থাকা দ্ব›দ্ব-বিভেদ দ্রæত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে সংসদ নেতা বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নৈতিক দায়িত্ব। তাই নিজ নিজ এলাকায় দলের মধ্যে যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করে দ্রæত নিরসন করতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এখনও যথেষ্ট সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সবধরনের কোন্দল ও বিভেদ মিটিয়ে ফেলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
পদ্মাসেতু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স¤প্রতি কানাডার আদালতের রায়েই প্রমাণ হয়েছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। দুর্নীতি হওয়ার কোনো সুযোগও ছিল না। আমরা বিশ্ব ও জাতির সামনে প্রমাণ করতে পেরেছি, সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতু আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগের কারণে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ হয়তো কিছুটা পিছিয়েছে। এতোদিন হয়তো সেতুটি নির্মাণ হয়ে তার ওপর দিয়ে গাড়ি যেত। তবে বিলম্ব হলেও এ ঘটনায় জাতির মাথা বিশ্বের সামনে আরও উঁচু হয়েছে। বাঙালি জাতির মর্যাদা আরও সমুন্নত হয়েছে।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় এমপিদের বেশকিছু নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। সব এমপির উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় কী কী উন্নয়ন করেছেন, উন্নয়নমূলক কাজের কী কী বাকি রয়েছে, আর কী করলে জনগণের মন জয় করা যাবে- তা একটি রিপোর্ট আকারে তৈরি করে সংসদীয় দলের সম্পাদকের কাছে জমা দেবেন। আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা, নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়গুলোও বুকলেট আকারে তৈরি করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তা পৌঁছে দিয়ে এদের ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করবেন।



 

Show all comments
  • নাজমুল ইসলাম ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ২:৪৫ এএম says : 0
    আমাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৭:১৩ এএম says : 0
    "শুধু উন্নয়ন দিয়ে হবে না"। যথার্থই বলছেন মাননীয় প্রধান মন্রী। এই উন্নয়নের শ্লোগান স্বৈরাচার আয়ুব ও এরশাদের ও ছিল। তারা ................... বিদায় নিল। কেননা উন্নয়ন হয় জনগনের টাকায়। কাহারও বাহাদুরি করার পথ নাই। ভুল করলে ভোট নাই, সুযোগ পেলে জনগণ তা ই করে। তাই সাবধান হউন। জনগণের মতামতকে সন্মান দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:১৭ পিএম says : 0
    সত্যই গণতন্র উপায়ে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি হওয়া খুব কঠিন কাজ। তাই একজন জনপ্রতিনিধি জনগণের সাথে কাধ মিলায়ে কাজ করে। জনগণের বিপক্ষে যায় না। অপরপক্ষে ৫ ই জানুয়ারীর ভোটারবিহীনভাবে যারা জনকাধে বসে আছে, তারা জনবিপক্ষে কাজ করছে। তারা জনগণকে চুষে খাচ্ছে। ............ এই সত্যটি অনুধাবন করুণ। সত্যকারের নির্বাচন দিয়ে পুনঃরায় ক্ষমতা গ্রহন করুন অথবা জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা ছাড়ুণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shamim Uzzaman ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৪৬ পিএম says : 0
    Free & fair election hole BNP 60% vote pabe. But free & fair election hobe kina sondeho.
    Total Reply(0) Reply
  • Romana ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    ই ভি এম আছে না?
    Total Reply(0) Reply
  • Khokon ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    Bare bare sujok asena
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ