পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদাদাতা : ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বাংলাদেশে তার ২০ ঘণ্টার ঝটিকা সফর শেষে গতকাল শুক্রবার সকালে নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বেইজিং থেকে দিল্লি ফেরার পথে ছিল তার এ ঢাকা সফর। ভারতীয় সরকারি তরফ কিংবা সংবাদমাধ্যম জয়শঙ্করের বেইজিং সফর নিয়ে সরব হলেও ঢাকা সফর নিয়ে যেন অনেকটা নীরব। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় ২০১৫তে ঢাকাকে দেয়া দিল্লীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করা এবং শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে ঢাকার শক্তিশালী অবস্থানের কথা স্বীকার করা হলেও এবিষয়ে দিল্লির কোনো মন্তব্য নেই।
ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দ্বিতীয়বারের মতো বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে জয়শঙ্কর এ দিন বেজিং থেকে ঢাকায় আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব নজরুল ইসলাম এর পরে সংক্ষিপ্ত ঘোষণা করেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী দিল্লী যাচ্ছেন।
তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এর আগে ডিসেম্বরে এই সফর হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সে বার দিনক্ষণ চূড়ান্ত না-হলেও সেই সফরের খুঁটিনাটি এবং সফরে হতে যাওয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলির খবরও প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঢাকা সেই সফর বাতিল করে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর তখন তড়িঘড়ি ঢাকায় এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। এই বৈঠকের পরেও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, ফেব্রæয়ারির শেষে শেখ হাসিনা দিল্লি যেতে পারেন। কিন্তু সে সফরও হয়নি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বার বার সফর বাতিল করছেন এ বিষয়টিকে ভারতের ক‚টনীতির দুর্বলতা বলে অনেকে ব্যাখ্যা করছেন। ২০১৫-য় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরে গিয়ে যেসব প্রতিশ্রæতি দিয়ে এসেছিলেন, স্থলসীমা চুক্তি ছাড়া কার্যত আর কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। তিস্তার পানিও গড়ায়নি। অথচ তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি ২০১৮-র শেষে হতে যাওয়া নির্বাচনে শেখ হাসিনার কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতেই আটকে আছে এই চুক্তি। ঢাকার অনুযোগ, এই আপত্তি দূর করতে সেভাবে তৎপর হচ্ছে না দিল্লি। যদিও ঢাকা এখন তিস্তার পানি ভাগের বিষয়টিকে আলাদা করা দেখাতে চাইছে না। স¤প্রতি শেখ হাসিনা বলেন, শুধু তিস্তা নয়, ভারত থেকে বয়ে আসা সব নদীর পানির ন্যায্যভাগ চায় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে দু’দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যে বোঝাপড়া চুক্তি হওয়ার কথা, তাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৫মিনিটে জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে জয়শঙ্কর দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এসময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে বিদায় জানান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ঢাকা পৌঁছান জয়শঙ্কর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য ভারত সফরসূচি এবং আলোচ্য বিষয়বস্তু নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব প্রাথমিক আলোচনা করেছেন বলে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জয়শঙ্কর। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী এপ্রিলের প্রথমার্ধে ভারত সফরের সম্মতি দেন। তারপর সন্ধ্যায় হোটেল লা মেরিডিয়ানে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন জয়শঙ্কর। বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার রাতে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, গঙ্গা ব্যারেজ বাস্তবায়নে উপায় খুঁজে বের করার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে আরও আলোচনার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে ভারত।
গঙ্গা ব্যারেজের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না। আমরা আলোচনা করেছি। শীঘ্রই ওয়ার্কিং গ্রæপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা আশা করি একটা ভালো সফল সফর হবে, শুরুটা খুব ভালো হয়েছে।
এই সফরে কতগুলো চুক্তি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বেশকিছু চুক্তি হবে। কতগুলো চুক্তি হবে সেটি এখন বলা যাচ্ছে না। তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চুক্তি হবে।
ভারত সফরে তিস্ত চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা প্রশ্নে তার সংক্ষিপ্ত উত্তর, আমরা আশাবাদী।
তিস্তা বিষয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ আলোচনা শেষ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনারা কী করেছেন সেটি উনারাই (ভারতীয় পক্ষ) আপনাদের বলবেন। বৈঠকে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার কথাও জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।
নতুন কোনো ক্ষেত্রে দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কানেকটিভিটির নতুন আইডিয়া নিয়ে আমরা কথা বলেছি।
দিল্লি সফরে কোন কোন এজেন্ডা নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে এম. শহীদুল হক বলেন, আমাদের আট-দশটি ক্লাস্টার আছে। সেগুলো হচ্ছে জ্বালানি সহযোগিতা, কানেকটিভিটি, বাণিজ্য, সীমান্ত বিষয়, কনস্যুলার বিষয়, রেলওয়ে, শিপিং ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে সামনে রেখে সম্ভাব্য সামরিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য গত বছরের নভেম্বরে প্রথম ঢাকা আসেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকর। এরপর জানা যায়, গত বছরের ৩ ও ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি যাবেন। তারপর তা পরিবর্তন করে ১০ ও ১১ ডিসেম্বর ঠিক হয়। এরপর এ তারিখ ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর বলে শুনা যায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সে সফর হয়নি। এরপর ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর আসেন বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি কথা বলেন। সে সময় ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভারত সফর হতে পারে বলে জানা গিয়েছিল। তবে স্থগিত হওয়ার কথা বাংলাদেশ ও ভারত কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।