Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংস্কারপন্থীরা ঘরে ফিরছেন

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যতো ক্ষমা করতে জানেন দলের নেতারা ততো ভুল করতে জানে না’- দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির সাথে থাকা এক সিনিয়র নেতার এমন পর্যবেক্ষণ। সেই নেতার মন্তব্য আরো বাস্তবতা পেলো গত বৃহস্পতিবার রাতে। ঘরের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত বিএনপির সংস্কারপন্থীদের অতীতের সকল ভুল ক্ষমা করে দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় হবার নির্দেশ দিয়েছেন। তার এই নির্দেশনার ফলে দলীয় কর্মকান্ডে বাইরে থাকা দুই ডজন সাবেক এমপি-মন্ত্রী সক্রিয় হবার সুযোগ পেলো। এখন ওরা ঘরে ফিরছে।
স্রোতের বিপরীতে যাওয়াদের অন্যতম দুই নেতা সর্দার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জহির উদ্দিন স্বপন গত বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার সাথে গুলশানের কার্যালয়ে সাক্ষাত করেছেন। তারা অতীত ভুলের অনুশোচনা করেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন। মূল ধারায় ফিরে আবারো আস্থায় ফিরে কাজ করার আবেদন জানিয়েছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘরে ফেরার অনুমতি দিয়েছেন দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ম্যাডাম অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কথা শুনেছেন; বলেছেন। তিনি অতীতের কথা বারবার সামনে না এনে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনে স্রোতের বিপরীত ‘সংস্কারপন্থী’ বনে যাওয়ার পথপ্রদর্শক ছিলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুুল মান্নান ভূঁইয়া। তার সহযোগী ছিলেন দলের সাবেক যুগ্মমহাসচিব ও হুইপ আশরাফ হোসেন। এ যাত্রায় যাত্রী ছিলেন দলের শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ কমবেশি প্রভাবশালী অর্ধশতাধিক নেতা। তারা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে বিকল্প বিএনপি গঠন করে। তাতে সায় ছিলো তৎকালীন সেনাসমর্থিত জরুরি সরকারের। নানা নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়ায় বহিষ্কৃৃত হন মান্নান ভূঁইয়া ও আশরাফ হোসেন। নতুন দল গঠনের স্বপ্নও পূরণ হয়নি।
তাদের ২/৩জন অন্যদলে চলে গেছেন। ইন্তেকাল করেছেন ৭/৮জন। মূল স্রোতের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারলেও যে যার অবস্থান থেকে দলের জন্যই কাজ করেছেন। কেউ টক-শোতে। কেউ লেখনীতে। আবার কেউ ভূমিকা রেখেছেন অর্থকড়ি দিয়ে। দীর্ঘ ৯ বছর। এরই মধ্যে দুইবার সংসদ নির্বাচন হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন পাননি। তারপরও দলের বাইরে অবস্থান নেননি। কিংবা আগের অবস্থানে যাননি। বিশেষ পরিস্থিতিতে যে তারা ভুল করেছেন- এমন অনুশোচনা বিরাজ করছিলো তাদের মধ্যে। এজন্য বার বার দলীয় প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে অনুশোচনার কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু গত ৯ বছরে সে সুযোগ পাননি।
দলের পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সংগ্রাম করছি। এ সংগ্রামে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে আমাদের দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। অনেক মত-পথের সংগঠন ও লোক এই ছাতাতলে আসবেন-এটা আমরা আশা করি।
বিএনপিরই কিছু নেতাকর্মী যারা সংস্কারপন্থী হয়েছিলেন তারা ঘরে ফিরতে চায়। সংস্কারপন্থীরা চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করছেন তারা তাদের অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছেন, অনুশোচনা করছেন। ভবিষ্যতে ভুল হবে না বলেও প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। যাদের কথায় আকৃষ্ট হচ্ছেন তাদেরকে দলে সক্রিয় হওয়া এবং রাজনীতি করার সুযোগ দিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া।
চলতি পুনর্গঠনে তাদের ঠাঁই হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান বলেন, অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। তাদের শুন্যস্থানে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। তবে পদের অপেক্ষা করতে হবে। কাজের মধ্য দিয়ে তাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান বিএনপির এই ভাইস-চেয়ারম্যান।
ওদের ১৩৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ঘরে ফিরেছেন পদ পেয়েছেন। এখন বাকি আছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান ও কবি মোফাজ্জল করিম, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মো: আবুল হোসাইন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাবেক হুইপ ও পিরোজপুর জেলার সভাপতি শহিদুল হক জামাল, রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, সাবেক এমপি ও দলের সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, চাঁদপুর জেলার সাবেক সভাপতি এসএ সুলতান টিটু, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, সাবেক এমপি ও দলের বরগুনা জেলার সভাপতি নূরুল ইসলাম মনি, গাইবান্ধার সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিঙ্কন, বগুড়ার সাবেক দুই এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বরগুনা জেলা সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমেপি ইলেন ভুট্টো প্রমুখ।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের ২/১ দিনের মধ্যে বগুড়ার ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও যশোরের মফিকুল হাসান তৃপ্তি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করবেন।



 

Show all comments
  • রিপণ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৩:১০ এএম says : 0
    তবে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জাকির হোসাইন ফিরোজ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:২৬ পিএম says : 0
    ভাল
    Total Reply(0) Reply
  • MD Elias ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:২৯ পিএম says : 0
    গুড নিউজ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shake Sale Ahmed ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৩০ পিএম says : 0
    Nata gala nata pawa jy.but dol dhogso holi sheta abar gorti onek khor kati porati hoy.nijar shartho k boro na kora.dol k vabun dol k shokti shali korun
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ