পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে গ্রিক দেবী মূর্তি অবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশে হেফাজত মহানগর আমীর আল্লামা নূর হোসাইন কাশেমী বলেছেন, গ্রিক দেবী মূর্তি শিরকের প্রতিক, ন্যায়ের প্রতিক নয়। গ্রিক দেবী-মূর্তি অবশ্যই অপসারণ করতে হবে। মূর্তি অপসারণে আল্লামা আহমদ শফীর নির্দেশ অনুযায়ী কর্মসূচির পর কর্মসূচি দেয়া হবে। মূর্তি সরাতে বাধ্য করা হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত ও অন্যান্য ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মূর্তি ইসলামবিরোধী সংবিধান বিরোধী। মূর্তির বিষয়ে কোন মুসলমানের আপোস বা হেকমতের সুযোগ নেই। মূর্তি-সরাতে ইসলামী জনতা ঈমান রক্ষায় রক্ত ঢালতে জীবন দিতে প্রস্তুত আছে।
গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব বিক্ষোভ-সমাবেশে আল্লামা কাশেমী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেছেন। বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষে আল্লামা কাশেমীর নেতৃত্বের একটি বিরাট মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর চত্বর থেকে বের হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের শ্লোগান ছিল সুপ্রিম কোর্টে মূর্তি কেন শেখ হাসিনা জবাব দিন।
বিক্ষোভ-সমাবেশে মাওলানা আবুল কালাম বলেন, হেফাজতের চলমান আন্দোলন, মূর্তি অপসারণের আন্দোলন। সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে মূর্তি সরাতেই হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট থেকে মূর্তি অপসারণের ব্যবস্থা করুন। আপনাকে আবারো অবদান রাখার জন্য আমরা তৃতীবারের মত ধন্যবাদ মোবারকবাদ জানাতে চাই। তিনি বলেন, মূর্তি সরানোর বিষয়ে অবহেলা করে আর একটি শাপলা চত্বর দেখার চেষ্টা করবেন না। অনতিবিলম্বে মূর্তি সরাতে হবে। তিনি বলেন, ইসলামবিরোধী দেশ বিরোধী একটি মহল প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগকে এদেশের ইসলামী জনতার মুখোমুখি করার চক্রান্ত করছে।
ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমান ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশে মূর্তি থাকতে পারে না। মূর্তি সরাতেই হবে।
মাওলানা মাফফুজুল হক বলেন, মূর্তি স্থাপন ইসলামবিরোধী সংবিধান বিরোধী। স্বাভাবিক পন্থায় মূর্তি অপসারণের ব্যবস্থা না হলে ইসলামী জনতা ভিন্ন কায়দায় জবাব দিতে প্রস্তুত।
মাওঃ আবদুর রব ইউসুফী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মূর্তি স্থাপনের বিষয়ে সরকার কিছু জানে না, এ বিষয়ে বিচারকগণও একমত নন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীগণ কিছু জানেন। তা হলে মূর্তি স্থাপন হলো কার নির্দেশে। এর জবাব সরকারকেই দিতে হবে এবং মূর্তি অপসারণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
মাওঃ রকিবুল হাসান বলেন, মূর্তি অপসারণে প্রয়োজনে জীবন দেব। আবারো একটি শাপলা চত্বর হবে।
মাওঃ মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, মূর্তি অপসারণে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, মূর্তি স্থাপনের চক্রান্তকারীরাই সড়কের নামফলক থেকে হযরত হাফেজী হুজুরের নাম মুছে ফেলার চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, হাফেজী হুজুরের নাম মুছে ফেলা হলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মাওঃ আবদুল করীম বলেন, মূর্তি-স্থাপন রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ। মূর্তি অপসারণ করে মূর্তি স্থাপনে জড়িতদের রাষ্ট্রদ্রোহী আইনে বিচার করতে হবে।
মুফতী আবদুস ছাত্তার বলেন, রাসূল (সাঃ) মক্কা বিজয় করে মূর্তি অপসারণ করেছিলেন। আমরা মূর্তি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।
মাওঃ ফজলুল করীম কাশেমীর সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও উলামায়ে-কেরাম।
১০ মার্চ সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক হেফাজতের
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গ্রিক দেবির মূর্তি অপসারণ না করলে লাখো তৌহিদি জনতাকে সাথে নিয়ে ঢাকা ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা। সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তা অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে গতকাল বাদজুমা আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেট চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন তারা। বিক্ষোভ সমাবেশে আগামী ১০ মার্চ একই দাবিতে সারাদেশের জেলা সদর ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আদর্শিক চেতনার বিপরীত। কোন মুসলমান মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক বিশ্বাস করলে তার ঈমান থাকবে না। বাংলাদেশে মূর্তি স্থাপনের চাহিদা ও সুযোগ কোনটাই নেই। অবিলম্বে এই মূর্তি অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় ঈমান, আক্বীদা ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে মূর্তি অপসারণের দাবীতে প্রয়োজনে লাখ লাখ মানুষ নিয়ে ঢাকা ঘেরাও করা হবে।
বক্তারা বলেন, মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরী বানানো হচ্ছে কার স্বার্থে? দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাস্কর্যের নামে মূর্তি তৈরী করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যারা মূর্তির পক্ষে কথা বলছেন তারা জনবিচ্ছিন্ন, নাস্তিকদের দালাল। মূর্তি ও অপসংস্কৃতি চর্চা থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের মূর্তি সংস্কৃতি কেন? মূর্তি ও অপসংস্কৃৃতি দুটিই ইসলামবিরোধী। মূর্তি ও অপসংস্কৃতিকে বৈধ মনে করলে মুসলমানিত্ব থাকবে না। ইসলাম এসেছে মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে।
বক্তারা আরো বলেন, মহানবী (সা.) বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ আইন প্রণেতা হিসেবে স্বীকৃত। আমেরিকা সুপ্রিমকোর্টের সামনের ফটকে রাসূল (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ আইনপ্রণেতা হিসেবে ফলকে নাম আছে। ভারতের সুপ্রিমকোর্টেও আইন প্রণেতারূপে কোন মূর্তির অবস্থান নেই। কোন মুসলিম দেশেও এরূপ কোন নজির নেই। তাহলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টের সামনে কেন মূর্তি থাকবে। সুতরাং সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে মূর্তি অপসারণ করতেই হবে। অন্যথায় জান-মাল দিয়ে হলেও ঈমান রক্ষায় ইসলামী জনতা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবে, যা সরকারের জন্য শুভ হবে না।
কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা হাজী মুজাম্মেল হক, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা ক্বারী মুবিনুল হক, মাওলানা হাবিবুল্লাহ নদভী, মাওলানা হাফেজ জাকারিয়া, মাওলানা ক্বারী ফজলুল করিম জেহাদী, মাওলানা শেখ আবু তাহের, মাওলানা মনসুর, মাওলানা জুনাইদ জওহর, মাওলানা আ ন ম আহমদুল্লাহ, মাওলানা ইউনুস, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা শিব্বির আহমদ, মাওলানা তকি ওসমানী, মাওলানা ওসমান কাসেমী,মাওলানা নাজমুস সাকিব, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা ফয়জুর রহমান ফয়েজ, মাওলানা মাহামুদুল হাসান খাকি, মাওলানা ইমরান খলিল ইসলামাবাদী, মাওলানা বরকত উল্লাহ বাবু নগরী প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশ পরিচালনা করেন মাওলানা আ.ন.ম আহমদুল্লাহ ও মাওলানা ইউনুস। বাংলাদেশে কোনো নাস্তিকের ঠাঁই হবে না : আবদুল আউয়াল
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজত ইসলামের আমীর মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেছেন, অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণ করতে হবে। আর যদি অপসারণ করা না হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জের জণগণকে নিয়ে অপসারন করা হবে। গ্রীক দেবীর মুর্তি অপসারণের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। মূর্তি অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পরে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণের দাবিতে গণমিছিলে ডিআইটি রেল কলোনি জামে মসজিদের খতিব আবদুল আউয়াল এসব কথা বলেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউস রহমান, মুফতি হারুনুর রশিদ ও কামাল উদ্দিন দায়েমীসহ অন্যান নেতৃবৃন্দ।
আবদুল আউয়াল বলেন, সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, অতি দ্রুত গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণ করার জন্য। মূর্তি অপসারণে বিলম্ব করে দেশটাকে অশান্ত করবেন না। আমরা আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে এবং আমরা সরকারের জন্য দোয়া করতে পারব। বাংলাদেশে কোনো নাস্তিকের ঠাঁই হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।