পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মস্কো টাইমস : ইয়েলেনা গালিউকের মেয়ে যখন হিজাব পরে স্কুলে যেতে শুরু করে তখন তার বয়স ছিল ১৪। দু’দিন পর তার বাবা-মাকে প্রিন্সিপালের অফিসে ডাকা হয়। গালিউক জানান, আমাদের বলা হয় যে দু’টি পথ আছে- হয় হিজাব পরা বন্ধ করতে হবে; নইলে স্কুল ছাড়তে হবে।
কিশোরী বয়সের মেয়ে ছোটবেলা থেকে সেন্ট পিটার্সবুর্গ স্কুলে পড়ে আসছে। স্কুল ছাড়তে চায় না সে। সুতরাং বাকি দিনগুলোর জন্য হিজাব ছাড়তে হয় তাকে।
তার মা মস্কো টাইমসকে বলেন, মুসলমানদের জন্য এটা হল আন্ডারওয়ার পরে হাঁটার মত।
পরিবারটি এ ঘটনায় শিক্ষা পেল। তাদের আরেক মেয়ে ১০ বছরে পড়ার পর তারা তাকে একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করেন তারা। একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আরেকজন মুসলিম মা তার ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেন এবং নিজেই ঘরে তাদের শিক্ষাদান শুরু করেন।
এটা যে শুধু সেন্ট পিটার্সবুর্গ স্কুলের ঘটনা, তা নয়। সারা রাশিয়া জুড়েই এ ঘটনা ঘটছে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই সেগুলো অজানা থেকে যায়। এরপর হিজাব নিয়ে কেলেঙ্কারি দেশটির সাথে হিজাবের সম্পর্কের বিষয়টিকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসে। এর আগে রাশিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জাতীয় অচলাবস্থায় রূপ নেয়।
অতি সম্প্রতি রাশিয়ার মরদোভিয়া প্রজাতন্ত্রের তাতার মুসলিম অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রাম বেলোজারির উপর সবার দৃষ্টি পড়েছে। গত বছরের শেষদিকে এক স্থানীয় প্রিন্সিপাল শিক্ষকদের পাগড়ি পরা নিষিদ্ধ করেন। এ শিক্ষকরা সাদা পাগড়ি পরতেন। যারা প্রিন্সিপালের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন তাদের চাকরিচ্যুতির হুমকি দেয়া হয়।
ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ওয়ার্ল্ড কাপের আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক শাখার নিকট থেকে এ নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ এসেছে। পরে সংবাদ মাধ্যমের খবরে দাবি করে যে বেলোজারির কয়েকজন মুসলিম ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিদের সাথে লড়াইয়ে যোগ দেয়ার পর এফএসবির কাছ থেকে কর্মকর্তারা এ নির্দেশ পান।
এস ও ভি এ থিংকট্যাংকের প্রধান আলেকজান্ডার ভারখোভস্কি বলেন, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে। আইন প্রয়োগকারীরা পাগড়িকে সালাফিজমের নিদর্শন হিসেবে দেখে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মুসলিমদের দোষারোপমূলক বিভিন্ন প্রমাণ-ঘটনা দেখানো হয়। যেমন- মাত্র সাড়ে তিন হাজার লোকের জন্য ৮টি মসজিদ, অধিবাসীরা উগ্রপন্থী কার্যকলাপে জড়িত, ফটো দেখানো হয় যে পূর্ণ হিজাব পরা মেয়েদের হাতে কালাশনিকভ রাইফেল। এসব ঘটনায় এটাই মনে হয় যে হিজাব হচ্ছে ‘মরদোভিয়া খিলাফতের প্রতিদিনের প্রদর্শনী।
কিন্তু বেলোজারির অধিবাসীরা ক্রোধের সাথে তাদের এভাবে চিত্রিত করাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
বেলোজারি স্কুলের বাইরে এক ক্রুদ্ধ পিতা টিভি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মদ বিক্রি করি না এবং আমাদের মেয়েরা হিজাব পরে স্কুলে যায়। শুধু এই কারণে আমাদের উগ্রপন্থী বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
আইনজীবী মারাট আশিমভ বলেন, এখানকার লোকজন কয়েক প্রজন্ম ধরে পাগড়ি পরে আসছে। এমনকি সোভিয়েত আমলেও তা স্বীকৃত ছিল।
এর আগে নয়া জনমত জরিপে দেখা যায়, স্কুলে মেয়েদের হিজাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাশিয়ানরা একমত নয়।
পুরুষদের পাগড়ি ও মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে জড়িত ছিলেন আশিমভ। কয়েক বছর আগে মরদোভিয়ার মুসলিম মেয়েদের হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। তিনি আবেদনে যুক্তি দেন যে, রুশ সংবিধানে প্রদত্ত মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারের মধ্যে হিজাব ও পাগড়ি পরা আছে। তার আপিল খারিজ হয়।
তারপর থেকে হিজাব পরার অনুমতি দেয়া উচিত কিনা জিজ্ঞেস করা হলে রাজনীতিকরা রায়ের ব্যাপারে ভিন্নমত ব্যক্ত করেন। বেলোজারি ঘটনা বিষয়ে তার মত জানতে চাইলে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলে, আমরা এ মুহূর্তে এ আলোচনায় কোনো পক্ষ নিতে চাই না।
রাষ্ট্রীয় স্কুলগুলোকে ধর্মনিরপেক্ষ হতে হবে মর্মে আইনি নির্দেশনার সাথে একমত হয়ে কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার শ্রেণিকক্ষগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধের পরামর্শ দেয়া হয়।
কিন্তু আদালত কক্ষের বাইরে বিষয়গুলো অত সাদা ও কালো নয়। দেশের উল্লেখযোগ্য অংশে গুটিকয় হিজাব পরা ছাত্রীর ব্যাপারে স্কুলগুলো চোখ বন্ধ করে রাখে। সর্বশেষ গোলমালের আগে বেলোজারির মত অন্যান্য স্থানেও হিজাব অনুমোদন করা হয়, তবে তার ধরন ও রঙ নিয়ে পরামর্শ ছিল। এবং এখন পর্যন্ত চেচনিয়া বা দাগেস্তান প্রজাতন্ত্রের মত অন্যান্য মুসলিম অঞ্চলে হিজাব পরা দরকারি বিষয়ের কাছাকাছি।
২০১০ সালে চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ চেচনিয়ায় এক ব্যক্তির প্রশংসা করেছিলেন যে, মাথা না ঢাকার জন্য নারীদের উপর হামলা চালিয়েছিল।
মাঝেমধ্যে রাষ্ট্রীয় আদেশ বাস্তবায়নে এ ধরনের তারতম্য আঞ্চলিক ও ধর্মীয় সংঘাতের সৃষ্টি কওে, যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ক্রেমলিন ব্যাপক চেষ্টা করে।
বেলোজারি কেলেঙ্কারির পর শিক্ষামন্ত্রী ওলগা ভাসিলিয়েভা বলেন, প্রকৃত মুসলমানদের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন নেই। তার এ মন্তব্য গ্রোজনিতে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কাদিরভ তার ইনস্টাগ্রামে লেখেন- এটা আশর্য ব্যাপার যে মন্ত্রী তার ব্যক্তিগত মত লাখ লাখ মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার (কাদিরভ) নিজের মেয়েরা কখনোই হিজাব ছাড়বে না। একজন চেচেন পার্লামেন্টারিয়ান এ বিরোধকে আরো এগিয়ে নিয়ে ভাসিলিয়েভাকে ফ্যাসিজম ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করেন।
ক্রেমলিন যেখানে সরকারিভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচার করে সেখানে এ ধরনের ঘটনা রুশ মুসলিমদের মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি করে যে, তারা আলাদা। মুসলিম নেতারা বলেন , ইহুদি ছাত্রীদের তাদের কিপ্পাহ বা খ্রিষ্টান ছাত্রীদের তাদের ক্রস নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় না।
ক্ষুব্ধ মুসলিম পিতামাতারা অন্য ধর্মের ছাত্রীদের পিয়ার্সিং, খাটো স্কার্ট এবং লো কাট শার্ট ও বøাউজের দিকে আঙ্গুল তোলেন। প্রাপ্তবয়সে মুসলিম হওয়া জাতিগোষ্ঠীগত রুশ মা গালিউক বলেন, তখন তারা বলে এ আমার মেয়ে যার পোশাক শালীন নয়।
ডায়ালগ অব সিভিলাইজেশনসে আবাসিক স্কলার আলেক্সেই মালাশেংকোর মতে, বেলোজারির মত ঘটনায় রুশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে কৃত্রিম ও অনাবশ্যক সংঘাত তৈরি করে।
তিনি বলেন, হিজাব ও পাগড়িকে এমনভাবে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে যা করা উচিত নয়।
মালাশেংকো ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন, যখন রাশিয়ান মুসলিম মহিলারা তাদের আইডির জন্য বোরকা ছাড়া ছবি তুলতে অস্বীকার করেন। তখন অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী বলেন, আপনারা যেভাবে চান সে ভাবেই ছবি তুলুন। তখন সমস্যা মেটে।
বেলোজারিতে বিষয়টি দূর হবে বলে মনে হয় না। এ কেলেঙ্কারি সত্তে¡ও ওই গ্রামের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে ছাত্রীরা হিজাব পরা ও শিক্ষকরা মাথা ঢাকা অব্যাহত রেখেছে।
হিজাব ও পাগড়ির উপর এ নিষেধাজ্ঞার বাস্তব ফল হয়েছে এই যে, কিছু পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। স্কুল ছাড়তে হবে নয় হিজাব ছাড়তে হবে এই শর্তের মুখে বহু রুশ মুসলিমই প্রথমটিকে বেছে নিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।