Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একদিনেই ভেসে এসেছে ৮১টি মৃত কচ্ছপ

সাগরে বিরূপ পরিবেশ

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : সাগরের বিরূপ পরিবেশে অস্বাভাবিকভাবে মারা যাচ্ছে কচ্ছপ। গত একদিনেই সাগর থেকে ভেসে এসেছে ৮১টি মৃত কচ্ছপ। অলিভ রিডলে জাতের এসব কচ্ছপ সবটিই ক্ষতবিক্ষত। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর পূর্ণ জোয়ারের সময় থেকে কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফ উপকূলে এসব কচ্ছপ ভেসে আসে। কচ্ছপগুলোর অধিকাংশই সদ্য আঘাত প্রাপ্ত, ছুরি দিয়ে কাটা এবং কোপানোর ফলে মারা যায় বলে অনুমান করছেন সংশ্লিষ্টরা। জোয়ারে ও দক্ষিণের বাতাসের টানে এগুলো উপকূলে ভেসে আসে বলে জানিয়েছেন সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণ সংস্থা মেরিন লাইফ এলায়েন্স কর্মকর্তারা।
সংস্থাটি জানায়, জোয়ারের পর তাদের কার্যক্রমে সমুদ্র তীরে গেলে এসব মরা কচ্ছপ দেখতে পায় এবং তারা জানায় এত বেশি মরা কচ্ছপ একসঙ্গে আগে কখনে ভেসে আসতে দেখা যায়নি। সংস্থার গবেষণা সহকারী ওসমান সারওয়ার জানান, তার কার্যক্রম এলাকা শামলাপুর থেকে শিলখালী, পুরানপারা, বাইন্নাপারা, মাথাভাংগা এসব এলাকায় গতকাল রাত থেকে এ পর্যন্ত ৩৫টি মৃত কচ্ছপ ভেসে এসেছে।
গবেষণা সহকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উখিয়ার পাটোয়ার টেক থেকে মনখালী পর্যন্ত তিনি ২৯টি মৃত অলিভ রিডলে রেকর্ড করেন। সোনাদিয়াতেও ১১টি মৃত কচ্ছপের রেকর্ড করা হয়েছে। ওসমান সারওয়ার বলেন, একদিনে এত বেশি মৃত কচ্ছপ আমি ভেসে আসতে দেখিনি। এ সংখ্যাটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। মৃত অধিকাংশ কচ্ছপই ছিল ক্ষতবিক্ষত। তার মতে এগুলো ছুরি দিয়ে কাটা।
কয়েকজন জেলে জানায়, উপকূলে আসার সময় জেলেদের পাতা থাইজালে ও অন্যন্য ভাসা জালে কিছু কচ্ছপ আটকে যায়। তখন তারা কচ্ছপগুলোকে ছাড়িয়ে সাগরে ছেড়ে দেয়। মেরিন লাইফ এলায়েন্সের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জীববিজ্ঞানী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২-৩ মাস ধরে সাগর থেকে অধিক হারে মৃত ক্ষতবিক্ষত কচ্ছপ ভেসে আসছিল। এর কারণ উদঘাটন করতে তাদের কর্মীদের কাজে লাগান তারা। এতে তারা জানতে পারে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গারা স্বল্প পারিশ্রমিকে মাছ ধরার ট্রলারে কাজ করে। স্থানীয় জেলেদের জালে আটকে যাওয়া কচ্ছপ সমুদ্রে ছেড়ে দেয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু রোহিঙ্গা জেলেরা সেসব না জানায় জাল বাঁচাতে ছুরি দিয়ে কেটে তারা কচ্ছপগুলোকে মেরে ফেলে। সেসব কচ্ছপই গতকাল ভেসে এসেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।’
সংস্থাটি জানায়, উপকূলের ৪০ মিটারের কম গভীরতায় ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জেলেরা ট্রলার নিয়ে ১০-১২ মিটার গভীরতায় উপকূলের কাছে মাছ ধরতে দেখা যায়। আর সেখানেই জেলেদের জালে আটকে যায় কচ্ছপ। অনেকে মনে করেন গভীর সাগর থেকে উপকূলে ডিম পাড়তে আসার সময় এসব কচ্ছপ জালে আটকা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
এদিকে গবেষকরা জানিয়েছেন, সামুদ্রিক কয়েক প্রজাতির মাছ রক্ষা করতে কচ্ছপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিট বিভাগীয় শাখার সাইন্টিফিক অফিসার নিতেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, ‘মৎস্য জরিপ করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় দেখি কচ্ছপ কয়েক প্রজাতির মাছকে রক্ষা করতে সক্ষম। কিন্তু আজ সমুদ্রে কচ্ছপ প্রায় বিলুপ্ত। ৭ প্রজাতির কচ্ছপের মধ্য থেকে দেখা যায় মাত্র ১ প্রজাতির কচ্ছপকে । অলিভ রিডলে, সবুজ কচ্ছপ, ফ্লাটব্যাক কচ্ছপ, ক্যাম্প রিডলে, হকসবিল কচ্ছপ, লগার হেড কচ্ছপ ও লেদারব্যাক কচ্ছপ। যার মধ্যে শুধু মাত্র ২ প্রজাতির কচ্ছপ অলিভ রিডলে ও সবুজ কচ্ছপ উপকূলে ডিম পারতে আসে। ১৯৯৮ সালেও হকসবিল কচ্ছপ উপকূলে আসতে দেখা গেছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। আর আজ বিলুপ্তির পথে অলিভ রিডলেও।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জীববৈচিত্র্য। এখন আস্তে আস্তে সেসব হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে। আমরা মানুষরাই এদের ধ্বংস করছি। এক সময় এর চরম পরিণতি আমাদেরই দিতে হবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ