ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
কে এস সিদ্দিকী : ফেরাউনের অনুসারী প্রাচীন মিসরীয় জাতি আল্লাহর মহান নবী হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে যে অসদাচরণ ও দুর্ব্যবহার করে এবং আল্লাহর হুকুম বার বার অমান্য করে, কোরআনের নানা স্থানে তার উল্লেখ রয়েছে। মূসা (আ.)-এর খোদায়ী দাওয়াত তারা অমান্য করতে থাকে। সে যুগের মহাপ্রভাবশালী অত্যাচারী শাসক ফেরাউন নানাভাবে মূসা (আ.)-কে পরীক্ষার সম্মুখীন করে এবং প্রতিবারই সে ব্যর্থ হয়, কিন্তু তার হঠকারিতা থেমে যায়নি। জাদুকর দল দ্বারাও সে মূসা (আ.)-কে পরাজিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। এতে ফেরাউনের ক্রোধের সীমা থাকে না, যার বিশদ বিবরণ কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহর দরবারে যে বদদোয়া করেন, একটি হাদিসে এই মর্মে তা উল্লেখিত হয়েছে :
“হে আমার রব, তোমার বান্দা ফেরাউন দেশে অবাধ্যতা, বিদ্রোহ এবং অহমিকা প্রদর্শনে বদ্ধপরিকর হয়েছে এবং তার জাতি তোমার সাথে যে অঙ্গীকারীবদ্ধ ছিল, তারা তা পদদলিত করেছে। অতএব তুমি তাদের প্রতি আজাব নাজিল কর, যাতে আমার কওম বনি ইসরাইল এবং আলে ফেরাউনের জন্য উপদেশ এবং ভবিষ্যৎ বংশধরগণের শিক্ষা হয়।” এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন :
“ আমি তাদের ওপর প্রেরণ করলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ এবং রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। (সূরা : আরাফ, আয়াত : ১৩৩)”
আয়াতে কিবতীদের ওপর পাঁচটি আজাবের উল্লেখ করা হয়েছে। এসব আজাব একের পর এক নাজিল হতে থাকে এবং প্রত্যেকটি তাদের ওপর এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকে এবং প্রত্যেক দুটি আজাবের মধ্যে এক মাস বিরতি থাকে। আয়াতের ব্যাখ্যা নিয়ে তফসীরবিদগণের মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) সাঈদ জুবাইর, কাতাদাহ এবং মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক প্রমুখ বলেন, যখন জাদুকরগণ হযরত মূসা (আ.)-এর প্রতি ঈমান আনে তখন ফেরাউন ও তার অনুসারীগণ ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তাদের বনি ইসরাইলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনে অব্যাহত থাকে। তাই আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর একের পর এক আজাব দিতে শুরু করেন। প্রথমে তাদের ওপর দুর্ভিক্ষ নাজিল করেন এবং ফলাফলানি হ্রাস করেন। এতেও যখন সতর্ক হলো না, তখন হযরত মূসা (আ.) তাদের জন্য বদদোয়া করেন, যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাঁর আবেদন ও বদদোয়া কবুল করেন এবং উল্লিখিত পাঁচটি আজাব নাজিল করেন।
আজাবের বিবরণ
১. তুফান : হজরত মূসা (আ.)-এর বদদোয়ার ফলে কিতবীয়দের ওপর তুফান আকারে আজাব নাজিল করেন আল্লাহ। কিবতী এবং বনি ইসরাইলের বাড়িঘর ছিল পরস্পর লাগোয়া কিন্তু বন্যার পানি কেবলমাত্র কিবতীদের ঘরবাড়িতেই প্রবেশ করে এবং বনি ইসরাইলের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। তাই দেখা যায়, যে কিবতি দাঁড়ানো ছিল তার গলা পর্যন্ত পানি ওঠে এবং যে বসা অবস্থায় ছিল অথবা শায়িত সে ডুবে মারা যায়। কিবতীদের সমস্ত ক্ষেত, ফসল এবং ভূমি পানিতে তলিয়ে যায় এবং তা চাষবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
কিবতীরা যখন এ আজাবের শিকার হয় এবং মুক্তির কোনো উপায় দেখে না তখন আবার মূসা (আ.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয় এবং কান্নাকাটি করে ফরিয়াদ জানায় যে, আপনাদের দোয়ার বরকতে যদি এ বিপদ আমাদের ওপর থেকে হটে যায়, তাহলে আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব এবং বনি ইসরাইলকে আপনার সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দেব। তাদের কাতর নিবেদনে তার মন বিগলিত হয়ে যায় এবং তিনি আল্লাহর দরবারে এ আজাব তুলে নেয়ার প্রার্থনা করেন। অতঃপর তাদের ক্ষেতখামার, বাগবাগান এবং শস্য-ফলমূল ও চারা ইত্যাদির ফলন পূর্বের চেয়ে অধিক হয়।
কিন্তু কিবতীরা এ প্রাচুর্য দেখে পূর্বের অঙ্গীকার হতে ফিরে যায় এবং হজরত মূসা (আ.)-কে বলে যে, ওই বন্যার পানি তুফান ছিল না বরং আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের জন্য এনাম ছিল। এ জন্য আপনার প্রতি ঈমান আনার প্রশ্ন যেমন নেই তেমনি বনি ইসরাইলকেও আপনার সঙ্গে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। এ অবস্থায় তারা এক মাস পর্যন্ত আরামে স্বস্তিতে থাকে।
২. পঙ্গপালের আজাব : অতঃপর আল্লাহতায়ালা ওই সমস্ত কিবতীর ওপর পঙ্গপালের আজাব নাজিল করেন। পঙ্গপাল দলে দলে এসে তাদের ক্ষেতখামার ও বাগবাগানে উৎপন্ন সমস্ত ফসল ও ফলফলাদি সাবাড় ও ধ্বংস করতে থাকে এবং বৃক্ষকে পাতাশূন্য করে দেয়। এরপর পঙ্গপালের দল কিবতীদের বাসভবনসমূহে ডুকে পড়ে এবং তাদের গৃহগুলোর ছাদ, দরজা এবং খুঁটিগুলো পর্যন্ত মিসমার করে দেয়, এমনকি তাদের বিছানাপত্র, পরিধানের কাপড়-চোপড় পর্যন্ত পঙ্গপালের দল চেটে নেয়। ফলে কিবতীরা শোচনীয় দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকে এবং ক্ষিধায় মরতে থাকে। কিবতীরা এ আজাবে অতিষ্ঠ ও নিরাশ হয়ে পড়ে। ফের হজরত মূসা (আ.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে খেদমত করতে থাকে। হযরত মূসা (আ.)-এর অন্তরে ওদের জন্য রহম আসে তিনি আবারো দোয়া করেন এবং তাদের ওপর আপতিত বিপদ দূর হয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, হজরত মূসা (আ.) একটি ময়দানে দাঁড়িয়ে তাঁর আসা (লাঠি) দ্বারা ইশারা করেন। তাঁর ইশারায় সমস্ত পঙ্গপাল যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে চলে যায় দলবদ্ধভাবে। সুতরাং কিবতীরা আরামে বসবাস করতে থাকে এবং পূর্বের ন্যায় ওয়াদা ভঙ্গ করে, এভাবে এক মাস অতিবাহিত হয়।
৩. ব্যাঙের আজাব : এবার আল্লাহতায়ালা ওদের ওপর ব্যাঙের আজাব নাজিল করেন। ব্যাঙের দল তাদের ঘরে, বিছানায়, বস্ত্র এবং পানাহার ইত্যাদিতে ঢুকে পড়ে। মোট কথা, এমন কোনো স্থান থাকে না, যা ব্যাঙের দল খালি রাখে। এমন কি তারা যখন কথা বলত ব্যাঙ দৌড়ে এসে তাদের মুখমন্ডলে ঢুকে যাওয়ায় চেষ্টা করত। এমন কি তাদের হাঁড়িগুলোতে (পাত্র) তরকারি পাকানো অবস্থায় পতিত হতো, তাদের আটা-ময়দায় ঢুকে পড়ত। শায়িত ব্যক্তির শরীরে, চোখের পাতায় ও খাট পালংয়ে দলে দলে ব্যাঙ এসে সমবেত হতো। ফলে ওই ব্যক্তির পক্ষে পাশ পরিবর্তন করাও কঠিন হয়ে পড়ত এবং সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে চিৎকার করতে থাকতো। এ অবস্থায় কিবতীরা যখন দিশাহারা হয়ে পড়ে এবং বাঁচার পথ না খুঁজে পায় তখন ফের হজরত মূসা (আ.)-এর কথা স্মরণাপন্ন হয়। তারা ক্রন্দন ও আহাজারি করতে এবং চিল্লাতে চিল্লাতে হজরত মূসা (আ.)-এর খেদমতে হাজির হয় এবং পূর্বের ন্যায় অনুনয়-বিনয় করতে থাকে এবং ওয়াদা করে। হজরত মূসা (আ.) দোয়া করেন। আল্লাহতায়ালা ব্যাঙের যন্ত্রণাদায়ক আজাব হতে তাদের রক্ষা করেন, কিন্তু আবারো তারা ওয়াদা ভঙ্গ করে।
৪. রক্তের আজাব : এক মাস পর আল্লাহতায়ালা কিবতীদের ওপর রক্তের আজাব নাজিল করেন এবং তাদের ওপর রক্ত বর্ষণ করা হয়। নীলনদে পানির বদলে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। তাদের শহরগুলোর সকল ক‚প, ঝরনা রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মোটকথা, যেখানেই পানি মজুদ ছিল অথবা পানি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সকল স্থানই রক্তে ভরে যায়। সকল কিবতী পেরেশান বিচলিত হয়ে পড়ে। কেননা, আজাব শুধু কিবতীয়দের ওপরই পতিত হয়। আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলকে এ বিপদ হতে রক্ষা করেন, তাদেরকে নিরাপদে রাখেন। যখন কিবতীরা পিয়াসে-পিপাসায় কাতর হয়ে ফেরাউনের নিকট গমন করে এবং তার কাছে ফরিয়াদ এখন কী করবে, তারা বলে, আমরা কঠিন বিপদের সম্মুখীন, আমাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করে দিন। এ কথা শুনে খোদ একই আজাবের শিকার ফেরাউন বলতে থাকে, তোমাদের ওপর জাদু করা হয়েছে এবং এ জাদু অবশ্যই মূসা (আ.) করেছেন।
অতঃপর ফেরাউন বনি ইসরাইলের একটি মহিলাকে তলব করে (বনি ইসরাইল তখন পর্যন্ত ফেরাউনের কয়েদি ছিল) এবং একজন কিবতী নারীকেও তলব করে। একটি পাত্রে বনি ইসরাইলের মহিলা দ্বারা পানি ভরে দেয়। যখন বনি ইসরাইলের এ মহিলা পাত্রে পানি ভরে তা রক্তে পরিবর্তন হয়। বরং পানি পানিই থেকে যায়। ফেরাউন কিবতী মহিলাকে বলে, তুমি এ পাত্র হতে পানি পান কর এই বনি ইসরাইলের মহিলার হাত থেকে। তাই কিবতী মহিলা ওই পাত্র হতে পান করার ইচ্ছা পোষণ করে পাত্রে তার হাতের ছোঁয়া লাগানোমাত্র তার দিকের পানি রক্ত হয়ে যায়, পক্ষান্তরে বনি ইসরাইলের দিকের পানি রক্ত হয় না।
কিবতীরা বহু চেষ্টা করে যাতে কোনো প্রকারের বনি ইসরাইলের দ্বারা অথবা তাদের সহযোগিতায় তাদের পানির পিপাসা নিবারণ করতে পারে কিন্তু তাতে তারা সফল হয় না। কেননা, যখনই তারা বনি ইসরাইলকে পানি আনার এবং পানি পান করানোর নির্দেশ দিত তৎক্ষণাৎ রক্ত হয়ে যেত, পক্ষান্তরে বনি ইসরাইলের জন্য তা পানিই থেকে যেত। আরো একটি উদাহরণ এই যে, এক কিবতী মহিলা পানির জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। সে বনি ইসলাইলের এক নারীকে বলে যে, সে তার মুখে পানি ভরে তার মুখে যেন স্থানান্তরিত করে দেয়। তাই বনি ইসরাইলের সে মহিলা পাত্র হতে এক ঘোট পানি মুখে নেয় এবং তা কুলি হিসেবে কিবতী মহিলার মুখে দেয় কিন্তু সে পানি কিবতী মহিলার মুখে পড়ামাত্র রক্ত হয়ে যায়।
অপরদিকে ফেরাউনও তীব্র পিপাসায় এতই কাতর হয়ে পড়ে যে, সে বৃক্ষরাজির তরতাজা ডাল ও ছাল চিবাতে থাকে, যাতে সেগুলোতে বিদ্যমান আর্দ্রতার দ্বারা কিছুটা হলেও শান্তিলাভ করতে পারে, কিন্তু তা থেকেও লবণ ও লবণাক্ততা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। ফেরাউনসহ কিবতীরা এক সপ্তাহ রক্তের আজাব ভোগ করতে থাকে। এ চরম অবস্থায় আবার হজরত মূসা (আ.)-এর নিকট এসে বলতে থাকে আমাদের দোয়া করুন, যাতে আমরা এ কঠিন আজাব হতে নাজাত পাই। আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব এবং সকল বনি ইসরাইলকে ছেড়ে দেব। মূসা (আ.) দোয়া করেন এবং আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন ও তাদের ওপর থেকে রক্ত আজাব উঠিয়ে নেন। কিন্তু এরপরও কিবতীরা তাদের ওয়াদা হতে দূরে সরে যায় এবং ঈমান আনা হতে বিরত থাকে। এভাবে যখন সকল আজাব পূর্ণ হয় তখন ফেরাউন ও তার অনুসারীদের নদীতে ডুবে মরার ঘটনা ঘটে, যার বর্ণনা কোরআনে রয়েছে।
আল্লামা দামির উল্লিখিত পাঁচটি আজাবের বিবরণ প্রদানের পর আরো কিছু জরুরি বিষয়ের অবতারণা করেছেন। নিবন্ধের গোড়ায় সূরা আরাফের ১৩৩ নং আয়াতের পর ১৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, অতঃপর যখন আমি তাদের ওপর থেকে আজাব তুলে নিলাম নির্ধারিত একটি সময় পর্যন্ত। আল্লামা দামিরী বলেন, এ আয়াত দ্বারা ওপরে বর্ণিত পাঁচটি আজাবকে বুঝানো হয়েছে কিন্তু ইবনে জুবাইর বলেন যে, এ আয়াতে ‘রিজযুন’ শব্দের অর্থ ‘তাউন’ (মহামারী) এবং কিবতীদের ওপর উল্লিখিত পাঁচটি আজাবের পর আল্লাহতায়ালা ‘তাউন’ প্রেরণ করেছিলেন এবং রোগের শিকার হয়ে শুধু এক দিনেই সত্তর হাজার কিবতী প্রাণ হারায়।
রেশমি কাপড় পরিধান করলে উকুন ক্ষতি করতে পারে না। এ সম্পর্কে একটি ঘটনা এই যে, হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) এবং হজরত জোবাইর ইবনে আওয়াম (রা.) একবার হজের সময় উকুনের পাল্লায় পড়েছিলেন। উকুনের যন্ত্রণায় তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। যার ফলে তাদের দুজনকে রাসূলুল্লাহ (সা.) রেশমি কাপড় পরিধানের অনুমতি প্রদান করেন। আর এ দৃষ্টান্তের অনুসরণ করতে অপর এক ব্যক্তি রেশমি কাপড় পরিশাধন করে। বর্ণিত আছে যে, হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফত আমলে তিনি বনি মুগীরার এক ব্যক্তিকে রেশমি জামা পরিহিত অবস্থায় দেখেন (লোকটি তার মামার বংশের ছিল)। এ অবস্থায় তিনি তাকে প্রহার করার জন্য দোররা হাতে উঠান। লোকটি বলে, আবদুর রহমান ইবনে আওফ কি রেশমি কাপড় পরিধান করেছিলেন না এবং হুজুর (সা.) কি তাকে অনুমতি প্রদান করেছিলেন না? হজরত উমর (রা.) বলেন, আমি কি আবদুর রহমান ইবনে আওফের ন্যায়?
কথিত আছে যে, হজরত মূসা (আ.) একবার মিসরের এক কসবা ‘আইনে শামসে’ গমন করেন। এ কসবায় একটি ঝিল ছিল, যার তীরে একটি টিলা ছিল। এ টিলায় পৌঁছে তিনি স্বীয় আশা (লাঠি) দ্বারা আঘাত করেন, যার ফলে টিলাটি কণা কণা হয়ে যায়। এ কণারাশি উকুনের রূপ ধারণ করে, অতঃপর সমগ্র মিসরে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানের ক্ষেতখামার এবং বাগবাগানসমূহে যত কিছু ছিল সবই খেয়ে ছাফ করে দেয়। অতঃপর উকুন জনপদে ঢুকে পড়ে এবং লোকদের কাপড়ে ও পাত্রসমূহে লেপটে যায় এবং তাদেরকে কাটতে থাকে, এমন কি সেখানে যখনই কেউ খানা খেতে বসতো তা উকুনে পরিপূর্ণ হয়ে যেত।
বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী ফেরাউন চারশ বছর রাজত্ব করে এবং ছয়শ কুড়ি বছর তার বয়স হয়েছিল। এখানে একটি জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, হজরত মূসা (আ.)-এর অনুসারী বনি ইসরাইল ছিল, আল্লাহর নিকট অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং নবী হিসেবে হজরত মূসা (আ.)-এর প্রতি এবং তার প্রতি অবতীর্ণ আসমানি গ্রন্থের প্রতিও বিশ্বাসী। তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ফেরাউন শাসিত রাষ্ট্রের প্রাচীন নাসারা/কিবতীরা ছিল ফেরাউনের অনুসারী। কিবতীদের ওপর একের পর এক যে পাঁচটি খোদায়ী আজাব নাজিল হয়েছিল, যার বিবরণের উল্লেখ আমরা করেছি এগুলো একটিও বনি ইসরাইলের কাউকে স্পর্শ করেনি। আজাব হতে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। সেই মূসাভী ধর্মের অনুসারী বনি ইসরাইল ও মূসা-পরবর্তী ইসরাইলের (চলমান পর্যন্ত) মধ্যে আক্ষরিক দূরত্ব যেমন বিদ্যমান, তেমনি আকিদা-বিশ্বাসগত তফাৎও বিশাল। এই বনি ইসরাইল আল্লাহ ও ইসলাম দ্রোহিতার জন্য কুখ্যাত এবং মূসা (আ.)-এর যুগের বনি ইসরাইল আল্লাহতে বিশ্বাসী মূসা (আ.)-এর অনুসারী হিসেবে সুবিখ্যাত, নন্দিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।