Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জাতীয় সংসদে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার হলে খুনের বিচার হবে না : জাপা এমপি

খালেদার গ্রেফতার চান মাইজভান্ডারী

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : কানাডার ফেডারেল আদালতে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দেয়ার পর বাংলাদেশেও দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক দল তরীকত ফেডারেশনের নেতা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী এই দাবি করেন। একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবিও জানান তিনি।
মাইজভা-ারী বলেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এই বিএনপি গত নির্বাচনের আগে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। নারী-শিশুরা এখনো কাতরাচ্ছে। আমরা বারবার বলেছি, যারা যুদ্ধাপরাধী-সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়, তারাও সন্ত্রাসী। নিজের এক সময়ের দল বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি তুলে তিনি বলেন, আল্লাহর গজব পড়েছে। বিদেশের মাটিতে এখন বিএনপিকে সনদ ধরিয়ে দিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যেমন তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বিএনপিরও নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মাইজভা-ারী বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসের বিচার করতে হবে। যেসব নেতা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতারের জোর দাবি জানাচ্ছি আমি।
জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান বলেছেন, নতুন করে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা ঠিক হয়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার হলে অনেক খুনের বিচার হবে না।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, সরকারের দায়েরকৃত মামলা সরকারই কী করে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে তা নিয়ে সবাই বিস্মিত। প্রত্যাহারের সুপারিশ করা মামলার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণের মামলা, নাশকতার মামলা, ঘুষ লেনদেনের মামলা, সরকারি টাকা আত্মসাতের মামলা, ডাকাতি মামলা, অবৈধভাবে অস্ত্র দখলে রাখার মামলা, কালোবাজারি, অপহরণ, জালিয়াতি, বোমা ও অস্ত্র মামলা রয়েছে।
সরকারের এই ‘উদ্যোগের’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার নিজেরাই বাদি মামলার বাদি হয়ে নিজেরাই বলছেন যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু যারা মারা গেছে তাদের সন্তানাদি বা পরিবার কী এই হত্যার বিচার পাবে না? একজন মানুষ খুন হলো তার পরিবার কী সেই খুনের বিচার দেখে যেতে পারবে না?  বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বলে  যে মানুষটি হত্যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় হলো তার পরিবার কী সেই বিচার পাবে না? এটা ন্যাচারাল জাস্টিসের প্রিন্সিপালের বিরোধী।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় ৩৪টি হত্যা মামলাসহ নতুন করে ২০৬টি আলোচিত মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে একটি জাতীয়  দৈনিকে খবর প্রকাশ হয়। ওই পত্রিকার খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান বলেন, নব্বইয়ের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক মামলা এখনো পর্যন্ত প্রত্যাহার না হলেও রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৬টি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বেশিরভাগ মামলাই আওয়ামী লীগের দুই আমলে দায়ের করা এবং তার অনেকগুলোর বাদি সরকার।
এর আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট আমলে ২০০৯ থেকে ১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭ হাজার ১৯৮টি মামলা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছিল, যা অনেকগুলো ইতোমধ্যে আদালত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৩৪টি হত্যা মামলাসহ ২০৬টি মামলা যদি প্রত্যাহার করা হয়, এই ৩৪টি হত্যা মামলায় তো কেউ না কেউ খুন হয়েছে বলে ও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।
পরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আপনি খবরের কাগজের ওপর ভিত্তি করে এ কথাগুলো বলেছেন। আপনার নিশ্চয়ই জানা উচিত যে, সরকার যেকোনো মামলাই প্রত্যাহার করতে পারে যদি তার কাছে গ্রাউন্ড থাকে। সুপারিশ করলে পরে  যে আদালতের মামলা তার পাবলিক প্রসিকিউটরের মাধ্যমে ওই আদালতে প্রার্থনা করতে হবে। সরকার সুপারিশ করলেই কোর্ট তা প্রত্যাহার করবেই এটা কোনো দিনই হয় না। কোর্ট মে রিজেক্ট ইট। আপনি যে কথাটি বলেছেন, যে লোকটি হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে তার পরিবার বিচার পাবে নাÑ আপনি যথার্থ বলেছেন।  সেই নিরিখে আদালত যে রায় দেবে সেই রায় আপনার ওপর যেমনি বাধ্যবাধকতা সরকারের ওপরও তেমনি বাধ্যবাধকতার বিষয় রয়েছে। সুতরাং সরকার সুপারিশ করলেই সেই আমলাটি প্রত্যাহার হবে তা বলা যায় না। অনুমানভিত্তিক কোনো বক্তব্য না রাখাই শ্রেয়।
ডেপুটি স্পিকারের পরে পীর ফজলুর রহমানকে উদ্দেশ করে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বিরোধী দলে থাকলে অনেক কথা বলা যায়। পত্রিকায় অনেক খবর দেয়া যায়। কিন্তু কোনটি অসত্য না সত্য তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। তার নিশ্চয়ই মনে আছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন কালীগঞ্জে আমাদের ময়েজউদ্দিন ভাই মারা গেলেন। তাকে যারা মারল সেই ভদ্রলোকের নাম আজম। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘটনার পর ওই জায়গায় গিয়ে তাকে ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ময়েজউদ্দিন হত্যা মামলার আসামি তাকে মামলা থেকে প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছিলেন। এই উদাহরণ কিন্তু এ দেশে আছে। তিনি যে মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছেন পত্রিকায় দেখে সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করে বিবৃতি দেয়া কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আশা করব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাউসে আসবেন। তিনি ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে কিছু কথা বলবেন। তাকে বলার সুযোগ দিতে হবে।
চিফ হুইপ বলেন, খালেদা জিয়া যখন সরকারে ছিল তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, স্বাধীনতাবিরোধীদের মামলা। কোনো মামলাই কিন্তু তারা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করেনি। যারা খুনি তাদের এই সংসদে ও প্রেসিডিয়াম পদের সুযোগ দিয়েছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ