Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেখানকার প্রসিকিউশন বিএনপি-আ’লীগ দু’দলকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছে

কানাডার আদালতের রায় বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ রিজভী

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : কানাডার আদালতের রায়ের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যকে সরকারের ‘চক্রান্তমূলক নাটকের’ অংশ বলেছে বিএনপি। দলটি মনে করে নির্বাচনের আগে জনগণের মধ্যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতে এসব নানা ঘটনা ঘটাবে ক্ষমতাসীনরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার আদালতের বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। একুশের প্রথম প্রহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেগম খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা জানানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি
রিজভী আহম্মেদ বলেন, সরকার প্রভাবিত মিডিয়ায় (বুধবার) আমরা যেভাবে সংবাদটি দেখেছি, কানাডার যে অনলাইনে এসেছে আমরা সেটা দেখিছি, সেটা শওকত আলী সাগর, ছাত্র লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। তারা কানাডায় বসে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও নানা ধরনের চক্রান্তের বেড়াজাল তৈরি করছেন, একটা বর্বরোতম পরিকল্পনা তৈরি করছেনÑ এটা সুস্পষ্ট।
রায় পড়ে যতটুকু বুঝেছিÑ এটা সম্পূর্ণ চক্রান্তমূলক নাটকের অংশ। আমরা মনে করি, এটি বর্তমানের সরকারের একটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি বিষয় যেটিকে তারা একটি নাটক সাজিয়েছে এবং ওই নাটকটা ওইভাবে তারা তথ্য-প্রমাণ দিয়েছে। বানোয়াট একটা নাটক তারা তৈরি করেছেন, নির্বাচনের আগে এ ধরনের কিছু ঘটনা সৃষ্টি করবেন, সৃষ্টি করে জনগণের মাঝে ধোঁয়াশা তৈরি করবেনÑ এটা তাদের উদ্দেশ্য।
এই রায়ের বিরুদ্ধে কানাডায় উচ্চ আদালতে আপিল করবেন কিনা জানতে চাইলে রিজভী বলেন,  সেটা আমরা নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে বলতে পারব।
কানাডার ফেডারেল আদালত হরতাল-অবরোধে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার কারণে দলটির এক কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করে দেয়। বুধবার এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, বিএনপি সন্ত্রাসে ছিল, আছে বা ভবিষ্যতেও থাকতে পারেÑ এমন ধারণা করার যৌক্তিক কারণ আছে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী কানাডার আদালতের রায়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, কানাডার যে অনলাইনে রায়টি বেরিয়েছে, সেটি শওকত আলী সাগরের, যিনি ছাত্রলীগ করেন। এই রায়টি গত মাসের ২৫ তারিখে রায় বেরিয়েছে। প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলো।
হঠাৎ করে কালকে আমরা এর প্রচার দেখতে পেলাম বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের প্রচারিত মিডিয়ায় প্রচারবাদকে এটা প্রচার করতে ধুম পড়ে গেছে।
রায়ের একটি অংশের বক্তব্য তুলে ধরে রিজভী আহম্মেদ বলেন, বিরোধী দলের একজন ছেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের কথা বলা হচ্ছে, সে তার আবেদনে কী বিএনপির বিরুদ্ধে বলবে? সে তো বলবে আমি বাংলাদেশে একটা প্রতিকূলতার মধ্যে আছি, হয়রানি হচ্ছে, মামলা হচ্ছে, টর্চার হতে পারে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হতে পারেÑ এসব কথা আবেদনে বলবে। সে ওই কথা (বিএনপির বিরুদ্ধে) বলবে কেন? এই কথাতেই মনে হচ্ছেÑ এটা একটা সাজানো নাটকের বিষয়। যেটা কানাডায় উপস্থাপন করেছেন, ইমিগ্রেশন বিভাগকে এভাবে ভুল তথ্য তারা দিয়েছেন, বানানো নাটকের ভুল তথ্য দিয়েছেন এবং সেটা তারা কোর্টে নিয়ে গেছেন।
যে ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবে, সে ব্যক্তি কী বলবেÑ বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন?Ñ এই প্রশ্ন রেখে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, রায়ে বিচারক বলেন আবেদনকারীর বক্তব্যকে আমলে নিয়ে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা বাংলাদেশের রাজনীতিকে সহিংস ঘটনা হিসেবে অবহিত করেন। বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উভয়ে জনগণ ও সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সহিংস কর্মকা- পরিচালনা করছে। এই যে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার তথ্যের ভিত্তিতে অর্থাৎ এটা বিএনপি সন্ত্রাসী কিনা, তারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করেছেন, এটার জন্য প্রসিকিউশনের বিপক্ষে যে ডিফেন্স ল’ইয়ারের তাদেও কোনো যুক্তি-তর্ক এখানে দেখছি না। আমরা রায়ের সূচনা যতটুকু  পড়েছি, আরো বিস্তারিত জেনে পরে বলব।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুধবার বলেছেন যে বিএনপি নেত্রী নাকি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেটা মূল বেদিতে, সেই বেদিমূলে উঠে, যেখানে উঠা যাবে না, সেখানে উঠে নাকি তিনি পুস্পস্তবক অপর্ণ করেছেন। আমরা বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শুধু মিথ্যাই বলেন না, ডাহা মিথ্যা কথা বলেন।
শহীদ দিবসের পুষ্পমাল্য অর্পণের পাঁচটি আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখিয়ে রিজভী বলেন, আমি আপনাদের দেখাতে চাইÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলিমুল্লাহ সাহেবরা কোথায় দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধার্ঘ জানাচ্ছেন। পুলিশ এবং সর্বস্তরের জনগণ কোথায় দাঁড়িয়ে থেকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ কোথায় দাঁড়িয়ে থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন, দেখুন, সাংবাদিকরা কোথায় দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কোথায় দাঁড়িয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন। ঠিক একই জায়গায় নগ্নপথ ম্যাডামসহ সবার। তাহলে প্রধানমন্ত্রী যে সত্য কথা বলেন না, এটা একেবারে সুস্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির বিরুদ্ধে তার যে জন্মান্ধ বিরোধিতা তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্যে সেটাই ফুটে উঠেছে। তিনি অসত্যের ওপর ভর করে দেশ পরিচালনা করছেন। এখন দেশ ও বিদেশেও ষড়যন্ত্রের নিখুঁত পরিকল্পনা তিনি করে যাচ্ছেনÑ নির্বাচন নির্বাচন ধুয়া তুলে তার আগে জনগণকে প্রভাবিত করার জন্যে।
আমরা বলব, বানোয়াট অসত্য জালিয়াতি দিয়ে কখনো দেশ শাসন করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্নভাবে অভিনয় এবং এমনভাবে মিথ্যার ফুলঝুড়ি দিয়ে সৃষ্টি করেন যেটাতে জনগণ বিভ্রান্ত হবে।
গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকা-ের পর বিরোধী দলকে দোষারোপ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, আসলে ঘটনা যেটা হয়, বিএনপিকে টার্গেট করার জন্য, বিরোধী দলকে নানাভাবে বিপদগ্রস্ত করার জন্য, ঘটনা ঘটলে পরে সেটার দায় চাপানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষের ভেতরকার যে আকুতিÑ এটার সাথে বিএনপি জড়িত না, বিএনপি এ সরকারের হামলা-মামলা, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র, আক্রমণÑ বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম এটা লেগেই আছে। এর মধ্যে সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য তাকে হত্যার সাথে জড়িত থাকবেÑ এটা সেদিনই যখন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ এতে মুচকি হেসেছে। আজকে দেখুন ঘটনার নাটক বানাতে বানাতে কোন জায়গায় চলে এসেছে। তাদের প্রভাবিত মিডিয়া যেটা প্রচার করেন, জনগণ তা বিশ্বাস করে না, দেশবাসী বিশ্বাস করেন না, পৃথিবীর কেউ বিশ্বাস করে না।
গত কয়েক সপ্তাহে সারা দেশে নিখোঁজ হওয়া ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনা তুলে ধরে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, গুম-খুনের ফেস্টিভ্যাল এখন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের কথা মানে নেকড়ের মুখে মেষ শাবকের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া। এরা এখন একটি এমন রাষ্ট্র ও সমাজ কায়েম করেছে যেখানে ‘এক ব্যক্তি এক দল’-এর বিরুদ্ধে আকার-ইঙ্গিতে সমালোচনা করলেও তাকে অদৃশ্য হয়ে যেতে হবে।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন আকনের নির্বাচনী পথসভায় হামলা ও নেতা-কর্মীদের আহত হওয়ার ঘটনার নিন্দাও জানান রিজভী।
দলের সহ-সভাপতি হাফিজউদ্দিন আহমেদ ভোলার লালমোহনে ক্ষমতাসীন যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহযোগিতায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা এবং তাদের দোকান-পাট বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোলায় বিএনপির সম্মেলন হওয়ার পর ক্ষমতাসীনরা লালমোহন উপজেলার সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু করেছে, তা-ব চালাচ্ছে। কেবল বিএনপি করার অপরাধে এটা করা হচ্ছে। বিএনপি করে বলে লালমোহন পৌরসভায় গতকাল ১৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এটা পুলিশের সহযোগিতায় হচ্ছে। এমন একটা পরিবেশ সেখানে তৈরি করা হয়েছে যে, ক্ষমতাসীনরা লালমোহন উপজেলা একটা সন্ত্রাসের রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। আমি লালমোহনের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।
বিএনপি হলে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসে একধাপ এগিয়ে
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কানাডার রায় সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কানাডার যে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানকার যারা প্রসিকিউশন করেন, তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছে। সুতরাং শুধু শুধু বিএনপিকে দোষারোপ করার মানে হয় নাÑ এটাকে বিশ্বাস করলে, এটিও বিশ্বাস করতে হবে আওয়ামী লীগও সস্ত্রাসীদের দল।
আমি বলতে চাই, কেউ যদি বিশ্বাস করে যে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন, তাহলে আওয়ামী লীগ একধাপ এগিয়ে আছে, আমাদের আগে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আব্দুল আউয়াল খান, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ