পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ‘বিএনপি সন্ত্রাসী দল’ (!) মিডিয়ার এমন একটি খবরে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তোলপাড়। একজন প্রবাসীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নিয়ে ২৫ জানুয়ারী কানাডার আদালতের দেয়া ‘পর্যবেক্ষণ’ খবর দেশের মিডিয়াগুলোতে ফলাও করে প্রচার হওয়ার পর শুরু এই হয় বিতর্ক। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চলছে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের লড়াই। জাতীয় সংসদ, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, বক্তৃতা বিবৃতি, টকশো, সামাজিক যোগাযোগ মাধমে এ বিতর্ক আছড়ে পড়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে গেছে ‘ক্ষমতা যার তিনি তার’ খ্যাত নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারীর দাবি। মাজার কেন্দ্রীক দলের এই নেতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’দলই করেছেন। বি চৌধুরীর জোটে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের লজ্জা দিয়েই ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে (!) বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়; তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান।
কানাডাভিত্তিক একটি অনলাইন বাংলা সংবাদপত্রে প্রকাশিক কানাডার আদালত ‘বিএনপি সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দেয়ার খবরের সূত্র ধরে দেশের মিডিয়াগুলো ‘বিএনপি সন্ত্রাসী দল’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে। দেশের মিডিয়াগুলোর কোনো প্রকার অনুসন্ধান ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওই খবর ছাপে। সেই খবরের সূত্র ধরে জাতীয় সংসদে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল এবং বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। এ নিয়ে সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন; অন্যদিকে বিএনপির নেতারা খবরটিকে ‘সাজানো নাটক’ অবিহিত করে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির এ খবরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। যে খবর নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন হঠাৎ উত্তপ্ত তাতে বলা হয় মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামের একজন বাংলাদেশীর বিএনপির সদস্য হওয়ায় তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন কানাডা ইমিগ্রেশন নাকচ করে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২৫ জানুয়ারী জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারক বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কার্যলিপ্ত ছিল, আছে বা লিপ্ত হবার লিপ্ত হবে’ তা বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে- এই মর্মে ইমিগ্রেশন অফিসার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা যৌক্তিক। ‘বাংলাদেশের সব সন্ত্রাসীই বড় দুটি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি’ আবেদনকারীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা এই প্রশ্নে ইমিগ্রেশন আফিসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা সে প্রশ্ন বিবেচনার জন্য আদালতের সামনে নেই।’ গতকাল বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বিএনপিকে ইমেজ ক্ষুণœ করতে এ খবর ছেপেছে। আদালতের প্রকৃত পর্যবেক্ষণ খবরে আসেনি। উল্লেখ- যে সব সাংবাদিক প্রবাসী হয়েছেন তাদের অনেকেই দলবাজীর কারণে পক্ষপাতদুষ্ট লেখা লেখেন। সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী নিউইয়র্কে এবং সাংবাদিক সওগাত আলী সাগর কানাডা প্রবাসী। এ দু’জনই সাংবাদিকতার আড়ালে একজন বিএনপির ‘দলদাস’ আরেকজন আওয়ামী লীগের ‘দলদাস’ হিসেবে চিহ্নিত। এরা মহৎ পেশা সাংবাদিকতার আড়ালে রাজনৈতিক দলের দাসত্ব করতে অভ্যস্ত।
কানাডার ফেডারেল আদালতের একটি রায়ে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দেয়ায় সংসদে দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। তিনি সন্ত্রাসের দায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান। দেশের রাজনীতিতে সুবিধাবাদী হিসেবে পরিচিত নজিবুল বশর মাইজভা-ারী ১৯৯১ সালে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এমপি হন। ক্ষমতার মধু খেতে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেন। অতপর বিএনপি ছেড়ে তরীকত ফেডারেশন গড়ে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের যৌথ নেতৃত্বাধীন জোটে শরীক হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে হঠাৎ তিনি ১৪ দলীয় জোটের বাইরে আওয়ামী লীগের অনুসারী হন। সুবিধাবাদী এ নেতা বর্তমানে চট্টগ্রাম-২ আসনের এমপি। সংসদে তিনি বলেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। বিএনপি গত নির্বাচনের (৫ জানুয়ারী ২০১৪) আগে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। নারী-শিশুরা এখনও কাতরাচ্ছে। আমরা বারবার বলেছি, যারা যুদ্ধাপরাধী-সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়, তারাও সন্ত্রাসী। বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি তুলে তিনি বলেন, আল্লাহর গজব পড়েছে। বিদেশের মাটিতে এখন বিএনপিকে সনদ ধরিয়ে দিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যেমন তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বিএনপিরও নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি যে রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনে রূপ নিয়েছে, তা আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম। কানাডার এই রায়ের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলো। বিএনপি যে সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছিল, তা বন্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে রাজনীতির নামে সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। এ রায়ের পর বিএনপির রাজনীতিতে ও নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
প্রকাশিত ওই রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ করেছে বিএনপি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি গণস্বাস্থ্যের জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পথে যদি কোনো কুকুর ঘেউ ঘেউ করে তা নিয়ে মন্তব্য করার প্রয়োজনবোধ করি না। একজন বাংলাদেশী নাগরিক কানাডায় নাগরিকত্ব চেয়েছিল। দেশে ক্ষমতাসীনদের জুলুম-নির্যাতনে টিকতে না পেরেই হয়তো সে বিদেশে গিয়ে নাগরিকত্ব চেয়েছে। সে বিএনপি করে না, কোন দল করে সেটা জানি না। কারো বিদেশে নাগরিকত্ব চাওয়া আর বিএনপি এক জিনিস নয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এদেশের মাটি ও মানুষের দলটি কখনোই সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়নি। ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনে আগে যতগুলো জরীপ হয়েছে তাতে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। সে দলকে সম্পর্কে বিদেশের কোন আদালত কি মূল্যায়ন করলো তাতে দল এবং দেশের মানুষের কিছুই আসে যায় না। আসলে ক্ষমতাসীনরা বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আউল-ফাউল কথাবার্তা বলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ রিপোর্ট কতটুকু সত্য আমি জানি না। তবে যদি সত্যিও হয় সেটাও একজন ব্যক্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। সুতরাং ঢালাওভাবে বিএনপির মতো একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে নিয়ে কানাডার মতো একটি দেশের আদালতের এমন বক্তব্য দুঃখজনক। বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা একজন ন্যয়পরায়ণ, নিষ্ঠাবান মানুষ। তার গড়া দল দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে এবং একটি গণতান্ত্রিক দল। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রধান বিরোধী দলের সম্পর্কে ঢালাওভভাবে এমন মন্তব্য দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আশা করি বক্তব্য আসবে। তবে আমি ব্যক্তিতগভাবে মনে করি কানাডার ওই বিচারকের সামনে যেসব তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে তিনি হয়তো সেগুলোর আলোকে এই মন্তব্য করেছেন। যে ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন তিনি আদৌ বিএনপি করেন কি না তাও আমরা স্পষ্ট নই। তবে আদালত কিন্ত আওয়ামী লীগ সম্পর্কে একই ধরনের কথা বলেছেন। বিএনপির ভাইস- চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কানাডার রায় সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কানাডার যে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানকার যারা প্রসিকিউশন করেন, তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছে। সুতরাং শুধু বিএনপিকে দোষারোপ করার মানে হয় নাÑ এটাকে বিশ্বাস করলে, এটিও বিশ্বাস করতে হবে আওয়ামী লীগও সস্ত্রাসীদের দল। আমি বলতে চাই, কেউ যদি বিশ্বাস করে যে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন, তাহলে আওয়ামী লীগ এক ধাপ এগিয়ে আছে, আমাদের আগে আছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এটা সরকারের ‘চক্রান্তমূলক নাটকের’ অংশ। বলা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজনের আবেদনের কথা বলা হয়েছে। যিনি আশ্রয় চাইবেন, তিনি কি বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলবেন? বরং বলবেন, বাংলাদেশে তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হতে পারেন। ওই ব্যক্তি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হলে কোনো বিএনপির বিরুদ্ধে বলতে যাবেন? এটা একটা সাজানো নাটকের বিষয়। যেটা কানাডায় উপস্থাপন করেছে, ইমিগ্রেশন বিভাগকে এভাবে ভুল তথ্য তারা দিয়েছে, বানানো নাটকের ভুল তথ্য দিয়েছে এবং সেটা তারা কোর্টে নিয়ে গেছে। কানাডায় যে অনলাইন পত্রিকায় সংবাদটি এসেছে, সেটি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শওগাত আলী সাগরের। তারা কানাডায় বসে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও নানা ধরনের চক্রান্ত করছেন। এই রায়টি প্রকাশিত হয়েছে গত ২৫ জানুয়ারি। আর হঠাৎ করে বাংলাদেশে গতকাল এটি প্রচারিত হয়েছে, বিশেষত ক্ষমতাসীনদের গণমাধ্যমে।
অবশ্য জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আসম ফিরোজ বলেন, পত্রিকার অনেক খবর দেয়া যায়। কিন্তু কোনটি অসত্য, কোনটি সত্য তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।