Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লিবিয়ার ঘটনার জন্য পাশ্চাত্যের ক্ষমা চাওয়া ও জবাবদিহি করা উচিত

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম


আরটি : লিবিয়ার জনগণ এখনো দুর্দশার শিকার, কারণ পাশ্চাত্য শক্তিরা সেখানকার চলমান লড়াইয়ে এখনো ইন্ধন যোগানো অব্যাহত রেখেছে। লিবিয়ার নিহত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির জ্ঞাতি ভাই আহমেদ গাদ্দাফ আল-দাম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের ক্ষমা প্রার্থনা করা, জবাবদিহি করা ও লিবিয়াকে একা ছেড়ে দেয়া উচিত।
আরব বসন্তের ষষ্ঠ বার্ষিকীতে আরটি-র সাথে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লিবিয়াতে এখন কি ঘটছে তা সবার কাছে পরিষ্কারÑ সম্পূর্ণ ধ্বংস, লোকজন বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে, গণদুর্ভিক্ষ চলছে।  আমাদের দেশটি সম্পূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে, আমাদের লোকজন দুর্দশার মধ্যে নিপতিত।
আহমেদ বলেন, আরব বসন্তের এ বার্ষিকীতে সকল লিবীয়র কাছে আমাদের অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে, বিশেষ করে তাদের কাছে যাদের বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, যারা নির্যাতিত হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আমার দাবি যে, ২০১১ সালে যা ঘটেছে তার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও শীর্ষ বিশ^শক্তিগুলোকে ক্ষমা চাইতে হবে।
আজ শুক্রবার আরব বসন্ত শুরুর ষষ্ঠ বছর পূর্তি হচ্ছে। আরব বসন্ত মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় সহিংস ও অহিংস বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে দিয়েছিল।
এ বিপ্লবের জোয়ারে লিবিয়ায় গণঅসন্তোষ শুরু হয়। পরে মার্কিন সমর্থিত বোমা বর্ষণের ফলে দীর্ঘদিনের নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন ঘটে।
তখন থেকে লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্যাং ও উপদলের মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে যাদের মধ্যে আছে সন্ত্রাসবাদী গ্রুপ ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আরো আছে প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি সরকার তবরুকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি সরকার (জিএনএ) এবং ইসলামপন্থী গ্রুপগুলো কর্তৃক ত্রিপোলিভিত্তিক জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেস (জিএনএ)। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত এক চুক্তির অধীনে দু’ সরকার একটি ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়। তবে এখন পর্যন্ত দু’পক্ষ এক্ষত্রে অসংখ্য বাধা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গাদ্দাফ আল-দাম জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিমাদের কারণে যুদ্ধ আরো প্রবল হয়েছে। পাশ্চাত্যকে এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন, তাদের ভাষায় যুদ্ধ, লিবিয়ার ধ্বংস হচ্ছে ভুল। পাশ্চাত্য স্বীকার করেছে যে, তারা লিবিয়ায় একটি বিপ্লবী সরকার পতনের কারণ। প্রথমে তাদের সবাইকে ক্ষমা চাইতে হবে, তারপর তাদের কৃত ভুল সংশোধন করতে হবে। কিন্তু লিবীয় জনগণের দুর্ভোগ, বেজমেন্টে বাস করা, বাড়ি-ঘর থেকে পালাতে বাধ্য হওয়া, গত ছয় বছরে তার অবসান হয়নি। আজ এ নিয়ে কেউ কথা বলে না। যে কোনো বিচারেই লিবিয়ায় যা ঘটছে তা অপরাধ।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় লিবিয়াতে হস্তক্ষেপ করে শুধু ভুলই করছে না, এখন তাদের অবশ্যই অনধিকার চর্চা বন্ধ করে লিবিয়ার সংকট মোকাবেলার দায়িত্ব দেশটির উপর ছেড়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো লিবিয়ার সংঘাত ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে, তারা এ থেকে সরে যেতে চায় না। প্রতিদিন তারা তিউনিসিয়া, জেনেভায় সভা করছে। এগুলো আর কত হবে? আমরা শিশু নই। তিনি বলেন, আমার দৃষ্টিতে লিবিয়ার যুদ্ধ শুধু গাদ্দাফির ছেলে ও সাবেক বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাইফ আল-ইসলামের মতো যারা এখন কারাগারে আছেন তারাসহ দেশের সকল প্রতিদ্বন্দ্বী উপদলগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান হতে পারে।  
আহমেদ বলেন, লিবিয়াকে তার নিজের যুদ্ধ নিজেকেই মোকাবেলা করতে দেয়ার তার আহ্বান সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আসলে এ যুদ্ধের অবসান চায় না। তারা লিবিয়ার যুদ্ধকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছে।
তিনি বলেন, ১৯৮০-র দশকেই মুয়াম্মার গাদ্দাফি লিবিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দেন। আসলে এ ষড়যন্ত্র শুধু লিবিয়ার বিরুদ্ধে ছিল না, তা ছিল সকল মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন শুরু হয়। তারপর আসে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়ার ধ্বংস।   
গাদ্দাফ আল-দাম বলেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলো এ অঞ্চলের দেশগুলোকে বিভক্ত করতে এ অঞ্চলে নরক নামিয়ে আনে। তাতে শুধু লিবিয়া নয়, অন্যান্য দেশও বিপাকে পড়ে। তিনি বলেন, গাদ্দাফি ছিলেন এক বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব এবং তিনি ১৯৬৯ সালের বিপ্লবের মূল্যবোধ ও নীতি বহন করতেন। তার বিপ্লব ছিল মুসলিম উম্মাহ এবং গোটা আফ্রিকাকে ঐক্যবদ্ধ করা। কিন্তু তিনি পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করেন ও নিহত হন।
১৯৬৯ সালে সংঘটিত লিবিয়া বিপ্লব আল ফাতাহ বিপ্লব বা ১লা সেপ্টেম্বর বিপ্লব নামে পরিচিত। এ সামরিক অভ্যুত্থানে লিবিয়ার বাদশাহ ইদ্রিস নিহত হন। কর্নেল গাদ্দাফির নেতৃত্বে ফ্রি অফিসারস মুভমেন্ট বিপ্লবী সামরিক অফিসারদের একটি গ্রুপ এ অভ্যুত্থান ঘটায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ