Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অ্যাপারেল সামিটে ক্রেতা ফেরাতে তিন সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিটে’ ক্রেতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো হলো : গত দুই মাসে সাভার ও আশুলিয়ায় আন্দোলনরত যে দেড় হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী সমস্ত পাওনা পরিশোধ করা হবে। পাশাপাশি ওই শ্রমিকরা চাইলে নিজ নিজ কারখানায় কাজেও যোগ দিতে পারবেন। মালিকরা তাদের সেই সুযোগ দেবেন। ওই ঘটনায় যেসব শ্রমিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে, তাদের জামিন দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। একই ঘটনায় যেসব ট্রেড ইউনিয়নের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, সেই সব সংগঠনের মধ্যে রেজিস্টার্ড সংগঠনের কার্যালয়গুলো খুলে দেয়া হবে।
সিদ্ধান্তগুলো অবিলম্বে কার্যকর করা হচ্ছে বলে গতকাল বিকেলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। বিজিএমইএ ভবনে মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এসে ওই সিদ্ধান্তগুলো তিনি সাংবাদিকদের জানান। এ সময় ইন্ডাস্ট্রি অল-এর চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম আমিনসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেতা, কর্মকর্তা ও তৈরী পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আশা করছি, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশী ক্রেতাদের মনে যেসব প্রশ্ন বা সন্দেহ ছিল, তা দূর হবে। বিজিএমইএ আয়োজিত ঢাকা অ্যাপারেল সামিটে তারা অংশ নেবে।
শ্রমিক নেতা ও ইন্ডাস্ট্রি অল-এর চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম আমিন বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিট’ সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের স্বার্থে এর আগের দিন শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষে আয়োজিত ঢাকা অ্যাপারেল ওয়ার্কার্স সামিট কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) আয়োজিত ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিট’ থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিয়েছে তৈরী পোশাকের শীর্ষ পাঁচ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এইচ অ্যান্ড এম ইন্ডিটেক্স (জারা), সি অ্যান্ড এ, নেক্সট ও চিবো ব্র্যান্ড ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিট’-এ যোগ দিচ্ছে না। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন বলছে, নেতৃস্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলো ঢাকা অ্যাপারেল সামিট বয়কটের মাধ্যমে বিজিএমইএ এবং বাংলাদেশ সরকারকে বার্তা দিয়েছে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার এবং মামলা-হয়রানি-আটক বন্ধের তাগিদ দিয়েছে তারা।
এমন পরিস্থিতিতেই সরকারের উদ্যোগে মালিক, শ্রমিকদের নিয়ে এমন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ নেয় শ্রম মন্ত্রণালয়। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঢাকা অ্যাপারেল সামিটের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ গত দুই মাসে বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনের পর প্রায় দেড় হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেছে বলে দাবি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের। অনেক নেতাকর্মীকে আটক করাসহ বেশ কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়নের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, ‘ওই সব বিক্ষোভ ছিল বেআইনি এবং আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি।’ তিনি আরো বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ওই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, শ্রমিক অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের জোট ইথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ এবং ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন নিজেদের ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর অ্যাপারেল সামিট বর্জনের কথা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এর ফলে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ বাড়বে। ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন জানিয়েছে, এইচ অ্যান্ড এম, ইন্ডিটেক্স (জারা), সি অ্যান্ড এ, নেক্সট ও চিবোর মতো বড় ব্র্যান্ড নিজেদের প্রায় সব কাপড়ই বাংলাদেশে উৎপাদন করে। তাদের অ্যাপারেল সামিট বর্জন করাটা নজিরবিহীন ঘটনা। ব্র্যান্ডগুলো প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কয়েক শ’ কোটি ডলারের পোশাক কেনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ