পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আনন্দ কুমার, মাভাক : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কর্তৃক ২০১৩ সালে সূচিত বেল্ট ও রোড উদ্যোগ, যা ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড (ওবর) নামেও পরিচিত, সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে উচ্চাকাক্সক্ষী প্রকল্পগুলোর অন্যতম। স্থল ও সমুদ্র উভয়ভিত্তিক এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য এশিয়াকে ইউরোপ ও আফ্রিকার সাথে যুক্ত করা। চীন এ প্রকল্পকে তার উন্নয়ন লক্ষ্যকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে দাবি করলেও ভারতের বিশ^াস যে এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্দেশ্য রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ওবরের দু’টি উপাদান রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে চীন- পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) পাকিস্তানের ভিতর দিয়ে গেছে এবং পশ্চিম চীনের কাশগড়কে বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দরের সাথে যুক্ত করেছে। চীন এ অংশটিকে ওবরের প্রথম অধ্যায় বলে বিবেচনা করে। উল্লেখ্য, গোয়াদর বন্দর উদ্বোধনের ফলে এ অংশটি সচল হয়েছে।
এ উদ্যোগের দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতের সাথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে যুক্ত করা। বিসিআইএমেরও একটি সমুদ্র খাত উপাদান আছে যার মধ্যে রয়েছে অন্যান্য স্থানসহ শ্রীলংকায় বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ চীনের বেল্ট ও রোড উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
ওবরের অংশটি আংশিকভাবে সচল। শ্রীলংকার বন্দর সচল, কিন্তু বিসিআইএম করিডোরে অনুরূপ ধরনের অগ্রগতি নেই। এ অংশটিকে গতিশীলতা দিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় চীন বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করে। বাইরের কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশের পাওয়া এটাই সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ। বাংলাদেশ ও চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ১৩.৬ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তিও করে।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভারতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে এ ঘটনা ভারতের জন্য খারাপ নাও হতে পারে। চীনের সাথে বৃহত্তর সম্পর্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস ভারতের স্বার্থরক্ষা করবে। এর প্রভাব হবে দ্বিমুখী। প্রথমত, এটা ভারতে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী প্রবেশ হ্রাস করবে যা ভারতের জন্য এক বড় সমস্যা। ভারত সরকারের সর্বশেষ হিসাবে সে দেশে প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশী অবৈধভাবে বাস করছে বলে দাবি করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশীদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেশে মৌলবাদ হ্রাস করবে। বাংলাদেশের উপর ওবরের ইপ্সিত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরবর্তীতে ভারতের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।
বর্তমানে ভারত ও চীন উভয়েই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যখন তার গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে পাশ্চাত্যের চাপের সম্মুখীন হয় তখন ভারতের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন পায়, অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদারের জন্য চীনের দিকে তাকায়।
চীন অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে ওবরের উদ্দেশ্যকে ভালোভাবেই যুক্ত করতে পেরেছে। দেশটি অবকাঠামো সৃষ্টির জন্য ওবরের উদ্দেশ্যের সাথে এ সব দেশের ঘাটতিকে সুন্দরভাবে সমন্বিত করেছে যা বাণিজ্য ও সংযোগকে জোরদার করবে। তা চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্বৃত্ত সামর্থ ব্যবহারেও সক্ষম করেছে।
তবে সিপিইসি সম্পর্কে একই কথা বলা যায় না। দু’ কারণে এ উদ্বেগ। প্রথম, সিপিইসি গেছে গিলগিট-বাল্টিস্তানের ভেতর দিয়ে। এটি এক বিরোধিত অঞ্চল যা ভারত তার ভূখ-ের অংশ বলে দাবি করা অব্যাহত রেখেছে। দ্বিতীয়, ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈরি স্বভাবের কারণে উদ্বিগ্ন। চীন যেখানে বলছে গোয়াদর একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প, অতীতে পাকিস্তান এটিকে একটি নৌঘাঁটিতে রূপান্তর এবং ভারতের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কাজে ব্যবহারের আগ্রহ প্রদর্শন করেছে।
ওবর প্রকল্প মূলত বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনা অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় তা শুধু ভারতই নয়, অন্য বহুদেশের জন্যই কিছুটা কৌশলগত প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা ভারতে খুব বেশী উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি এ জন্য যে বাংলাদেশে একটি ভারতবান্ধব সরকার রয়েছে। দেশের অগ্রগতির স্বার্থে তার ভারত ও চীন উভয়কেই প্রয়োজন। ভারতীয় নীতি-নির্ধারকরা সিপিইসিকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। তা গিলগিট-বাল্টিস্তানে কোনো বন্ধুসুলভ সমাধানে উপনীত হতে দেয়নি। বাস্তবে যে কোনো চীনা অর্থনৈতিক উদ্যোগ থেকে সর্বোচ্চ সুফল পেতে হলে পাকিস্তানেরও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এটা শুধু তখনি সম্ভব যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে এবং তার এজেন্ডায় ভারতের প্রতি বৈরিতা না থাকে।
* নিবন্ধকার আনন্দ কুমার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস (আইডিএসএ)-এর সহযোগী ফেলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।