পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আ’লীগ আয়োজিত শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা : একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে খালেদা জিয়ার শহীদ বেদীতে উঠে যাওয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনায় তিনি (খালেদা) শহীদ দিবসের মর্যাদা নষ্ট করেছেন। মধ্যরাতে যাওয়ায় হয়তো ‘বেতাল’ হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। যদি সঠিক জায়গাটা চিনে না থাকেন তাহলে তার সাঙ্গপাঙ্গরা কী করেছেন, তারাও কি তাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যাবে না, নাকি তারাও বেতালা ছিলেন। এভাবে গিয়ে অপকর্ম করে আসল। শহীদ দিবসের মর্যাদা নষ্ট করে দিয়ে আসল।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের ভাষার মর্যাদা এনে দিয়েছেন, যে জায়গাটা আমরা পবিত্র মনে করি, সেখানে তিনি সদলবলে উঠে গেলেন। তিনি তাহলে ফুল দিলেন কোথায়? নাকি সেটা নিজের পায়ের কাছে নিয়ে আসলেন, সেটাই প্রশ্ন? তিনি বলেন, যেখানে মহামান্য প্রেসিডেন্ট ফুল দিয়েছেন, আমি ফুল দিয়েছি, মাননীয় স্পিকার ফুল দিয়েছেন, আমরা সবাই ফুল দিয়েছি, সম্মান করেছি, সেখানে তিনি উঠে গেছেন। এখন আমরা কী মনে করব। যদিও এটা বলা ঠিক না, কিন্তু সেখানে সিসি ক্যামেরা আছে, সাংবাদিকদের ক্যামেরা আছে, তার দলের লোকজন ছবি তুলেছে, সোস্যাল মিডিয়ায় সব দেখা গেছে। তিনি (খালেদা) না হয় বেতালা ছিলেন, মধ্যরাতে গেছেন, সঠিক জায়গাটি না চিনে থাকতে পারেন। কিন্তু তার সাঙ্গপাঙ্গরা কী করছিলেন। তারা কি তাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যাবে না? তারা কি তার (খালেদা) মতো বেতালা ছিলেন?
একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ইতিহাস ধ্বংস করে দিতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশেও বারবার এ রকম চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তা বারবার রুখে দিয়েছে এ দেশের মানুষ। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরেন, যেখানে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এ ধরনের নানা তৎপরতার কথা উঠে আসে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। পাকিস্তানিরা এটা না মানতে পারে, কিন্তু দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত নেতা, যিনি দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যদিও তারা বলেন তিনবার, তিনি কী করে পাকিস্তানিদের মতো কথা বলেন।
৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সে সময় মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। মানুষ পুড়িয়ে মারাই নাকি তাদের আন্দোলন। তাহলে তাদের কাছে ভাষা-সংস্কৃতি-ইতিহাসের কী মূল্য আছে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা চায়নি বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াক। তারা ভিক্ষুক বানিয়ে রাখতে চেয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করি আমরা। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তার দলের নেতাকর্মীসহ সবাইকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা ও বাঙালির ‘সত্যিকার’ ইতিহাস লেখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ প্রসঙ্গে ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য তুলে ধরেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) ওই সময় যে কথাটি বলেছিলেন, আমার মনে হয় তা এখনো এই মুহূর্তে আমাদের জন্য প্রযোজ্য। কারণ, জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনে তিনি যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি যে সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন; ইতিহাস থেকে তা মুছে ফেলা হয়েছে।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অস্বীকার করার প্রবণতা রয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, উনি (বঙ্গবন্ধু) তো ভাষা আন্দোলনের সময় কারাগারে ছিলেন, উনি কিসের নেতৃত্ব দিলেন- একথাও আমাদের শুনতে হয়েছে। যারা পাকিপ্রেমিক তারা তো ইতিহাস বিকৃত করেই। আমাদের মধ্যেও অনেকে ইতিহাস বিকৃত করেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতাও বিকৃতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাশ্মশানের জায়গায় লেখা হয় গোরস্থান। সকালে উঠে আমি মনে মনে বলি’ এর স্থলে লেখা হয় ‘ফজরে উঠে আমি দেলে দেলে বলি।
এগুলো আমরা নিজেরাই জানি। আমরা এর ভুক্তভোগী। বরীন্দ্রনাথ তো এক সময় বন্ধই করে দিলো। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া যাবে না, রবীন্দ্রনাথ পড়া যাবে না। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলার প্রবণতা ত্যাগ করার কথা বলেন। বাংলা বললে ঠিকমতো বাংলা বলতে হবে। ইংরেজি ধ্বনি দিয়ে বাংলা বলা; এটা পরিহার করতে হবে।
শান্তিপূর্ণভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মেরিনা জাহান বক্তব্য দেন। ‘তোমার মুক্তির জন্য হে সুন্দর’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন নির্মলেন্দু গুণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।