পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : গত মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর আলোকবালীর চরে এক ভয়াবহ পারিবারিক হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। ঘুম পাড়ানোর কথা বলে মায়ের কাছ থেকে ডেকে নিয়ে ইয়াছিন (১২), মরিয়ম (৬) ও মার্জিয়া (৪) নামে ছোট ৩ ভাই-বোনকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে বড় ভাই আতিকুলকে কুপিয়ে আহত করেছে রুবেল নামে মেঝো ভাই। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারা চরাঞ্চলে এক শোকাবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এক ধরনের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গতকাল বুধবার সকালে এলাকার লোকজন রুবেলকে আটক করে নরসিংদী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। কেন এত বড় ভয়াবহ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে তার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। লোকজনের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকারী রুবেল কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। তবে সে বলেছে, তার বড় ভাই আতিকুল অবিবাহিত। সে তার বউ দেখার জন্য রুবেলকে যেতে বলেছিল। রুবেল যেতে অস্বীকার করেছে। রুবেলের ধারণা তার বড় ভাই বিয়ে করার পর বড় ভাইয়ের বউ কোন কাজ করবে না। তার বউকেই সংসারের সকল কাজকর্ম করতে হবে।
তাছাড়া আতিকুল ছোট ভাই রুবেলকে তাবিজ কবজ করবে বলেও জানিয়েছে। ছোট ৩ ভাই-বোনকে হত্যার কারণ সম্পর্কে রুবেল বলেছে এটা তার ভুল হয়েছে। তারা কোন পাপ করেনি। তাদের কোন অন্যায় নেই। কি কারণে হত্যা করেছে তা সে বলেনি।
জানা গেছে, নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী পূর্বপাড়ার আবুল কালামের স্ত্রী কুলসুম, বড় ছেলে আতিকুল, মেঝো ছেলে রুবেল, ছোট ছেলে ইয়াছিন, ছোট দুই মেয়ে মরিয়ম ও মার্জিয়াকে নিয়ে তাদের সংসার। গৃহকর্তা আবুল কালাম বাঁশবাহী নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তার সাথে নৌকায় মাঝির কাজ করে মেঝো ছেলে ঘাতক রুবেল। পিতার সাথে কাজ করে বিধায় সে অল্প বয়সেই বিয়ে করে ফেলে। বড় ভাই আতিকুল একজন মুফতি। বাড়ীর পার্শ্ববর্তী একটি মাদ্রাসায় চাকরি করে। ছোট ভাই ইয়াছিন একই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। পাড়া প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, রুবেল তার পিতার সাথে কাজ করার পর যে পারিশ্রমিক পায় তার সমস্ত টাকাই তার পিতা নিয়ে যায়। আর সংসারে বড় ভাই আতিকুলের কতৃত্ব বেশী। এতে প্রায়ই এসব ঘটনা নিয়ে সংসারে রাগারাগী হতো। মঙ্গলবার এশার নামাজের পর ঘাতক রুবেল তার মায়ের কাছে গিয়ে বলে যে, তার ছোট বোন মার্জিয়া সেদিন রাতে তার সাথে ঘুমাবে। এ কথা বলে মার্জিয়াকে ডেকে ঘরে নিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখে। এরপর একই কথা বলে মেঝো বোন মরিয়মকে ডেকে তার ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকেও সে ঠা-া মাথায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখে। এরপর সে যায় মাদ্রাসায়। সেখানে গিয়ে তার ছোট ভাই ইয়াছিনকে ডেকে বাড়ীতে নিয়ে আসে। তাকে একটি ঘরে নিয়ে একই কায়দায় হত্যা করে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখে। পরে ঘরের লাইট নিভিয়ে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রুবেল মাদ্রাসায় গিয়ে তার বড় ভাই আতিকুলকে বলে যে তার মা অসুস্থ, তাড়াতাড়ি বাড়ী চল। রুবেলের কথায় বড় ভাই আতিকুল বাড়ীর পথে রওয়ানা দেয়। আতিকুল আগে, পিছনে থাকে রুবেল। পথিমধ্যে এসে রাস্তার পাশে রেখে যাওয়া একটি দা দিয়ে রুবেল হঠাৎ তার বড় ভাই আতিকুলকে পেছন দিক থেকে কোপাতে থাকে। এ অবস্থায় আতিকুল মারাত্মক রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চিৎকার করতে থাকলে আশপাশের লোকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আতিকুলকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সে এখন নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ খবর আতিকুলের মায়ের কাছে পৌঁছলে মা কুলসুম বেগম ঘরে গিয়ে দেখে তার ছোট তিন ছেলে-মেয়ে ইয়াছিন, মরিয়ম ও মার্জিয়াকে হত্যা করে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ঘাতক রুবেল পালিয়ে যায়। পরদিন গ্রামের লোকজন তাকে পলাতক অবস্থা থেকে বের করে আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ খবর পেয়ে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।
লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।