Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সোলার চার্জিং স্টেশন

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইজিবাইকের কবল থেকে বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয় রোধে সরকারের পরিকল্পনা
বিশেষ সংবাদদাতা : বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে সরকার দেশের বিভাগীয় শহর ও পর্যায়ক্রমে জেলা শহরগুলোতে সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে এসব সোলার চার্জার চলবে এবং এখান থেকে ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ করা হবে। ইতোমধ্যেই কেরানীগঞ্জে একটি স্টেশনের উদ্বোধন করা হয়েছে। আরো ৩টি স্টেশন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো শুরু হয়েছে। এগুলো খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়, দেশে কী পরিমাণ ইজিবাইক রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দেশের প্রতিটি এলাকা ইজিবাইকে ছেয়ে গেছে। এসব ইজিবাইক প্রতিদিন ব্যাটারি চার্জের মাধ্যমে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে তারও কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে ধারণা করা যায়, দেশে এখন ৫ লাখেরও বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে। এসব ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জের বিপরীতে প্রায় ৯শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়।
ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জের নামে বিদ্যুতের অপচয় রোধে সরকার দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে এবং পর্যায়ক্রমে জেলা শহরগুলোতে সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় সংস্থা বা কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে এসব চার্জিং স্টেশন স্থাপন করবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ৩টি, ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১টি, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) ১ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ১টি সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করবে।
ইতোমধ্যেই আরইবি কেরানীগঞ্জে ইজিবাইকের চার্জ স্টেশন করেছে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সেটি উদ্বোধন করা হয়। কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরে মেসার্স সানি ফিলিং স্টেশনের ছাদে এক হাজার ৪৩০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে ২১ কিলোওয়াট ক্ষমতার সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। এটি সরকারের একটি পাইলট প্রকল্প। এ প্রকল্পে নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই স্টেশনে একই সময়ে ২০/২৫টি ইজিবাইক চার্জ দেয়া যায়। ইজিবাইক প্রতিবার চার্জ দিতে ৫০ টাকা ও রিকশা ব্যাটারি চার্জ দিতে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া পিডিবি চট্টগ্রামে ২টি ও সিলেটে একটি স্টেশন স্থাপন করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বিদ্যুৎ ভবনে ২০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা ক্ষমতার দুটি স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়েছে। অন্যদিকে সিলেটে শেখঘাট এলাকায় বিপিডিবির কার্যালয় প্রাঙ্গণে ২০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা ক্ষমতার একটি সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনটি স্টেশনই পরীক্ষাধীন অবস্থায় আছে।
ডেসকো ঢাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি সোলার চার্জিং স্টেশন করবে। এর মধ্যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে সমীক্ষার কাজ চলছে। ডিপিডিসিও ১টি স্টেশন করবে। তারা সবেমাত্র প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। এখন সমীক্ষার কাজ চলছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি না থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা ইজিবাইকে ছেয়ে গেছে। এসব ইজিবাইক ও অটোরিকশা চোরাই লাইনের মাধ্যমে চার্জ করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১১ কেভি লাইন থেকে সরাসরি সংযোগ নিয়ে ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয়। ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। একটি ইজিবাইকের পাঁচটি ব্যাটারি ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা ধরে এবং অটোরিকশার চারটি ব্যাটারি চার্জ দিতে হয় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এতে বিদ্যুৎ চুরি যেমন হচ্ছে তেমনি বিদ্যুতের অপচয়ও হচ্ছে।
স¤প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, টাইম লাইন ঠিক করে প্রকল্প হাতে নেয়া দরকার। বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে চুক্তি বাতিল করে দিতে হবে। অন্যথায় জরিমানা গুনতে হবে ঠিকাদারকে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে গ্রিডে বিদ্যুৎ দেয়ার ক্ষেত্রে মেয়রদেরকেও যুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য উৎস হতে ৪৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম বর্তমানে ব্যবহƒত হচ্ছে। সোলার রুফটপ, সোলার ইরিগেশন, সোলার মিনি গ্রিড, সোলার চার্জিং স্টেশন এবং বায়োগ্যাস বা বায়োম্যাশ প্রসারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছেÑ এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাময় উৎসকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। তারই অংশ হিসেবে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে ৭০০ মেগাওয়াট এবং বায়ু বিদ্যুৎ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ