পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে : ২০ ফেব্রæয়ারী সোমবার বেলা ২টা। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের তিনতলা ভবনের দোতলার সাধারণ শাখার কক্ষে ভিড়। যুবলীগ নেতারা কেউবা চেয়ারে বসে, আবার কেউবা গোল হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। এমন সময় জনৈক সোনা নামের এক ব্যক্তির আগমন সেখানে। তার আগমনের কারণ জানতে চাইলেন যুবলীগ নেতারা। তিনি জানান, এসেছেন হাট-বাজার ইজারার দরপত্র কিনতে। তাকে দরপত্র কিনতে নিষেধ করলেন যুবলীগ কর্মী হান্নান।
হান্নান ঐ ব্যক্তিকে শহর আওয়ামী লীগের এক নেতার নাম বলে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। কোন হুমকি-ধামকি না শুনে ঠিকাদার সোনা দরপত্র কিনতে গেলে সদর থানা যুবলীগের আহŸায়ক আবু তৈয়ব বাদশাকে মোবাইলে ধরিয়ে দেন ক্যাডার হান্নান। অপর প্রান্ত থেকে বাদশা ঠিকাদারকে দরপত্র কিনতে নিষেধ করেন। এভাবেই জেলা প্রশাসনের দপ্তরে প্রহরা বসিয়ে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেছেন যুবলীগ ক্যাডাররা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ও মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ যে সকল দপ্তরে হাটবাজার ইজারার সিডিউল বিক্রি হচ্ছে সব স্থানে একই চিত্র। দরপত্র ক্রয় করতে আসা সোনা জানান, এটা অন্যায়। জেলা প্রশাসনের কক্ষেই যদি এমন আচরণ করা হয় তাহলে আমরা নিরাপদ কোথায়?
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সরকারী হাট-বাজার সমূহের ব্যবস্থাপনা ও ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলার অধীনে হাট-বাজার ইজারার দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। সদর উপজেলায় বারটি লটে ২৯টি হাট-বাজার ও মিরপুর উপজেলায় এগারটি লটে ৩২টি হাট-বাজার আগামী এক বছরের জন্য ইজারা প্রদান করা হবে। বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিলো দরপত্র ক্রয়ের শেষ সময়।
শেষ দিন বুধবার সকালে আবারো জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালেক্টরেটর ভবনের সামনে মটর সাইকেল নিয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন যুবলীগ ক্যাডার বসে পাহারা দিচ্ছেন। সোমবারের ন্যায় একই ধরনের ভিড় সাধারণ শাখায়। চরিত্র সেই যুবলীগ নেতারা। অফিস সহকারী মামুনের টেবিলের সামনে বসে আছেন কুষ্টিয়া সদরের যুবলীগ ক্যাডার হান্নান। যুবলীগ ক্যাডার হান্নান চেয়ারে বসে নির্ধারণ করছেন কারা দরপত্র কিনতে পারবেন আর কারা পারবেন না। এদিকে সোমবার সাধারণ শাখার সামনে পুলিশ না দেখা গেলেও বুধবার পুলিশ পাহারা ছিলো।
এদিকে সকাল থেকেই মিরপুর উপজেলার দরপত্র নেয়ার জন্য সাধারণ শাখায় অবস্থান করছেন আকরামসহ কয়েকজন। অফিস থেকে তাদের জানানো হচ্ছে, দরপত্র শেষ। এর মধ্যে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে গেলেন অনেকেই। দুপুর তিনটার সময় জেলা প্রশাসক জহির রায়হান উপস্থিত হন সাধারণ শাখা কক্ষে। দরপত্র নেই শুনে ফোন করেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট। ফোনে কথা শেষ করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দরপত্র নিয়ে কুষ্টিয়ায় পিওন রওয়ানা হয়েছেন। শেষ সময় পাঁচটার একঘন্টা আগে মিরপুর নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসের পিওন ১০টি দরপত্র নিয়ে আসেন। সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করা আকরাম বেলা সাড়ে চারটার দিকে দরপত্র হাতে পান। দরপত্র নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে যুবলীগ ক্যাডাররা তার পিছু নেন।
তিনি জানান, সদর ও মিরপুরের পৃথক পাঁচটি স্থানে দরপত্র বিক্রি হয় সোমবার। কিন্তু শেষদিন বুধবার সকাল থেকেই বলা হয় দরপত্র শেষ। আসলে প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব অন্যায় করছেন, রাজনৈতিক নেতারা।
জেলা প্রশাসক চলে যেতেই আবারও একই চিত্র। সাধারণ শাখার ভিতরে গিয়ে দেখা যায় ও মিরপুর উপজেলা যুবলীগ নেতা ওয়াহেদ জোয়াদ্দার নেতৃত্বে ৭/৮জন ক্যাডার কক্ষে অবস্থান করছেন। তারা মিরপুর থেকে আসা দশটি দরপত্র ক্রয় করতে এসেছেন।
নাম প্রকাশে করতে রাজী নন দরপত্র ক্রয় করতে ইচ্ছুক এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, সকাল থেকে শেষ সময় পর্যন্ত কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলার হাট-বাজার ইজারার দরপত্র কিনতে পারেননি সাধারণ ঠিকাদাররা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পছন্দের লোক ছাড়া কাউকে দরপত্র ক্রয় করতে দেননি স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডাররা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জহির রায়হান বলেন, বুধবার দরপত্র বিক্রি শেষ হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দরপত্র জমা দিতে হবে। কোন ক্ষেত্রে যদি অনিয়ম হয় তাহলে পুনরায় টেন্ডার করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।