Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের নতুন বিতাড়ণ আইন আরো ব্যাপক হারে বহিষ্কার ঘটাবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি নিউইয়র্ক টাইমস : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো আগ্রাসীভাবে তার দেশের অভিবাসন আইন বলবত করার জন্য তার প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে গুরুতর অপরাধ করুক আর না করুক যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবৈধ লোকদের খুঁজে বের করা, গ্রেফতার ও বিতাড়ণে ফেডারেল সরকারের পূর্ণ শক্তির প্রয়োগ ঘটবে।
মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রকাশিত দলিলে প্রেসিডেন্টের ব্যাপক মাত্রার উদ্দেশের প্রকাশ ঘটেছে যাতে রয়েছেঃ অভিবাসীদের অপরাধের প্রচার, আইন বলবতকারী হিসেবে স্থানীয় পুলিশ অফিসারদের তালিকাভুক্ত করা, অভিবাসীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার বঞ্চিত করা, নয়া আটক কেন্দ্র স্থাপন, আশ্রয় প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বিতাড়ণ দ্রæততর করা।
নয়া বলবতকরণ নীতিতে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারকালে দেয়া ভীতিকর বক্তব্যের বাস্তবায়ন রয়েছে। এতে বিদেশী অপরাধীদের সংজ্ঞার ব্যাপকায়ন করা হয়েছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে যে এ ধরনের অননুমোদিত অভিবাসীরা নিয়মিতভাবে আমেরিকানদের ঘটনার শিকার করছে, আইনের শাসনকে উপেক্ষা এবং গোটা যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী জনসম্প্রদায়ের লোকদের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। তবে ট্রাম্প যাই বলুন না কেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে দেশীয় আমেরিকানদের তুলনায় অভিবাসীদের মধ্যে অপরাধের হার কম। সব মিলিয়ে দেখলে ট্রাম্পের নতুন নীতি হচ্ছে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জর্জ ডবিøউ. বুশ এবং তাদের পূর্বসূরীদের অধিকতর সংযত প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান যারা কংগ্রেসে পাশকৃত আইনের প্রয়োগের বেলায় আর্থিক, লজিস্টিক্যাল ও মানবিক সীমার সাথে দেশের সীমান্ত রক্ষার একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী জন এফ. কেলি মঙ্গলবার প্রকাশিত দু’টি স্মারকের একটিতে বলেন, এ সকল সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ পরিমাণ বাস্তব ব্যবহার দ্বারা আমাদের অভিবাসন আইনের সবচেয়ে ভালো ও বিশ^স্ত বাস্তবায়ন অর্জিত হয়েছে। তদনুযায়ী দফতরের কর্মচারীরা এ কর্তৃপক্ষের পূর্ণ ব্যবহার করবেন।
এ পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক প্রভাব এখানো পুরোপুরি জানা যায়নি। অভিবাসীদের পক্ষের সমর্থকরা মঙ্গলবার বলেন যে নতুন সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও বলবতকরণ নির্দেশনা এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে যা এদেশে বসবাসকারী অবৈধ লোকদের ছায়ার আরো গভীরে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে।
প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, নতুন নীতির কোনো কোনোটিÑ যেমন মধ্য আমেরিকা থেকে অননুমোদিত সীমান্ত অতিক্রমকারীদের বিতাড়ণ শুনানির অপেক্ষমাণ অবস্থায় মেক্সিকো পাঠানোর বিষয়Ñ কার্যকর হতে কয়েক মাস লেগে যেতে ও সুযোগ সীমিত হতে পারে।
আপাতত যাদেরকে শিশু অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়েছিল সেই তথাকথিত স্বপ্নদর্শীরা কোনো অপরাধ না করা পর্যন্ত তাদের টার্গেট করা হবে না।
ট্রাম্প এখন পর্যন্ত বলেননি যে নতুন হাজার হাজার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এজেন্ট, অননুমোদিত অভিবাসীদের আটক রাখার জন্য আটক কেন্দ্রের নেটওয়ার্ক ও মেক্সিকোর সমগ্র দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে দেয়াল তোলার জন্য প্রয়োজনীয় শত শত কোটি ডলার তিনি কোথায় পাবেন।
বিচার বিভাগ হচ্ছে নতুন রণাঙ্গনঃ আইনজীবীদের একটি গ্রæপ তাদের মক্কেলদের এদেশে পাবার জন্য জড়ো হয়েছে, পাশাপাশি তারা ট্রাম্পের অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
তবে রাজনৈতিকভাবে মঙ্গলবারে কেলির পদক্ষেপ একটি মূল বিষয়ে প্রেসিডেন্টের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। যারা এ দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে চাকরি কেড়ে নেয়ার জন্য অবৈধ অভিবাসীদের দায়ী করছে তারা ঘৃণ্য অপরাধ করছে এবং ফেডারেল, অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকারের উপর আর্থিক দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এবং এ পরিবর্তনের কারণে দেশের অবৈধ লাখ লাখ অভিবাসী এখন অনেক বেশী মাত্রায় আবিষ্কৃত, প্রক্রিয়াধীন ও বিতাড়ণের সম্মুখীন। নিষিদ্ধ অভিবাসন সমর্থক গবেষণা কেন্দ্র সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক মার্ক ক্রিকোরিয়ান বলেন, বার্তা হচ্ছে: অভিবাসন আইন আলোচনায় ফিরে এসেছে যা বোঝাচ্ছে যে অভিবাসন আইন লংঘন আর গৌণ অপরাধ নয়।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সিন স্পাইসার মঙ্গলবার বলেন, প্রেসিডেন্ট দেশের অভিবাসন আইন বলবতকারীদের শৃঙ্খল অপসারণ করতে চান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নতুন নীতি হচ্ছে এটা স্পষ্ট করার জন্য যে গুরুত্ব আরোপ করা যে ১ নং অগ্রাধিকার হচ্ছে যে আমাদের দেশের প্রতি যেসব লোক হুমকি তাদের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া।
ওবামা প্রশাসনের আমলে এ নীতি বজায় ছিল যাতে এজেন্টদের নির্দেশ দেয়া ছিল যে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিতাড়ণযোগ্য। বর্তমানে অভিবাসন এজেন্ট, কাস্টম অফিসার ও সীমান্ত টহল এজেন্টদের দেশে অবৈধভাবে প্রবেশকারী যে কোনো ব্যক্তিকে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর প্রকাশিত ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস শিরোনাম ব্যবহৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নির্বাহী আদেশের আওতায় আইসিই সম্ভাব্য বলবতকরণকালে বিদেশী অপসারণে কোনো শ্রেণি বা পর্যায় অব্যাহতি পাবে না। অভিবাসন আইন লংঘনকারী সকলেই অভিবাসন গ্রেফতার, আটক এবং চূড়ান্ত নির্দেশে অপসারণযোগ্য হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপসারিত হবে।
এ নীতিতে দ্রæত অপসারণ করার জন্যও আহŸান জানানো হয়েছে যা সীমান্ত টহল এবং অভিবাসন ও কাস্টমস বলবতকরণ এজেন্টদেরকে আরো মানুষ বিতাড়ণে সাহায্য করবে। ওবামা প্রশাসনের অধীনে সীমান্তের ১শ’ মাইলের মধ্যে ১৪ দিনের বেশী না অবস্থান না করা লোকদের দ্রæত অপসারণেই শুধু ব্যবহার করা হত। এখন দেশে দু’বছরের বেশী অবস্থান করা লোকরাও এর আওতায় পড়বে যেখানেই তারা থাক না কেন।
বলবতকরণ অগ্রাধিকারে পরিবর্তনের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ বৃদ্ধি দরকার হবে। দেশে আনুমানিক ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ লোক রয়েছে। সরকার দীর্ঘদিন তাদের ব্যাপারে নজর দেয়ার ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব না দেয়ায় এ ক্ষেত্রে জনবল ও অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ কম।
মঙ্গলবার প্রকাশিত তথাকথিত নির্দেশনা দলিলে হোমল্যান্ড ও সিকিউরিটি দপ্তরকে ১০ হাজার কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এজেন্ট নিয়োগ, আটক কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসীদের দ্বারা নিহত পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে ইমিগ্রেশন ও কাস্টম এনফোর্সমেন্ট-এর মধ্যে একটি অফিস খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে সমাবেশে বক্তৃতা করার জন্য ট্রাম্পের কয়েকজন আত্মীয় ছিলেন এবং গতমাসে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরে অভিবাসন বিষয়ে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার সময় কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
নির্দেশনাগুলোতে সীমান্ত টহলের জনক সংস্থা কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশনের পাশাপাশি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস প্রটেকশন্সকে একটি কর্মসূচি পুনরায় চালুর নির্দেশ দেয়া হয় যাতে বিতাড়ণ কাজে সাহায্যের জন্য স্থানীয় পুলিশ অফিসার ও শেরিফের ডেপুটি নিয়োগ করা যাবে এবং তারা কার্যত অভিবাসন এজেন্ট হিসেবে কাজ করবেন। ২৮৭ (জি) কর্মসূচি নামের এ উদ্যোগটি ওবামা প্রশাসনের আমলে গুরুত্ব হারায়।
এ কর্মসূচি বহু অঙ্গরাজ্য ও কয়েক ডজন তথাকথিত আশ্রয়স্থল শহরের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় যারা অবৈধ বিদেশীদের আটক করতে তাদের আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
নতুন নির্দেশনার আওতায় সংস্থাটি যে সকল লোক আমেরিকান নয় বা গ্রীন কার্ডধারী নয় তাদের আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা দেবে না। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বুশ প্রশাসনের শেষ দিনগুলোতে প্রতিষ্ঠিত নীতিতে অনাবাসীদের ব্যাপারে সংগৃহীত তথ্যের জন্য কিছু আইনি সুরক্ষা প্রদান করা হয়।
অভিবাসন সমর্থকরা বলেন, এটা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের এজেন্টদের জন্য অবৈধ অভিবাসীদের চিকিৎসা, আইনি ও অন্যান্য তথ্য লাভের দরজা খুলে দিতে পারে।
নিউইয়র্কে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে গবেষণা উপ-পরিচালক জাস্টিন মাজ্জোলা বলেন, এটা মূলত অভিবাসীদের কোনোভাবেই সাহায্য লাভের সব পথকে ধ্বংস করবে। দেখা যাচ্ছে, এর আওতায় নিউইয়র্ক সিটি তার অবৈধ অভিবাসীদের আইডি কার্ড কর্মসূচির জন্য যে তথ্য সংগ্রহ করবে তা প্রকাশের জন্য সহজলভ্য হবে।
নতুন নীতির লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে অননুমোদিত অভিবাসীরা যারা যারা তাদের শিশুদের এ দেশে পাচার করতে চায় যেমনটি ঘটে মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর শিশুদের ক্ষেত্রে যারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বাবা-মার সাথে মিলিত হতে চায়। নতুন নির্দেশনার আওতায় এ ধরনের পিতা-মাতারা চোরাচালান বা মানব পাচারের জন্য বিতাড়ণ বা বিচারের সম্মুখীন হতে পারে।
মঙ্গলবার সকালে সিনিয়র হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন যে নির্দেশনাগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে কংগ্রেস ইতোমধ্যে অবৈধ অভিবাসন দমনে দপ্তরকে যে বলবতকরণ পন্থাগুলো দিয়েছে সেগুলোর পূর্ণ ব্যবহার করা। কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেন, দপ্তর অধিকতর আগ্রাসী ব্যবস্থার জন্য লজিস্টিক ও আইনগত বিধি চূড়ান্ত করার পাশাপাশি বর্ধিত বলবতকরণের প্রস্তাবগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে।
কর্মকর্তারা বলেন, মেক্সিকোতে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ মধ্য আমেরিকার উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে আনার কাজটি সীমিতভাবে করা হবে এবং শুধু মেক্সিকো সরকারের সাথে আলোচনার পরই যারা খুব সম্ভবত উদ্বাস্তুদের গ্রহণে সম্মত হবে।
তবে কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দেন যে দপ্তর ট্রাম্পের এ অঙ্গীকার আগ্রাসীভাবে পালন করতে ইচ্ছুক যে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে অভিবাসী আইন বলবত করা হবে যা ওবামা আমলের বিধি-বিধান থেকে তাৎপর্য পূর্ণ ব্যত্যয়।
এ অঙ্গীকার দেশব্যাপী অভিবাসীদের মধ্যে ভীতি ও ক্রোধের সৃষ্টি করেছে এবং তাদের সমর্থকরা হুুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে এ নয়া পদক্ষেপ বহু অবৈধ অভিবাসীদের জন্য হুমকি যারা আগে বিতাড়িত হবার সামান্য বিপদের মধ্যেই ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ