পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রিক দেবী মূর্তি স্থাপনে দুই মন্ত্রী ও মূর্তির পক্ষাবলম্বনকারীদের বক্তব্যে তীব্র নিন্দা করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্টের আহŸায়ক শাহসুফী সৈয়দ আব্দুল হান্নান হাদী, জাগ্রত ইসলামী জনতার আহŸায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন গতকাল প্রদত্ত বিবৃতিতে তারা বলেছেনÑ ইসলাম, কোরআন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘোষণা মূর্তি স্থাপনের বিরোধী এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র হওয়ার পক্ষে। নেতৃবৃন্দ বলেন, মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উল্লেখিত বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা জরুরী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলামের মূর্তিবিরোধী বক্তব্য দেশবিরোধী’। সংস্কৃতি মন্ত্রীর এরূপ কথা বলা স্বাভাবিক। কারণ যাদের ভারতভুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে তাদের এবং সংস্কৃতি মন্ত্রীর বঙ্গবন্ধু ঘোষিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা পছন্দনীয় নয়, ভারত বন্ধনার কারণে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সনদ ও স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ ইসলামিক প্রজাতন্ত্রই হওয়ার কথা। নেতৃবৃন্দ বলেনÑ মন্ত্রী, মূর্তির পক্ষে জোড়ালো প্রতিবাদ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে মূর্তি রাখতে শক্তিশালী দাবি আশা করেছেন। নাস্তিক ও বাম ধারার মন্ত্রী মেননও মূর্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবী মূর্তিকে ভাস্কর্য বলে, তিনি সুপ্রিম কোর্টের চত্বরে স্থাপিত গ্রিক দেবী মূর্তির অপসারণের জন্য আন্দোলনরত মুসলমানদের অজ্ঞতার দোষে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু মূর্তির পক্ষে প্রকাশ্য বক্তব্য দানকারী দুই মন্ত্রীই ইসলাম সম্পর্কে এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে মূর্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের অজ্ঞতার দোষে দোষী সাব্যস্ত করার ভ্রান্ত চেষ্টা করেছেন। কারণ ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে বা পবিত্র কোরআন-হাদীস সম্পর্কে ধারণা থাকলে তারা ভাস্কর্য মূর্তির পক্ষে বক্তব্য দিতেন না। মন্ত্রীদ্বয়ের জানা থাকা জরুরী মূর্তির পক্ষ নিলে মুসলমানের ঈমান থাকবে না, মুসলমানিত্বও থাকবে না। একই অজ্ঞতার কারণে পাঠ্যপুস্তকে সা¤প্রতিক রদ বদলেও সংস্কৃতি মন্ত্রীর দৃষ্টিতে সা¤প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির অভিযোগ উঠেছে। পাঠ্যসূচীতে পুনসংযোজিত বিষয়গুলো পড়ার প্রয়োজনীয়তা মন্ত্রী অনুভব করেননি, ইসলামের সংশ্লিষ্টটা ও হেফাজতের স্বাগত জানানোর কারণে। অথচ বিষয়টি হলো যখন আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা আদর্শ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে বসেছে যখন তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন-অপহরণ ও ধর্ষণে জড়িয়ে পড়ছে এবং প্রশাসনসহ সাধারণ নাগরিকরাও যখন ঘুষ দুর্নীতি, ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ে দেশ প্রেমিকতা হারিয়ে, লোভে ভোগে মত্ত হয়ে পড়েছে তখন জাতিকে বাঁচানোর জন্য পাঠ্যপুস্তকে সৎ, দেশদরদী ব্যক্তি, ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ও আলেম-ওলামাদের অনুরোধে সরকার সামান্য পরিবর্তনটুকু করায় এসব মন্ত্রী ও জ্ঞান পাপীরা বিদেশী প্রভুদের মনোরঞ্জনে এমনসব অবাস্তব বক্তব্য রাখছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, অসম্প্রদায়িকসহাবস্থান বাংলাদেশের ঐতিহ্য। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ যুগের পর যুগ এই ভূখÐে বসবাস করে আসছে। সকল ধর্মাবলম্বনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করে আসছেন, সরকার কারোর ধর্ম পালনের বিরুদ্ধে নয়, অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া নির্ভর করে রাজনৈতিক নেতা ও রাষ্ট্রশক্তির উপর। এ প্রসঙ্গে ইসলামী নেতৃবৃন্দ বলেন, সা¤প্রদায়িক পরিবেশ নষ্টে আলেম-ওলামা, বুদ্ধিজীবীরা ভূমিকা রাখে না। ব্রিটিশরা এ উপমহাদেশে আসার পূর্বে এ দেশে কোন সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল না। ব্রিটিশরা তাদের রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে এদেশে ধর্মীয় বিভেদ তৈরী করে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা বাজিয়ে ‘বিভক্ত করো ও শাসন করো’ নীতি গ্রহণ করে এখানে সা¤প্রদায়িকতার জন্ম দিয়েছে এবং তাদের শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। ভারত বন্ধনে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীরা বাংলাদেশে সা¤প্রদায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করতে দাঙ্গা বাধানোর নিরন্তন অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মূর্তি স্থাপনও অসা¤প্রদায়িক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘিœত করছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের বিরুদ্ধে ইসলামী সংগঠন ও ইসলামী বৃদ্ধিজীবীরা কোন প্রতিবাদ করেনি। তারা প্রকাশ্যে সুপ্রিম কোর্ট-এর সামনে ভিন্ন সংস্কৃতির গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপনের বিরোধিতা করছে। কারণ এটা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে ভয়াবহ আঘাত হেনেছে। এটা ৯২% মুসলমানের ঈমান রক্ষার, আশা-আকাক্সক্ষা ও ইসলামী সংস্কৃতির বিপরীত। তাই এই মূর্তি অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট হতে অপসারণ করতে হবে। এটা যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই জাতির কল্যাণ হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘সংবিধান রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে। যেমনি ৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। অথচ তখন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল ‘সর্ব শক্তিমান আল্লাহর নামে আপনারদের প্রতি আমার আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, মুজিবনগরে সরকারী স্বাধীনতার ঘোষণা মালায় বলা হয়েছে ইসলামের সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায় বিচার, প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা দেয়া হলো। এটাই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ ও উদ্দেশ্য। ধর্মনিরপেক্ষতা সেখানে ছিল না। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাদরাসা বোর্ড নবায়ন করে চালু করেছিলেন, তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন, জুয়াখেলা নিষিদ্ধ করেছিলেন, তাবলীগের জন্য টঙ্গী ইজতেমা ময়দান ও কাকরাইল মসজিদের জায়গা দিয়েছিলেন। তিনি ৫৬টি জাতির মুসলিম দেশে সংগঠন ওআইসিতে যোগদান করে মুসলিম ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। তাই আজ যারা সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে মূর্তি স্থাপন চাচ্ছেন, তাদের উচিত ইসলাম জানা ও বোঝা। কোরআন-হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করা এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাসমূহ পাঠ করা এবং মানা। আর তখন তারা স্বইচ্ছাই মূর্তি স্থাপনের পক্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।