Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্ভাবনার ডেনিম পোশাক

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : জিন্স নামে পরিচিত ডেনিম পোশাক তৈরিতে নতুন সম্ভাবনার নাম এখন বাংলাদেশ। কেবল তৈরিই নয়; ইউরোপের বাজারে রফতানির ক্ষেত্রেও টানা তিন বছর ধরে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। দিন দিন শক্ত হচ্ছে বিদেশি মুদ্রা আয়ের অবস্থান। বিশ শতকের মাঝামাঝি মার্কিন মুলুকে এর ব্যবহার শুরু হলেও বাংলাদেশ এখন এর অন্যতম উৎপাদনকারী দেশ। মাত্র তিন দশকের মধ্যে গড়ে উঠেছে ২৭টি বড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। আরও কিছু কারখানা প্রক্রিয়াধীন। ডেনিম খাতে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বাড়ানোর কারণে বিদেশী ক্রেতারা আগ্রহী হচ্ছেন বাংলাদেশের ডেনিমের প্রতি। বিশেষজ্ঞরাও ‘ডেনিম বা জিন্স পণ্যকে’ তৈরি পোশাক খাতের নতুন এক সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, এই খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। ডেনিম উৎপাদনে বাংলাদেশে সম্ভাবনা আছে। কিন্তু নতুন কারখানা তৈরিতে পানি, গ্যাস এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের অভাব রয়েছে। যা এ খাতের সম্ভাবনার অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন- পানি, গ্যাস এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের সমাধানে ইতিবাচক উদ্যোগ নিলে ডেনিম খাতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী গত তিন বছর ধরে ইউরোপের বাজারে ডেনিম পোশাক রফতানিতে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসে যার পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ইউরো। অপর এক তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। গত বছর প্রথমার্ধে যেখানে রফতানির পরিমাণ ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। বিশ্বে বর্তমানে ডেনিমের বাজার ৬ হাজার কোটি ডলারের। যদিও সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করতে পারে মাত্র ৩৫০ থেকে ৩৭০ কোটি ডলার। কাজেই ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এখানে বড় সুযোগ রয়ে গেছে বাংলাদেশের।
সাশ্রয়ী দাম আর গুণগতমানে সেরা বলে বাংলাদেশের ডেনিম বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে ডেনিমের বাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন সমীক্ষা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৮৯ সালে প্রথম হংকং ও ফিলিপিন্সের দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে ডেনিম পোশাক তৈরির দুটি কারখানা স্থাপন করে। ১৯৯২ সালের নভেম্বরে বিশ্বের ১১তম ডেনিম সরবরাহকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি মেলে বাংলাদেশের। এর আগের বছরের তুলনায় সরবরাহ ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়াই মেলে এ স্বীকৃতি। পরে ১৯৯৬ সাল থেকে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় ডেনিম কাপড়ের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে ১৭ কোটি পিসের বেশি ডেনিম পোশাক বিক্রি করে আয় করেছে প্রায় ৯৪ কোটি ডলার। অথচ একই সময়ে চীন একই বাজারে বিক্রি করে মাত্র সাড়ে ১১ কোটি পিস। ডেনিমের বিশাল বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে-উদ্যোক্তাদের মতানুযায়ী বাংলাদেশের ডেনিমই বিশ্বসেরা।
দেশের ডেনিম পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ৬০ শতাংশ কাপড়ই আমদানি করতে হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। আশাবাদের খবর হচ্ছে উচ্চমান ও মূল্যের পাশাপাশি ফ্যাশনেবল ডেনিমের উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে এ শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ডেনিম কারখানাগুলো তাদের উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
সূত্র মতে, জিন্সের এমন জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতার মূল কারণ, এতে ব্যবহৃত ডেনিম কাপড়। ডেনিম খাতে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বাড়ানোর কারণে বিদেশী ক্রেতারাও আগ্রহী হচ্ছেন বাংলাদেশের ডেনিমের প্রতি। আশার খবর হচ্ছে- ইউরোপের বাজারে টানা তিন বছর ধরে রফতানিতে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ডেনিম পোশাক। ইউরোপ আমেরিকার কিশোর, তরুণ-তরুণী এমন বয়স্কদের পরিহিত জিন্সটির গায়ে ছোট লেবেলে ‘মেড-ইন-বাংলাদেশ’ লেখা দেখতে পাওয়া এখন খুবই সাধারণ ব্যাপার। বিশ্ববাজারে প্রতিদিনই বাংলাদেশের ডেনিম পোশাকের কদর বাড়ছে। উন্নতমানের ডেনিম রফতানি, বিশ্বমানের কারখানা এবং শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের ফলে এই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ডেনিমে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশ-চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। তবে উচ্চমূল্যের ডেনিম কাপড় উৎপাদনে তুরস্কের বিশেষ সুনাম রয়েছে। যদিও ডেনিম উৎপাদনে বাংলাদেশও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে- দেশে ডেনিম পণ্য তৈরি করে এমন কারখানার সংখ্যা সোয়া ৫শ’। এসব কারখানার বেশিরভাগই আমদানিকৃত কাঁচমালের (ফেব্রিক) ওপর নির্ভরশীল। ডেনিমের ফেব্রিক্স তৈরি করে এমন কারখানার সংখ্যা ২৭টি। আরও ১৭টি কারখানা তৈরি হচ্ছে। এই খাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করেছেন ৮৩৪ মিলিয়ন ডলার। প্রতিবছর ডেনিম কাপড় উৎপাদনে দেশের সক্ষমতা রয়েছে ৩৬ কোটি গজ। চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬০-৬৫ কোটি গজ। ২০২১ সালের মধ্যে এই চাহিদা ১২০ কোটি গজে দাঁড়ালে রফতানি আয়ের আশা করা হচ্ছে ৭০০ কোটি ডলার।
অথচ একটা সময়ে জিন্স মানেই ছিল অনেক মোটা কাপড় আর শীতের সময়ে আরামদায়ক এমন পোশাক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে জিন্স। এখন জিন্সের প্যান্ট অনেক পাতলা ও নরম কাপড়ের হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণ। রং ও সুতার ব্যবহারে এখন মাথায় রাখা হয় ঋতু। তাই শীত-গ্রীষ্ম সব সময়ই জিন্স আরামদায়ক পোশাক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত শ্রমিকদের জন্য নির্মিত এই প্যান্ট ১৯৫০-এর দশক থেকে কিশোরদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরে জিন্স সবার কাছেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ডেনিম অ্যান্ড জিন্স বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা স›দ্বীপ আগারওয়াল বলেন, সারা দুনিয়ায় ডেনিমের বাজার সুবিশাল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও হয়ে গেছে সে বাজারের বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে এ মুহূর্তে জিন্সের বৃহত্তম রফতানিকারক বাংলাদেশ। পাশাপাশি বাংলাদেশের আগমনী পদধ্বনি আরও শোনা যাচ্ছে ভারত, চীন, লাতিন আমেরিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালি বাজারগুলোতেও। স›দ্বীপ আগারওয়াল বলেন, বিশ্বের ডেনিম ক্রেতাদের চাহিদা মেটানোর জন্যে যে পর্যায়ের অবকাঠামো, জনবল এবং আর্থিক সূচক থাকা আবশ্যক তার বিচারেও এক অনন্য অবস্থানে বিরাজ করছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে প্রথমবারে এদেশে উৎপাদন শুরু হয় ডেনিম পোশাকের। তুলা এবং বুননের বিশেষত্বের কারণে বিশ্বব্যাপী কাপড়টি ‘ডেনিম’ নামে পরিচিত। তবে জনপ্রিয়তার বিচারে এখন জিন্স নামেই বেশি চেনেন ব্যবহারকারীরা। সারাবিশ্বের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর পছন্দের পোশাক এটি।



 

Show all comments
  • সাজ্জাদ খান ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:২০ এএম says : 0
    এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৫ এএম says : 0
    Ami ki parbo ai kaj korte ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ