পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ৭১ এর স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। আন্দোলনের প্রতীকী দিবসে প্রতি বছর ২১ ফেব্রæয়ারি স্বীকৃতি পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সারাবিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বে প্রতিদিনই বাড়ছে বাংলা ভাষার ব্যবহার, গবেষণা ও চর্চা বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশে। কিন্তু এ দেশের উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার এখনো উপেক্ষিত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের রুলস এখনো ইংরেজিতে রয়েছে। আদালতসহ সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারের নিয়ে একটি রিটের রুল জারি প্রায় তিন বছর অতিক্রম হলে চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। যদিও সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের ভাষা হবে বাংলা।
আইনজ্ঞরা বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালতেও বাংলা ভাষার ব্যবহার সময়ের দাবি। তাদের মতে, বাংলা ভাষায় উচ্চ আদালতের রায় হলে বিচারপ্রার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। কারণ নিজের মাতৃভাষায় যেমন কোনো বিষয় বুঝতে সুবিধা হয়, অন্য ভাষায় তা কঠিন। একই সঙ্গে আগামী দিনের নতুন নতুন আইনগুলো বাংলা ভাষায় করার দাবি জানান তার।
সুপ্রিম কোর্টের রুলসেও আদালতের ভাষা হিসেবে প্রথমে বাংলা এবং পরে অন্য ভাষা ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে; কিন্তু এর পরও উচ্চ আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহারে কার্যকর উদ্যোগ নেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের। কয়েকজন বিচারপতি ব্যক্তিগত আগ্রহে বাংলায় কয়েকটি রায় দিলেও এর সংখ্যা খুবই নগণ্য।
সংবিধানের এ বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করতে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ বাংলা ভাষা প্রচলন আইনও প্রণয়ন করা হয়। আইনের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনগত কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে। যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই আইন অমান্য করেন, তাহা হইলে উক্ত কার্যের জন্য তিনি সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির অধীনে অসদাচরণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং তাহার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
এদিকে গতকাল শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা উচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলেছেন, আমি খুবই দুঃখিত এবং প্রধান বিচারপতি হিসেবে এটা আমার অপারগতা, এটা আমি স্বীকার করি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, জনস্বার্থে হলেও উচ্চ আদালতের রায় বাংলায় লেখা উচিৎ।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের নিজেস্ব ভাষায় বিচারকার্য পরিচালনা হলে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী উভয়ের জন্য সুবিধা। কারণ মাতৃভাষায় কোনো বিষয় বুঝতে যতটা সহজ, অন্য ভাষায় কিছুটা কঠিন। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে এখন যেসব আইন আছে অধিকাংশও ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে প্রণয়ন করা। এ কারণে এসব তাদের ভাষায় বিচারপতিরা চাইলেও পারেন না। বিশেষ করে নতুন আইনগুলো বাংলায় করতে হবে। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হবে কি-না, জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলছেন ইনকিলাবকে বলেন, এটা একান্তই প্রধান বিচাপতির বিষয়। বিচারপতিরাই আলোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট রুলস প্রণয়ন করেন। প্রয়োজন হলে বিষয়টি নিয়ে ফুলকোর্টে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তিনি (প্রধান বিচারপতি) যে কোনো বিষয়ে নির্দেশনা দিলে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করি মাত্র। তিনি আরো বলেন, বাংলায় ‘অনেক বিচারপতিই বাংলায় রায় দিচ্ছেন। তারা চাইলে অবশ্যই বাংলায় রায় দিতে পারেন।
উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষায় ব্যবহার নিয়ে রিটকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ ইনকিলাবকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের রুলস এখনো ইংরেজিতে রয়েছে। আমি মনে করি এই রুলস বাংলায় করা উচিত। তাতে বিচারপতি ও আইনজীবীরা বাংলা ব্যবহারের উৎসাহিত হবে। এ ছাড়া তিনি আরো বলেন, বাংলা কোনো নিয়ে গেলে বর্তমানে কোর্ট একটু আদেশ দিতে কষ্টবোধ করেন বলে মনে হয়। অথাৎ যা চাই সেই আদেশ পাই না। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে আদালতসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করি। একই বছরের ১৭ ফেব্রæয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। কিন্তু এখনো ওই রুলের চ‚ড়ান্ত শুনানি না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।
উচ্চ আদালতে বিচারপতিদের মধ্যে মরহুম সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ভাষায় কয়েকটি আদেশ ও রায় দিয়েছিলেন; কিন্তু সেগুলো আইন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত আইন সাময়িকীর (ঢাকা ল’ রিপোর্টস ৫০ ও ৫১ ডিএলআর) তথ্যানুসারে, ওই বছরের ফেব্রæয়ারিতে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও বিচারপতি হামিদুল হক সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নজরুল ইসলাম বনাম রাষ্ট্র মামলায় বাংলায় রায় দিয়েছিলেন। একই সময়ে বিচারপতি হামিদুল হক অন্য একটি ফৌজদারি রিভিশন মামলায়ও বাংলায় রায় দেন। এ ছাড়া হাবিবুর রহমান বনাম সেরাজুল ইসলাম, সবুর আলী বনাম রাষ্ট্র এবং আবদুর রেজ্জাক বনাম রাষ্ট্র নামক তিনটি ফৌজদারি মামলায়ও বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বাংলায় রায় দিয়েছিলেন।
বাংলা ভাষায় রায় দিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তিনি বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানসহ স্থাপনা সংরক্ষণ, স্বাধীনতার ঘোষক, ঢাকার চার নদী রক্ষাসহ প্রায় দেড়শ’ উল্লেখযোগ্য মামলার রায় বাংলায় দেন। আদালতসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে হাইকোর্টে একটি রিট করেন আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ। ওই রিটে একই বছরের ১৭ ফেব্রæয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। কিন্তু এখনো ওই রুলের চ‚ড়ান্ত শুনানি না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।
উন্নত বিশ্বে বিচারপ্রার্থীদের শুনানি ও রায় বুঝতে পারার জন্য উচ্চ আদালতে দাফতরিক কাজসহ আদালতের রায় ও আদেশ চলে রাষ্ট্রের নিজস্ব ভাষায়। এর মধ্যে জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ আদালতে বিচারকাজ চলে তাদের মাতৃভাষায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।