Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোগান্তি কমাতে হচ্ছে ‘প্রবাসী কল্যাণ কেন্দ্র’

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রবাসী শ্রমিকদের সাময়িক আবাসন, নিরাপদ অর্থ লেনদেনসহ বিভিন্ন সেবা দিতে চট্টগ্রামে ‘প্রবাসী কল্যাণ কেন্দ্র’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনশক্তি রফতানি হচ্ছে।
গত বছর চট্টগ্রাম থেকে বিদেশে গেছেন প্রায় ৪৬ হাজার শ্রমিক। প্রবাসীদের বিরাট একটি অংশ চট্টগ্রাম হয়েই আসা যাওয়া করে। এ কারণেই প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে পাঁচতলা ভবনের এ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চারটি সম্ভাব্য জায়গা বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস (বিএমইটি)।
চট্টগ্রামে প্রবাসী কল্যাণ কেন্দ্র হলে শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে ফ্লাইট বিলম্বসহ অন্যান্য কারণে সাময়িক সময়ের জন্য আবাসন সুবিধার পাশাপাশি তাদের নিরাপদ অর্থ লেনদেন, ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া যাবে বলে জানান বিএমইটি কর্মকর্তারা।
বিএমইটি’র চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, প্রবাসীদের বড় একটি অংশ চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেন। ‘প্রবাসী কল্যাণ কেন্দ্র’ হলে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন এখান থেকে মেটানো যাবে।
কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করে প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় কেন্দ্রটি নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
পাশাপাশি গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রস্তাবিত একটি জায়গার ডিজিটাল সার্ভেও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান জাহিরুল আলম। বিএমইটি’র প্রস্তাবে কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য বিমানবন্দরের কাছের চারটি জায়গা প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে দুটি চট্টগ্রাম বন্দর, একটি বিমানবন্দর ও অন্যটি ব্যক্তি মালিকানার।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের, চট্টগ্রাম-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন, বিএমইটি’র প্রস্তাবিত তিনটির মধ্যে একটি জায়গায় সার্ভে করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন তারা। প্রবাসী কল্যাণ অধিদপ্তর বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তব (ডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবে।
জহিরুল আলম জানান, প্রাথমিকভাবে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে গত মাসে উচ্চতার জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন যে উচ্চতার অনুমোদন দেবে সেভাবে ভবনটি নির্মাণ করা হবে।
বিএমইটির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রবাসীরা দেশে আসলে কিংবা যাওয়ার পথে অনেক সময় ফ্লাইট বিলম্ব হলে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হলে প্রবাসীদের সেসব সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে।
এছাড়া প্রবাসীরা দেশে আসার পর কিংবা যাওয়ার পথে প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা ও মালামাল নিয়েও অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কেন্দ্র নির্মাণ হলে তারা ব্যাংকিং সুবিধা ও সাময়িকভাবে অবস্থান সুবিধা এবং খাওয়া-দাওয়ার সুবিধা পাবেন। এই কেন্দ্র থেকে বিদেশ যাওয়ার আগ মুহূর্তে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কেও যাত্রীদের তথ্য দেয়া হবে।
যাওয়া-আসার পথে অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পরিবহন সুবিধাও এখান থেকে দেয়ার কথা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলে বিএমইটি। কেন্দ্রে ক্যাফেটেরিয়া, ফার্মেসিসহ দেশীয় বিভিন্ন হস্তশিল্পের দোকান রাখারও পরিকল্পনা করেছে তারা।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রফতানি বাড়ছে। গত বছর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪৫ হাজার ৭৮০ জনের। তাদের মধ্যে ২ হাজার ৩০১ জন নারী। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাবে গত চার বছরের মধ্যে এটি চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রফতানিতে সর্বোচ্চ রেকর্ড। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিবছর বৈধভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। রেমিট্যান্সে তাদের অবদান বাড়ছে। বিদেশে কর্মসংস্থান হওয়া লোকজনের পরিবারে স্বচ্ছলতা আসছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন মান উন্নত হচ্ছে। সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রবাসীদের অবদান বাড়ছে।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা থেকে ২০১৬ সালে ৪৫ হাজার ৭৮০ জন এবং ২০১৫ সালে ৩২ হাজার ৩৯৮ জন নারী-পুরুষ বিদেশ গেছেন। এক বছরে বেড়েছে ১৩ হাজারের অধিক। এছাড়া ২০১৪ সালে ২৮ হাজার ৭০ জন এবং ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ২২৬ জন নারী-পুরুষের মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান হয়। অর্থাৎ গত ৪ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রামে জনশক্তি রফতানি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
অন্যদিকে গত ৫ বছরে চট্টগ্রাম থেকে নারী জনশক্তি রফতানি বেড়েছে সাড়ে পাঁচগুণ। ২০১৬ সালে ২ হাজার ৩০১ জন এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৪১১ জন নারী বিদেশ গেছেন। এক বছরে বেড়েছে ৮৯০ জন। এছাড়া ২০১৪ সালে ৮৭৬ জন এবং ২০১৩ সালে বিদেশ গিয়েছেন মাত্র ৪২০ জন নারী। অর্থাৎ চট্টগ্রামে গত ৪ বছরে জনশক্তি রফতানিতে নারী ও পুরুষের অবদান সমানতালে বাড়ছে।
এদিকে জনশক্তি রফতানির বর্তমান ধারা অব্যাহত রেখে চলতি বছর ৮ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাঠানোর জন্য ২০১৭ সালের একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। রেমিট্যান্স বাড়াতে দক্ষজনশক্তি রফতানিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এই লক্ষ্যে প্রচলিত শ্রম বাজারের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ