Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবশেষে মারাই গেলেন নির্যাতিত সেই রউফের পিতা

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়ার পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার কোনাগাঁতি গ্রাম থেকে গুরুতর অসুস্থ বাবাকে বাঁচাতে এসে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শজিমেক) ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে প্রহৃত ও চরমভাবে নাজেহাল হয়েও বাবাকে বাঁচাতে পারলেন না এই মুহূর্তে প্রিন্ট ও ভার্চুয়াল মিডিয়ায় ট্রাজিক পার্সনের পরিচিতি পাওয়া রউফ সরকার। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বৃদ্ধ পিতা আলাউদ্দিন সরকার (৬০) মঙ্গলবার সকালে অবশেষে মারা গেছেন।
শুক্রবার রাতে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ পিতা আলাউদ্দিনকে নিয়ে রউফ বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু গত রোবিবার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে তিনি প্রহৃত হওয়ায় সর্বত্র আলোচনার ঝড় ওঠে। তাকে কান ধরে ওঠা বসা করানোসহ দফায় দফায় মারধর করা হয়। অন্যদিকে এই ঘটনায় অভিযুক্ত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা নিজেদের দোষ আড়াল করতে রোগীর অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে রউফকে দোষী বানিয়ে তার শাস্তিসহ ৭ দফা দাবিতে জরুরি বিভাগ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রেখে ধর্মঘটের ডাক দেয়। কিন্তু মিডিয়ায় আসল ঘটনার বিবরণ প্রকাশ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর মনোভাবের আঁচ পেয়ে একদিন পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সোমবার তাদের আন্দোলন স্থগিত করে।
উল্লেখ্য রোববার ঘটনার দিনে মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন রউফের অসুস্থ পিতার ঠাÐা লেগে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার সিলিং ফ্যান বন্ধের জন্য এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছে ফ্যানের সুইচ কোথায় জানতে চাওয়া নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয় রউফের। এর জের ধরে মেডিসিন ওয়ার্ডেই তাকে মারধর করা হয়। পরে কান ধরে ওঠাবসা করানো ও পা ধরে মাফ চাওয়ানোর পর পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তার ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের চড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটে। আর এসব ঘটনা দেখে শুনে চিকিৎসা নিতে আসা আলাউদ্দিন সরকারের শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। ফলে ওই দিনই হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে তাকে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই মঙ্গলবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
ইন্টার্ন ডাক্তারদের হাতে নাজেহালের ভয়ানক দৃশ্য দেখে ও পরে তার কন্যা বিনা ও অন্য এক নারী আত্মীয়ার লাঞ্ছনার ঘটনা শুনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েই বৃদ্ধ আলাউদ্দিন মারা যান বলে অভিযোগ করেছেন তার শোকাহত স্বজনরা ।
তবে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাসুদ আহসান এ প্রসঙ্গে জানান, একটি মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে ওই রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তুু তার অবস্থা আগে থেকেই ভালো ছিলো না। ফলে মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে তিনি মারা যান।
এদিকে বগুড়া শজিমেকের উচ্ছৃঙ্খল ইন্টার্ন ডাক্তারদের অমানবিক উন্মত্ততার খবরের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালের উপ-পরিচালক নির্মলেন্দুু চৌধুরীকে আহŸায়ক করে ৫ সদস্যের একটি তদন্দ কমিটিও গঠিত হয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল ও অমানবিক আচরণের জড়িত ইন্টার্নদের ইন্টার্নশিপ বাতিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বগুড়ায় পৌঁছায়নি বলে জানান হাসাপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ আহসান।
এদিকে ইন্টার্ন ডাক্তারদের মানববন্ধন চলাকালে তারা ফেস্টুন-প্লাকার্ডে যে সব ভাষা সম্বলিত বক্তব্য তুলে ধরেছে, সেগুলোতে তাদের বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। যেমন একটি ফেস্টুনে বলা হয় ‘তুমি যদি মানুষ হতে, হতাম ডাক্তার মশাই। তুমি যে ভাই বনের পশু, আমি যে তাই কসাই!’



 

Show all comments
  • শাফায়াত সজল ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ২:৫৪ এএম says : 0
    আমরা শোকাহত পরিবারের প্রতি শোক সমাবেদনা জানাচ্ছি।পাশাপাশি মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বগুড়ার সকল সচেতন গনমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ।বিশেষ করে আমাদের বড়ভাই মহসিন আলী রাজু ভাই কে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ