পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এহসান আব্দুল্লাহ : ১৯৫২ সালের অগ্নিঝরা একুশে ফেব্রæয়ারিকে ঘিরেই আজকের এই অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সবার কাছে এটি একুশে বইমেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণ ঘিরে প্রতি বছর ফেব্রæয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশক ও বইপ্রেমীদের চাহিদার কারণে ২০১৪ সাল থেকে অমর একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমির পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স¤প্রসারণ করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রæয়ারিতে চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার সূচনা করেন।
এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। এই বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমান অমর একুশে বইমেলার সূচনা হয় এবং এই বইমেলার নাম পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ করা হয়। এবারের মেলায় একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮০টি ও সোহরোওয়ার্দী উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। বইপ্রেমীদের যাতে কষ্ট কম হয়, তার জন্য এবার প্রথমবারের মতো একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে প্রতিদিন প্রকাশিত নতুন বইগুলো নিয়ে একটি বিশেষ স্টল যাতে নতুন প্রকাশিত বইয়ের দাম তা কোন স্টলে পাওয়া যাবে তা সহ বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
গতকাল অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ছিল মেলা প্রাঙ্গণে এক উৎসবমুখর সমারোহ। লেখক, প্রকাশক আর পাঠকদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। কোথাও তিল ধারণের ঠাই ছিল না মুহূর্তের জন্য। শাহবাগ থেকে বইমেলার প্রবেশ মুুখে ছিল আগত বইপ্রেমীদের দীর্ঘ সারি। পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে উঠেছে যেন এক জনসমুদ্র। যার সবগুলো স্রোত গিয়ে মিলছে বইমেলায়। বইপ্রেমীদের জন্য এক মহাসাগর তুল্য হয়ে উঠেছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। সকলেই সেজেছিল একুশের সাজে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বইমেলা প্রাঙ্গণেই ছিল সবার গন্তব্য। সেদিকে লক্ষ্য রেখে পুলিশের পক্ষ থেকেও কাল রাখা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। যাতে আগত বইপ্রেমীদের কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়।
তবে একুশে বইমেলা হলেও সেখানে তেমন ছিল না ভাষা আন্দোলন কিংবা ভাষাকেন্দ্রিক বইয়ের চাহিদা। অধিকাংশেরই পছন্দের তালিকায় ছিল প্রিয় লেখকদের বই, বিভিন্ন উপন্যাস, গল্পগুচ্ছ কিংবা সায়েন্স ফিকশন।
অঙ্কুর প্রকাশনীর প্রকাশক মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভাষাকেন্দ্রিক বই খুব কমই বিক্রি হচ্ছে। সবার চাহিদা মূলত প্রয়োজনীয় বইয়ের দিকেই। আবেগের বইগুলো শখের বইয়ের কাছে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। পাঠকরা দর্শন ও রাজনীতির বই বেশি কিনছে।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ভাষা আন্দোলনের উপর লেখক নেই তেমন। আর পাঠকরা উপন্যাস ও গল্পের প্রতিই বেশি ঝোঁক দেখাচ্ছেন। তবে একেবারে যে চলছে না তা বলব না।
অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন বলেন, একুশে ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে আজকে বেচাকেনা গতদিনের তুলনায় অনেক ভালো। পাঠকদের বিভিন্ন উপন্যাস ধর্মী বই বেশি টানছে। ভাষা আন্দোলনের বইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আসলে এটিতো গবেষণা ধর্মী লেখা তাই লেখকরা এগুলো খুব বেশি লেখে না। তারা পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী লিখে থাকেন। আমরা বেশ কয়েকজন লেখকের কাছে ভাষা আন্দোলন ও ভাষা সংক্রান্ত বইয়ের পাÐুলিপি চেয়েও তেমন সাড়া পাইনি।
কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক নাছির আহমেদ সেলিম বলেন, আজকে তো একুশে ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে প্রচুর বেচাকেনা হচ্ছে। পাঠকরা অধিকাংশই উপন্যাসধর্মী বই কিনছেন। সমাজ, দর্শন ও বিভিন্ন তাত্তি¡ক বইও বিক্রি হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনকেন্দ্রিক বইয়ের কথা জনতে চাইলে তিনি বলেন, লেখকদের উচিত এর উপর বেশি করে বইলেখা। এবং পাঠকদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তা উপন্যাস আঙ্গিকে সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপন করা, যাতে তারা আকৃষ্ট হয়।
শিশুদের স্টল ঢাকা কমিক্স এর প্রকাশক মেহেদী হক বলেন, আসলে ভাষার ব্যাপারটা বাণিজ্যিক না, এটা চেতনার সাথে মিশে আছে তাই আমরা এবার আমাদের ফেসবুক পেজে ১৬টি কার্টুনের একটি সিরিজ আপলোড করেছি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের উপর। তাই এটি বই আকারে প্রকাশ করিনি, কারণ এটা করলে আমাদের তা বিক্রি করতে হবে। তাই এটাকে কোনো বাণিজ্যিক রুপ দিতে চাই না। তবে আগামীতে আমরা এর উপর একটি ছোট বই বিনামূল্যে সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব।
তরুণ লেখক সাব্বির জাদিদ বলেন, আসলে মানুষ এখন নগর জীবনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ফলে সকলেই বিনোদনধর্মী বইয়ের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। সবাই বিভিন্ন গল্পের ভিত্তিতে লেখা বই বেশি পড়ছে। লেখরা তাই তাদের বইয়ের কাটতি বাড়াতে ও প্রকাশকদের প্রতি খেয়াল রেখে সেই অনুযায়ী বই লিখছেন।
আরেক তরুণ লেখক মাইনুদ্দিন সেজান বলেন, পাঠকের চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখেই আসলে লেখকরা বই লিখে থাকেন। ফলে প্রায় একই বিষয়ের উপরই সকলের বই প্রকাশ পায়।
সায়েন্স ফিকশন লেখক ড. আনিস আহমেদ বলেন, এখনকার তরুণরা বিজ্ঞানের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ার ফলে তারা সায়েন্স ফিকশনের দিকে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ক্ল্যাসিকাল বইগুলো আর তারা বেশি একটা পড়তে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না। তবে অনেক তরুণ আছেন যারা মূল পাঠের প্রতি আগ্রহ দেখান ফলে তারা এইসব বই পড়েন তবে তাদের সংখ্যা তেমন একটা না।
মেলায় ঘুড়তে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র কামরুল ইসলাম বলেন, আসলে প্রাণের টানেই মেলায় আসা। তবে যে একুশকে কেন্দ্র করে এই বইমেলা সেখানে একুশের বই খুব কমই প্রকাশিত হয় যা অত্যন্ত দুঃখজনক। লেখকদেরই এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে পাঠকরা এই ভাষা আন্দোলন ও একুশের ব্যাপারটাকে আরো বেশি করে গ্রহণ করে।
একুশে ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল সন্তোষজনক। গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র এএসপি মহরম আলী মাসুদ বলেন, আজকে একুশে ফেব্রæয়ারিকে কেন্দ্র করে ৭৫১ জন পুলিশ সদস্য পুরো মেলা প্রাঙ্গণে দায়িত্বরত আছেন এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের আটটি দল সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে পুরো মেলাপ্রাঙ্গণ। মেলার প্রবেশপথে রাখা হয়েছে বাড়তি সতর্কতা যাতে আগত দর্শনার্থীদের কোনো প্রকার অসুবিধায় না পড়তে হয়।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় পাঠকদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে মুক্তচিন্তা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ড. আনিস আহমেদের সায়েন্স ফিকশন ‘এফ আই এক্স আই’, অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মাইনুদ্দিন সেজানের বই ‘গোধূলীর গল্প’, ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আলতাফ পারভেজের বই ‘শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম’, ও বুলবুল সরোয়ারের বই ‘স্বপ্নভ্রমণ জেরুজালেম’, বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত পিনাকি ভট্টাচার্যের বই ‘ভারতীয় দর্শনের মজার পাঠ’। অন্যপ্রকাশ ও কাকলী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের বই রয়েছে বরাবরের মতোই পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। গতকালও মেলায় নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে স্বরবৃত্ত প্রকাশন তেকে বের হয়েছে মোহাম্মদ নূরুল ইসলামের লেখা শিশুতোষ বই ‘ছাতিম গাছের ভ‚ত’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে ৫৯৫-৫৯৬ নং স্বরবৃত্তের স্টলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।