পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা বিভাগ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই অনেক বছর আগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ করার ঘোষণা দিলেন তখন বৃহত্তর কুমিল্লার জনগণ খুশিতে আটখানা হয়ে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ যখন অধীর আগ্রহে দিন গুণছিল ঠিক তখনই ‘কুমিল্লা বিভাগ’ নাম পরিবর্তন করে ‘ময়নামতি বিভাগ’ নামকরণের সিদ্ধান্ত আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে। আর তখনি বৃহত্তর কুমিল্লার জনগণ ময়নামতি নয়, কুমিল্লা নামেই বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি তুলে রাজপথে নেমে পড়ে। দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতা, কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সংগঠক, চাকরিজীবী, দিনমজুরসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের কণ্ঠে এখন একটাই দাবি ধ্বনিত হচ্ছে কুমিল্লা নামে বিভাগ চাই। ধীরে ধীরে এ দাবি রূপ নিচ্ছে আন্দোলনে। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিকেলে নগরীর পূবালী চত্বরে কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে অনুষ্ঠিত হলো বিক্ষোভ-সমাবেশ। ময়নামতি নয়- কুমিল্লা নামে বিভাগ চাই, কুমিল্লা নাম চমৎকার- অন্য নামের কী দরকার ইত্যাদি লেখা সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন হাতে খÐ খÐ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে উত্তাল হয়ে ওঠে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বর।
১৭৭৯ সালে কুমিল্লা জেলার গোড়াপত্তন হয়েছিল। ১৯৬২ সালে কুমিল্লা বিভাগ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। ওইসময় কুমিল্লা বিভাগ হওয়ার সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু বিভাগ হয়ে গেলো চট্টগ্রাম। দীর্ঘসময় পর আশির দশকে ফের শুরু হয় কুমিল্লা বিভাগের আন্দোলন। গঠন হয় কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদ। নব্বই দশকে কুমিল্লা বিভাগসহ বিভিন্ন দাবির বিষয় নিয়ে মাঠে নামে গণদাবি পরিষদ নামে একটি সংগঠন। তৎকালীন কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান বর্তমানে সদর আসনের এমপি আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে ত্বরান্বিত করেন বিভাগ দাবির আন্দোলন। কিন্তু কুমিল্লা বিভাগ হয় না। বিভাগে রূপ পায় বরিশাল, সিলেট, রংপুর। আবার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ময়মনসিংহ বিভাগ হয়ে যায়। অথচ কুমিল্লা হয় না। প্রায় ৪০ বছর পর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লার সদর আসনে আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর মহান জাতীয় সংসদে কুমিল্লাকে বিভাগ করার যোক্তিকতাসহ কুমিল্লার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রথম তুলে ধরেন। মহান জাতীয় সংসদের একাধিক অধিবেশনে কুমিল্লাকে বিভাগ করার দাবি তুলে বক্তব্য রেখেছেন এমপি হাজী বাহার। সর্বশেষ তিনি গত ৮ ফেব্রæয়ারি সংসদের অধিবেশনেও কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি তুলে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিভাগকে ভেঙে কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নির্দেশনা দেন। ওই বছরের ৪ মার্চ মহান জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে বিভাগ করার ঘোষণা দেন। আবার ওই বছরের ২৫ মার্চ কুমিল্লা টাউনহলে কবি কাজী নজরুলের জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়নের বিষয়টি যখন ধীরে ধীরে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনি গত ১৪ ফেব্রæয়ারি বিশ^ ভালোবাসা দিবসের দিনটিতে কুমিল্লার আপামর জনগণের হৃদয় ভেঙ্গে যায় কুমিল্লার বদলে ‘ময়নামতি’ নামকরণে বিভাগ করার সিদ্ধান্তের খবরে। ওইদিন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার এমন নির্দেশনার খবরটি পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের মাধ্যমে গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর হৃদয়ভাঙ্গা কুমিল্লাবাসী কুমিল্লা নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে পড়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে কুমিল্লাজুড়ে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চলছে মিছিল, মিটিং, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে ময়নামতি নামের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কুমিল্লা নামে বিভাগের দাবিতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
ইতিহাস ঐতিহ্যের জেলা কুমিল্লা শব্দ বাদ দিয়ে ময়নামতি নামে বিভাগের না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ রেখে আওয়ামী লীগ দলীয় কুমিল্লা সদর আসনের এমপি হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত নবাব ফয়েজুন্নেসা চৌধুরানী, বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মেজর আবদুল গনি, ভাষা সেনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রখ্যাত সঙ্গীতব্যক্তিত্ব শচীনদেব বর্মন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, সুরসাগর খ্যাত হিমাংসু কুমার দত্ত, দেশ বিখ্যাত গণসংঙ্গীত শিল্পী সুখেন্দ্র চক্রবর্তী, শিক্ষাঅনুরাগী রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ অখিল চন্দ্র দত্ত, খান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরী, খান বাহাদুর আবদুল করিম, নওয়াব স্যার কেজিএম ফারুকী, বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা লাকসামের দশম সংগ্ররাজ মহাথেরসহ অসংখ্য গুণী, দানবীর, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদের জন্ম কুমিল্লার মাটিতে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের একটি বড় অংশ জড়িয়ে রয়েছে কুমিল্লায়। অথচ একজন খুনি মোস্তাকের জন্য অসংখ্য গুণী ব্যক্তির জন্মস্থান আর পদচারণার কুমিল্লা কোনভাবেই বিভাগ শব্দের জায়গা থেকে বাদ পড়তে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধÑ খুনি মোস্তাকের জন্মস্থান ভেবে নয়, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহকের প্রশ্নে নেত্রী কুমিল্লার নামেই বিভাগ ঘোষণা করবেন। আর এমন প্রত্যাশা থেকে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী আপামর কুমিল্লাবাসীকে নিরাশ করবেন না।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।