পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এবং ভাষা শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক কর্মসূচিতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মাতৃভাষাকে মহান আল্লাহ তায়ালা অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এজন্য তিনি নবীগণের উপর মাতৃভাষায় আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ রাসূল (স.) এর মাতৃভাষা আরবিতে পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন।
এর অর্থ স্ব স্ব জাতি যাতে সহজে কিতাবের মর্মার্থ বুঝতে পারেন। তাই পবিত্র কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে মাতৃভাষায় এর চর্চা করতে হবে। তাহলেই কুরআনের আলোকে জাতিকে আলোকিত করা সম্ভব। খেলাফত আন্দোলন ঃ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেক নবীকে তার মাতৃভাষায় প্রেরণ করা হয়েছে এবং আল্লাহ প্রদত্ত¡ আসমানি কিতাবও নবীগণের স্বীয় মাতৃভাষায়ই নাজিল করা হয়েছে, যাতে তারা সহজে বুঝতে পারেন এবং জাতিকে বুঝাতে পারেন। এ ধারাবাহিকতায় আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর উপরও আরবিতেই কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যেন তিনি তার কওমকে সহজে কুরআন বুঝাতে পারেন। এতে মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝে আসে। মানুষ যদি তার মাতৃভাষায় পারদর্শি না হলে সঠিকভাবে বুঝবেনা ফলে কুরআনের আলো দ্বারা নিজ জাতিকে আলোকিত করতে পারবে না। তাই যারা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের শাহাদাতের বদৌলতেই আজ আমাদের মাতৃভাষা বাংলাভাষা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আমরা এতই উদাসিন যে এ দিবসটিকেও বিজাতীয় ভাষায় পালন করি।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর জামিয়া নুরিয়া মাদরাসায় ভাষা শহীদদের স্মরনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের নেতৃবৃন্দ।
ইসলামী সমাজ
“ইসলামী সমাজ”এর আমির হযরত সৈয়দ হুমায়ূন কবীরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মাতৃভাষার গুরুত্ব প্রদানে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় “ইসলামী সমাজ”এর উদ্যোগে ‘মানব বন্ধন’ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে সংগঠনের আমির হযরত সৈয়দ হুমায়ুন কবীর বলেন, মাতৃভাষায় কুরআন ও সুন্নাহ্র যথাযথ জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা না থাকায় ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে দেশবাসী সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম এর পরিবর্তে মানবরচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ গ্রহণ করে মানুষেরই সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের নিকট বন্দি। এ কারণেই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের বিভিন্ন রকম আজাব-গজবের শিকার হয়ে বহুবিদ সমস্যায় জড়িয়ে দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কাল কাটাচ্ছে। মানবরচিত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী অপতৎপরতাসহ বিভিন্ন রকম মানবতাবিরোধী অপরাধ চলছে। এসব অপতৎপরতা নির্মূল করে সমাজ ও রাষ্ট্রে সুশাসন ও ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা করে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে মাতৃভাষায় আল-কুরআনের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর অনুসরণ ও অনুকরণে ঈমান ও ইসলামের দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক।
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
আমাদের দেশের শাসক শ্রেণীর দূর্বলতার কারণে আমরা ভিনদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হচ্ছি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ একথা বলেছেন, তিনি বলেন, ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে জর্জরিত আমাদের দেশ। মাতৃভাষা বাংলা আল্লাহর দেয়া দান। ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকেও মাতৃভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু সালাম, জব্বার, বরকত, রফিকরা নিজ জীবন বিলিয়ে দিয়ে বাংলাভাষা রক্ষা করেছেন। তারপরও আজ বাংলা ভাষার সর্বত্র প্রচলন হচ্ছে না। অন্তত বাংলাদেশে তো সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন করা প্রয়োজন ছিল।
গতকাল বিকালে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। পুরানা পল্টনস্থ অফিস মিলনায়তনে সংগঠনের আহŸায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, নগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, আলহাজ আব্দুর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ইসলামকে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত আখ্যা দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার সেøাগান দেয়, তারা জ্ঞানপাপি। স্বাধীনতাযুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিল না। ভাষা আন্দোলনের ধর্ম নিরপেক্ষতা ছিল না।
মারকাজুল ফুরকান ক্যাডেট মাদরাসা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস এবং নতুন সবক প্রদান উপলক্ষে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মুগদায় (ঝিলপাড়) অবস্থিত মারকাজুল ফুরকান ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদরাসায় গতকাল সকালে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাদরাসার অধ্যক্ষ হাফেজ হযরত মাওলানা মোশাররফ হোসাইন মাহমুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন; জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র ইমাম হযরত মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন; দক্ষিণগাঁও দারুল উলূম মাদরাসার শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা মুফতি শিব্বির আহমাদ কাশেমী; মায়াকানন মাদরাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা মুফতি মাহবুবুর রহমান; জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হযরত মাওলানা মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেম প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষা উপলব্দি করার ক্ষমতা দান করেছেন। স্ব-স্ব ভাষার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে আহŸান করতে হবে। আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে ভাষার চর্চা বাড়াতে হবে। ইসলাম মাতৃভাষার মর্যাদা দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।