Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেনাপোল সীমান্তে দুই বাংলার হাজারো ভাষাপ্রেমীর মিলনমেলা

যৌথভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপন

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষার টানে দুই বাংলার হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বেনাপোল চেকপোস্ট নোমান্স ল্যান্ড এলাকায়। ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবল ভাষার টানে আজ মঙ্গলবার সকালে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করেই কার্যত দলে দলে মানুষ যোগ দেন একুশের মিলন মেলায়।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ এই সেøাগান নিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথানত করতে বাংলাদেশের বাঙালিদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও। সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতিক এবং সরকারি কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষ । দু’দেশের বেনাপোল ও বনগাও পৌরসভা যৌথভাবে এই মিলন মেলার আয়োজন করেন। এই প্রথম দুই দেশের ভাষা প্রেমীরা বাংলাদেশের মানুষের রক্ত পশ্চিম বাংলার মানুষের জন্য এবং তাদের রক্ত আমাদের জন্য দান করেন।
নোমান্স ল্যান্ডে নির্র্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে সকাল সাড়ে ৮টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তথ্য ও প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শ্রীমতি ব্রাত্য বসু , সংসদ সদস্য শ্রীমতি মমতা ঠাকুর, বিধায়ক শ্রী বিশ্বজিত দাস, বিধায়ক শ্রী সুরজিত কুমার বিশ্বাস, বনগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান শ্রী শঙ্কর আঢ্য, কবি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মÐলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন।
স্বাধীন বাংলা বেতার শিল্পী খুরশিদ আলম ও রথীন্দ্রনাথ রায়সহ উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো শতস্ফ‚র্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে।
তারা একই মঞ্চে গাইলেন ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলার জয়গান। নেতারা শ্রদ্ধা জানাতে হাতে হাত রেখে ঊর্ধ্বে তুলে ধরলেন বাংলা ভাষাকে। মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে বেনাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্স ল্যান্ডে এভাবেই কাটালেন দুই বাংলার ‘বাংলা ভাষাভাষী’ মানুষ। একই আকাশ-একই বাতাস, দুই বাংলার মানুষের ভাষা এক।’ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি দুই দেশের বাঙালি বাংলাভাষী মানুষের পাশে।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যৌথভাবে দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে প্রতিবারের ন্যায় এবারো দিবসটি পালন করল দুই বাংলার মানুষ। দুই দেশের সীমান্ত এলাকাসহ নানা রঙয়ের ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকা। ভাষার টানে বাঙালির বাঁধন হারা আবেগের কাছে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ।
দু’দেশের সীমান্তরেখা ভুলে নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ভাষাপ্রেমীরা ছুটে এসে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মিস্টি বিতরণ করে উভয়কে বরণ করে নেয়া
দুই বাংলার মানুষের এ মিলনমেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়। ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ।
বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজারো মানুষের। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা।
ভাষা দিবসের মিলনমেলায় বিজিবি-বিএসএফকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। এরপর দু’দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করে যৌথভাবে। এ সময় ভাষার টানে বাঙালির বাঁধন হারা আবেগের কাছে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ। এর মধ্যদিয়ে বোঝা গেল রফিক, শফিক, বরকত ও সালামের তরতাজা রক্ত বৃথা যায়নি। ভাষার আকর্ষণ ও বাঙালির নাড়ির টান যে কতটা আবেগ ও প্রীতিময় হতে পারে তাও বুঝিয়ে দিলো মহান একুশে ফেব্রæয়ারি। পুরো অনুষ্ঠানে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় দুই সীমান্তে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ