Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষমতাসীনরা ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছে মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : অমর একুশের প্রাক্কালে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে রেখে ক্ষমতাসীনরা ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছে। গতকাল সোমবার বিকালে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
তিনি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ভাষায় আন্দোলনের চেতনাও ছিল মূলত গণতান্ত্রিক চেতনা এবং ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনাটা ছিল গণতান্ত্রিক চেতনা। এখনকার শাসকগোষ্ঠী বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যে আশা-আকাক্সক্ষা, তাকে সম্পূর্ণরূপে পদদলিত করে আজকে তারা দেশে একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, বন্দুক-অস্ত্র ব্যবহার করে জনগণের যে ন্যায্য দাবিগুলো, তাকে তারা দাবিয়ে রাখছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা ভাষা আন্দোলনের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তারা ভাষা আন্দোলনের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছে।
ভাষা দিবস শুরুর প্রাক্কালে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, অবশ্যই আমরা আমাদের হারানো অধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আসব। বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, কখনো জোর করে, শক্তি দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবিকে দাবিয়ে রাখা যায়নি এবং কখনোই যাবে না।
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
দলের দুই দিনের কর্মসূচির মধ্যে একুশের প্রথম প্রহরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সিনিয়র নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবর জিয়ারত করবেন। প্রভাত ফেরির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ ভোরে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন রাখবে দলটি।
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের হাজার হাজার ভাই কিভাবে রক্ত দিয়েছে, হাজারের ওপর আমাদের ভাইয়ের এই শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে। ৫শ’র উপরে আমাদের ভাই-বন্ধু গুম ও নিখোঁজ হয়ে গেছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী পঙ্গু হয়ে গেছে।
নিপীড়ন-নির্যাতনে কেউ বাসা-বাড়িতে থাকতে পারে না। আমাদের অনেক কর্মী নিজের বাড়িতে থাকতে পারে না, অন্য বাড়িতে থাকে, নেতা-কর্মীরা নিজেদের পাড়ায় থাকতে পারে না, অন্য পাড়ায় গিয়ে থাকে। এই হচ্ছে রাজনৈতিক নিপীড়নের চিত্র।
ভোলায় গত রোববার অনুষ্ঠিত বিএনপির জেলা সম্মেলনে বিভিন্ন থানা-উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীদের আসতে না দেয়ার জন্য বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ার ঘটনার কথা বলেন মহাসচিব।
দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, মিথ্যা কথা বলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটা কল্পকাহিনী তৈরি করে জনগণকে বোঝানো হচ্ছে, বিশ্ববাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে এবং এত প্রবৃদ্ধি নাকি কখনো হয়নি।
২০০২-২০০৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই সময়গুলোতে জাতীয় প্রবৃদ্ধি যে হারে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল, এখন পর্যন্ত সেই জায়গাতে এই সরকার নিয়ে যেতে পারেনি।
আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ওই সময়ে গোল্ডম্যান স্যাক্সর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ উদীয়মান ব্যাঘ্র অর্থাৎ এই যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তা একদিনে না, ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে এবং বিএনপি সরকারের আমলেই এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি মাত্রা পেয়েছিল।
নতুন নির্বাচন কমিশন ও আগামী নির্বাচন সম্পর্কে দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, তার প্রধান যাকে নিযুক্ত করা হয়েছে তিনি হচ্ছেন আওয়ামী লীগদলীয় একজন ব্যক্তি। কেউ তাকে চেনে না। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এ দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি, তার ফলাফল গ্রহণ করেনি। বিশ্ববাসীও গ্রহণ করেনি।
আজকে যদি আবারো সরকার চাতুরি করে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে যদি একদলীয় নির্বাচন করতে চায়, তাহলে এ দেশের মানুষ ও বিশ্ববাসী গ্রহণ করবে না। আমরা আগামীতে যে নির্বাচন আসবে, সেই নির্বাচন আমরা দেখতে চাই- একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেটা যে নামেই চিহ্নিত করা হোক না কেন- সহায়ক সরকার বলি আমরা বা অন্য কোনো সরকার বলি, তাকে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ হতে হবে। আমরা অবশ্যই মনে করি, সেই নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকলেই ভোট দিতে পারবে- এরকম একটা লেভেল প্ল্যান ফিল্ড তৈরি করা। সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তা হতে হবে। অন্যথায় দেশের মানুষ কখনোই সে ধরনের নির্বাচন গ্রহণ করবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি সেগুলো ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। এই যে চেতনা ও মূল্যবোধের কথা যারা কথা বলে, কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে- আজকে সত্যিকার অর্থে একদলীয় একটা সরকার চলছে। এটার জন্য আমরা যুদ্ধ করি নাই, এটার জন্য ভাষা আন্দোলনে আমি কারাবরণ করি নাই, এটার জন্য শহীদ বরকত, সালাম, রফিক রক্ত দেয়নি।
স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, লাখ লাখ নারী ধর্ষিত হয়েছেন, লাখ লাখ যুবক-যুবতী পঙ্গু হয়েছেন- আজকে তাদের আশা-আকাক্সক্ষার স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে। সে জন্য আজ শপথ নিতে হবে ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখব এবং সেটা রাখার জন্য যেকোনো মূল্যে হোক গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনব।
মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় দলের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ