পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, হেফাজত আজকে যেভাবে বলছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নয়, মনে হচ্ছে এটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র। একথা বলে সংস্কৃতিমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধের কোনো স্থান নেই। এ দেশ হচ্ছে নাস্তিক্যবাদের আস্তানা। কিন্তু সংস্কৃতিমন্ত্রী এটা ভুলে গেছেন যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন যে, দেশ চলবে মদিনা সনদে। এরও পূর্বে মহাজোট সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি ছিল, কুরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন হবে না। ’৭০-এর নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি ছিল কুরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন হবে না।
‘৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা ‘রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ক শক্তি স্বাধীন বাংলা বেতারের ৩০ মার্চ থেকে প্রতিদিন প্রভাতী অধিবেশন থেকেই সমাপ্তি ঘোষণায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ দিন পর্যন্ত প্রচলিত ছিল এই বাক্যটি। প্রচলিত ছিল ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, আমি তখনই কোনো জাতিকে সাহায্য করি, যখন সে জাতি নিজেকে সাহায্য করে।’
সংস্কৃতিমন্ত্রীর মূর্তির পক্ষের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা করে দেয়া বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের শীর্ষনেতা ও সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, কার্যকরী সভাপতি আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান চিশতি প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বদরুদ্দীন ওমর ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি গ্রন্থের ২৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্মেলনে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শামসুল হক ‘মূল দাবি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা পাঠ করেন। এতে শামসুল হক সুস্পষ্ট করে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর প্রতিভূ হিসেবে জনগণের ওপর ন্যস্ত থাকবে। গঠনতন্ত্র হবে নীতিতে ইসলামী, গণতান্ত্রিক ও আকারে রিপাবলিকান।’
’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট (যার প্রধান শরিক দল ছিল আওয়ামী লীগ এবং অন্যতম শরিক দল ছিল নেজামে ইসলাম পার্টি) নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র, ১ম খÐ, ৩৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে যে, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতিহারের ২১ দফা মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যাতে উল্লেখ ছিল : ‘কোরআন-সুন্নাহর মৌলিক নীতির খেলাপ কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না এবং ইসলামী সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে নাগরিকদের জীবন ধারণের ব্যবস্থা করা হবে।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র, ১ম খÐের ৪১৮-৪২০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, ‘১৯৫৫ সালের মে মাসে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পক্ষ হতে সাংগঠনিক প্রচারপত্র বের হয়েছিলÑ তার ১৭ নম্বর দাবি ছিল : মদ, গাঁজা, ভাং, বেশ্যাবৃত্তি ইত্যাদি হারাম কাজ আইন করিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করিতে হইবে। ১৮ নম্বর দাবি ছিল, মুসলমানগণ যাহাতে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি শরীয়তসম্মত কাজে অবহেলা না করেন এবং সকল শ্রেণীর নাগরিকগণের চরিত্র গঠনের জন্য প্রচার (দাওয়াত) বিভাগ খুলিতে হইবে। হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর জন্যও অনুরূপ ব্যবস্থা করিতে হইবে।’ অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহর প্রতি নিরঙ্কুশ বিশ্বাস ও আস্থা হলো মহাজোট সরকার গঠনের মূল ভিত্তি।
তাহলে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন কীভাবে বাংলাদেশে মূর্তি স্থাপন, নাস্তিক্যবাদ তথা ধর্মহীনতার জয়জয়কার উচ্চারণ করতে পারেন? তাছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল না।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ভাষণে, আওয়ামী লীগের প্রকাশনায়. মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন ঘোষণাপত্রে, স্বাধীনতার বিভিন্ন দলিলপত্রে ঘুরেফিরে আল্লাহর নাম এসেছে, মুক্তিযুদ্ধে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়েছে এবং আল্লাহর বান্দাদের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং জনগণের মাঝে ইসলামী শিক্ষা ও নীতি-নৈতিকতা প্রচার-প্রসারের প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র কথা কখনো বলেননি; বরং ঘুরেফিরে ইসলামের কথাই বলেছেন। তাদের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের ১ নম্বর ধারায় ‘দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন শক্তিশালী করার’ কথা বলা ছিল। গঠনতন্ত্রের ১০ নম্বর ধারায় বলা হয় : ঞড় ফরংংবসরহধঃব ঃৎঁব শহড়ষিবফমব ড়ভ ওংষধস ধহফ রঃং যরময সড়ৎধষং ধহফ ৎবষরমরড়ঁং ঢ়ৎরহপরঢ়ষবং ধসড়হম ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব. অর্থাৎ ‘জনগণের মধ্যে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান, তার উচ্চ নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় নীতিমালার বিস্তার করা।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।