Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সোনারগাঁয়ে গণধোলাই খাওয়া দুই এসআই প্রত্যাহার

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা : গত রোববার রাতে সোনারগাঁ থানার দুই উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে মাদক ব্যবসায়ী ও এক নারী সোর্সকে দিয়ে অনৈতিক কাজের অভিযোগ এনে মারধর ও চাঁদাবাজি করার অভিযোগে অভিযুক্ত দুই পুলিশের এস আই আবদুল লতিফ ও আমিনুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে তাদের দু’জনকে সোনারগাঁ থানা থেকে প্রত্যাহার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মোঃ মঞ্জুর কাদের পিপিএম। এ ঘটনা তদন্তে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাতিয়ার রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) সাজিদুর রহমান ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান মামুনুর রশিদ মন্ডলকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটককৃত কথিত তিন সোর্সকে গতকাল সোমবার সকালে ৫৪ ধারায় জেলা আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশ আহতের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, জামপুর ইউনিয়নের কাওসার টেক্সটাইল মিলের মালিক ব্যবসায়ী ও মাদকবিরোধী আন্দোলনের নেতা বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে গত রোববার রাতে মাদক ব্যবসায়ী রুমাকে বিল্লালের ঘরে প্রবেশ করিয়ে তার অবস্থান নিশ্চিত করে সাদা পোশাকধারী সোনারগাঁ থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল লতিফ ও আমিনুল ইসলাম। পরে দুই এস আই তার ঘরের দরজায় ধাক্কা দেয়, এসময় ওই ব্যবসায়ী নামাজ আদায় করছিলেন। দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় দুই এসআই ও তাদের সঙ্গে থাকা কথিত পুলিশের তিন সোর্স একাধিক হত্যা ও মাদক মামলার আসামি বন্দরের মদনপুর এলাকার হাবিব মিয়া, মিঠু হোসেন, জয়নাল আবেদীন, শামীমকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়ী বিল্লালের কক্ষে প্রবেশ করে তার ঘরে মাদক আছে এবং সে নারীকে নিয়ে অসামাজিক কাজ করছে বলে উল্লেখ করে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় পুলিশের দুই এসআই ও তাদের সোর্সরা বিল্লাল হোসেনকে এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে আহত করে। এসময় বিল্লাল হোসেন দৌড়ে তার তিনতলা বাড়ির ছাদে উঠে ডাকাত বলে চিৎকার করলে এলাকার কয়েকশ’ নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে তার বাড়িতে এসে ওই দুই এসআই ও তাদের সোর্সদের আটক করে গণপিটুনি দিয়ে ৫ ঘণ্টা একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় অন্যান্য সোর্সরা পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনার দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে এলাকাবাসীরা বিচার চাই! বিচার চাই! ¯েøাগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। পরে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিয়ার রহমান রাত ১১টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুই এসআই ও তাদের সোর্সদের বিচার করা হবে এই আশ্বাস দেয়ার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকাবাসী তাদের ছেড়ে দেয়।
ঘটনার তিন ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে এলে ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন জানান, আমি অত্র এলাকায় মাদকবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। আমার বিরুদ্ধে থানায় কোনো ধরনের অভিযোগ নেই। পুলিশের দুই এসআই লোভে পড়ে আমার নিকট চাঁদার দাবিতে আমাকে নির্যাতন চালায়। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
আহত পুলিশের এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ী বিল্লালের বাড়িতে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে ৮ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে অবস্থান করছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমি ওই বাড়িতে অভিযান চালাই। অপর আহত এস আই লতিফ জানান, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমিনুল আমাকে বাহিরে যাবে বলে থানা থেকে ডেকে নিয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঙ্গনুল হকের বরাত দিয়ে সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মোঃ মঞ্জুর কাদের জানান, গত রবিবারের ঘটনায় অভিযুক্ত আবদুল লতিফ ও আমিনুল ইসলামকে সোমবার সকালে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
এছাড়া এ ঘটনা তদন্তে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাতিয়ার রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান মামুনুর রশিদ মন্ডলকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ