Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অনিশ্চয়তায় গম আবাদ স¤প্রসারণ

গত বছর আক্রান্ত ৭ জেলার চারটিতেই এবারো ব্লাষ্ট রোগের আক্রমণ

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : বিপুল সম্ভাবনাময় গম-এর আবাদ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জোরালো ভূমিকার অনুপস্থিতির মধ্যেই দ্বিতীয় বছরের মত ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ রোগে দানাদার এ খাদ্য ফসলের ভবিষ্যত আরো কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। গতবছর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৭ জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ব্লাষ্ট রোগের সংক্রমণে এবার ঐসব জেলায় গম আবাদ নিরুৎসাহিত করা হলেও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সতর্ক করা হয়নি। ফলে বেশীরভাগ কৃষক নিম্নমানের বীজ দিয়ে এবারো গম আবাদ করায় নতুন করে চলতি মওসুমে ছত্রাকবাহী রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় এবার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা গতবছরের অর্জিত লক্ষ্য থেকে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর হ্রাস করে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরে নির্ধারণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
গত বছর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে দেশে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে গম আবাদ হলেও ব্লাষ্ট রোগের কারণে প্রায় ২০ হাজার হেক্টরের ফসল বিনষ্ট হয়। সংক্রমণমুক্ত এলাকার জমি থেকে গত মওসুমে দেশে গম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ লাখ টনের মত। চলতি মওসুমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টরে সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছর ভোলাসহ দেশের যে ৭টি জেলায় গমের ব্লাষ্ট রোগ দেখা দেয় সে জেলাগুলোতে চলতি মওসুমে গমের আবাদ নিরুৎসাহিত করা হয়। ওই জেলাগুলোতে বিএডিসি গম বীজ সরবরাহ করেনি। তবে ঐসব জেলায় চলতি মওসুমে গম আবাদ বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, কোন এলাকায় ব্লাষ্ট রোগের সংক্রমণ ঘটলে পর পর দু’টি মওসুমে ঐসব এলাকায় গম আবাদ বন্ধ রাখলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। কিন্তু আবাদ নিরুৎসাহিত করা হলেও তা বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি নিরুৎসাহিত করার মধ্যেই চলতি মওসুমে ভোলাতে ৫ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্য স্থির করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে আড়াই হাজার হেক্টরের বেশী। মেহেরপুরেও নিরুৎসাহিত করার মধ্যে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্য স্থির করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকৃত আবাদ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর। গতবছর আক্রান্ত অন্য জেলাগুলোতেও নিরুৎসাহিত করার মধ্যে চলতি মওসুমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার পাশাপাশি কৃষকগণ তার আবাদও করেছেন কমবেশী।
গম নিয়ে এবারো যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে গতবছর আক্রান্ত ৭টি জেলাসহ এর সন্নিহিত জেলাগুলোতে। তবে চলতি মওসুমে লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার হেক্টর হ্রাস করা হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে লক্ষ্য অর্জিত না হবার মধ্যেই পুনরায় কুষ্টিয়া অঞ্চলের ৪টি জেলার গম ক্ষেতে ব্লাষ্ট-এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র পর্যবেক্ষণ পরিদফ্তরের মতে, মেহেরপুর জেলার প্রায় সাড়ে ১১ হেক্টর গমের জমিতে চলতি মওসুমে ব্লাষ্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে একাধিক সূত্রের মতে, মেহেরপুর ছাড়াও কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলারও কিছু গমের ক্ষেতে ব্লাষ্ট রোগের সংক্রমণ হয়েছে। ডিএই ছাড়াও কৃষি গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত গমের ক্ষেতগুলো পরিদর্শন করেছেন ইতোমধ্যে। তবে এসব জমির ফসল গত বছরের মত পুড়িয়ে ফেলা হয়নি এখনো। গত মওসুমে সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জেলার আক্রান্ত গমের ক্ষেত আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
নিম্নমানের বীজসহ শীত মওসুমে গুমোট মেঘলা আকাশ এবং হালকা থেকে মাঝারী বর্ষণের সাথে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যাপক ফারাকের ফলে গমের জমিতে ব্লাষ্ট নামের ছত্রাকের সংক্রমণ হয়ে থাকে। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, এশিয়া মহাদেশে গতবছরই প্রথমবারের মত ব্লাষ্ট-এর আক্রমণ দেখা দেয়। আর তা ছিল বাংলাদেশেই। চলিত মওসুমেও এ মহাদেশে বাংলাদেশেই এ ছত্রাকবাহী রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে। বাতাসের সাথে দ্রুত এ রোগ সংক্রমণের আশংকা থাকে। এর কোন প্রতিষেধকও নেই শুধুমাত্র উন্নতমানের শোধন করা বীজের ব্যবহারে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি সংক্রমিত জমির ফসল দ্রুত পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ রয়েছে কৃষি বিজ্ঞানীদের।
এ রোগের কোন প্রতিকার না থাকায় ফসল পুড়িয়ে ফেলার বিধান দেন কৃষি বিশেষজ্ঞগণ। পাশাপাশি সতর্কতা হিসেবে পরবর্তী অন্তত দুটি মওসুমে গমের আবাদ না করতে বলেন বিশেষজ্ঞগণ। সে নিরিখে চলতি মওসুমে ভোলা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ ৭টি জেলাতে গমের আবাদ নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হলেও তা নিষিদ্ধ করা হয়নি। শুধুমাত্র ওসব জেলাগুলোতে বিএডিসি’র তরফ থেকে কোন গম বীজ সরবরাহ করা হয়নি চলতি মওসুমে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কৃষক পর্যায়ে ডিএই’র তরফ থেকে কোন বাস্তব ধারণাও প্রদান করা হয়নি। ফলে গতবছরের আক্রান্ত জেলাগুলোতে গমের আবাদ চলতি মওসুমে গতবছরের চেয়ে হ্রাস পেলেও তা বন্ধ হয়নি। ফলে চলতি মওসুমেও ৪টি জেলায় গমের ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। ফলে ওসব জেলাগুলো ছাড়াও সন্নিহিত এলাকায় আগামী বছরও গমের আবাদ হবে বিপজ্জনক।
আক্রান্ত জেলাগুলোর কৃষকগণ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা নিম্নমানের বীজ দিয়ে এবার গমের আবাদ করার পাশাপাশি আবহাওয়ার তারতম্যের কারণেও নতুন করে ব্লাষ্ট রোগের সংক্রমণ ঘটেছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিশেষজ্ঞগণ। অনেক কৃষকই গতবছরের সংরক্ষিত বীজ দিয়ে গমের আবাদ করেছেন বলেও জানা গেছে। ফলে নিম্নমানের বীজ থেকেই ছত্রাকবাহী এ রোগের উৎপত্তি ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ