পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাড়ে ৮ হাজারের পণ্য পৌনে ৪ লাখ এবং ৭শ’ টাকার পণ্য প্রায় ২৯ হাজার টাকায় ক্রয় দেখানো হয়েছে : গায়েব হয়ে গেছে ভাÐারে রক্ষিত মালামালও
পঞ্চায়েত হাবিব : সরকারি দফতরগুলোতে ক্রয়-প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার বিষয়টি নতুন নয়। প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা লোপাটের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নির্ধারিত টাকার কত পরিমাণ লোপাট করতে পারেন! দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ! এ ধরনের ঘটনাকে পুকুর চুরি বলেই অভিহিত করা হয়। কিন্তু লোপাটকৃত অর্থ যদি হয় নির্ধারিত মূল্যের ৪৪ গুণেরও বেশি, তাহলে এটাকে কী বলা যায়! নিশ্চয়ই সাগর চুরি কিংবা মহ-কেলেঙ্কারি। এমনই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে বিদ্যুৎ খাতে। সেফটি বেল্ট, ডিজিটাল অ্যাভোমিটারসহ বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলেরা। এছাড়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করে কোষাগারে জমা না দেয়া, নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত সিস্টেম লস, গাড়ি মেরামতসহ অন্যান্য কাজেও অনিয়ম হয়েছে চোখেপড়ার মতো। সব মিলিয়ে এক বছরে ৮৮ কোটি এক লাখ ৩৯ হাজার ৭৮৬ টাকা সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত এক কার্যপত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে করা বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনে এসব অনিয়ম ধরা পড়ে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপিত নথিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গামাটি কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য ৩০টি সেফটি বেল্ট ক্রয় করা হয়। প্রতিটি সেফটি বেল্টের বর্তমান বাজার দর ৭০০ টাকা হলেও তা ক্রয় দেখানো হয়েছে ২৮ হাজার ৮২৯ টাকা। যা নির্ধারিত মূল্যের ৪০ গুণেরও বেশি। শুধু এই একটি দ্রব্য কিনেই আট লাখ ৪৩ হাজার ৮৭০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একইভাবে ছয়টি ডিজিটাল অ্যাভোমিটার ক্রয়ে অনিয়ম করা হয়েছে। প্রতিটি অ্যাভোমিটারের একক বাজার দর আট হাজার ৫০০ টাকা হলেও ক্রয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা। যা নির্ধারিত মূল্যের ৪৪ গুণেরও বেশি। এই পণ্যটি ক্রয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্ব প্রাক্কলন প্রণয়নকারী ও অনুমোদনকারী সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এবং বিদ্যুতের মূল্যহার ও নিয়মাবলি উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা সত্তে¡ও ৪৪২ জন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে বিউবি’র দুই কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ১২৪ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতার জন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়েছে এতে।
সংসদীয় কমিটির উপস্থাপিত নথি অনুযায়ী অন্য অনিয়মগুলোর মধ্যে ৩৯৫ জন গ্রাহককে নিখোঁজ দেখানোর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। গায়েবি এসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে বিউবি’র ক্ষতি হয়েছে ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৩ টাকা। এছাড়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সিস্টেম লস সীমিত রাখার ব্যর্থতাজনিত কারণে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ছয় কোটি ৯৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫৩ টাকা। বিউবি’র নিয়ন্ত্রিত গাড়ি প্রাধিকার বহির্ভূতভাবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দিয়ে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭১২ টাকা আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী প্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে বোর্ডের গাড়ি প্রদান করা যায় না। এ ক্ষেত্রে নিয়মের চ‚ড়ান্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে, সেইসঙ্গে এসব গাড়ির জ্বালানি তেলও সরবরাহ করা হয়েছে অবৈধভাবে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ সাত কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৮ টাকা অনাদায়ী থাকলেও তা রহস্যজনক কারণে আদায় না করে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) দায়িত্বশীলদের অনিয়ম ও লুটপাটের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। তথ্যানুযায়ী, ডিপিডিসির আওতাধীন ১২ জন বড় গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ সরকারের পাওনা দেখানো হয়েছে ৩৫ কোটি ৫২ লাখ ছয় হাজার ৭৩১ টাকা। দীর্ঘদিন যাবৎ তাগাদা দিয়েও এসব গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যায়নি বলে দায় এড়িয়ে যায় বিল আদায়কারীরা। এছাড়া আরো ১১৯ জন গ্রাহকের কাছ থেকে এক কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার ১১০ টাকা আদায় করা যাচ্ছে না বলেও কর্তৃপক্ষকে বুঝানো হয়। এভাবে সরকারের ৩৬ কোটি ৬১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪১ টাকা ক্ষতির জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
অনিয়ম হয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতেও। নথিতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চারটি অফিসে নানা অনিয়মে ২৯ কোটি এক লাখ ৪০ হাজার ৬৬৫ টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ১০৯ জন গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল অনাদায়ী থাকায় ক্ষতি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৪ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সিস্টেম লস সীমিত রাখতে ব্যর্থতার কারণে ক্ষতি ছয় কোটি ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪ টাকা। নিখোঁজ ৫১ জন গ্রাহকের কাছে প্রাপ্য রাজস্ব অনাদায়জনিত ক্ষতি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৭২৬ টাকা এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এবং বিদ্যুতের মূল্যহার ও নিয়মাবলি উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা সত্তে¡ও ১২২ জন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ায় ২২ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার ২২১ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে (ডেসকো) নানা অনিয়মে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে তিন কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ৪৭০ টাকা। এরমধ্যে অবৈধভাবে লোড বৃদ্ধি করে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় না করায় ক্ষতি ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩১ টাকা, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এবং বিদ্যুতের মূল্যহার ও নিয়মাবলি উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা সত্তে¡ও ৪১ জন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ায় ৯৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪০ টাকা এবং ভাÐারে রক্ষিত মালামাল গায়েব করে সরকারের ২৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৬ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ক্ষতিজনিত টাকা আদায় ও দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।