Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩৫তম বিসিএসের কোটা পূরণ ৩৬তম-তে

মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব অনুমোদন

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ৩৫তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় পূরণ না হওয়া ৩৩৮টি পদ ৩৬তম বিসিএসের মেধাতালিকা থেকে পূরণের সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। এছাড়া ৩৬তম বিসিএসে প্রাধিকার কোটার ৭৩৭টি পদে পদ সংরক্ষণের বিধান শিথিল এবং ৩৫তম বিসিএসের চ‚ড়ান্ত ফলে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে (যারা ক্যাডার পাননি) ৮০২টি নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ৩৫তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটার অপূরণকৃত সংরক্ষিত পদ ৩৬তম বিসিএসর সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের শূন্য পদের সঙ্গে যোগ করে তা পূরণ এবং ৩৬তম বিসিএসে প্রাধিকার কোটার অপূরণকৃত পদ সংরক্ষণের বিধান শিথিল করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া না গেলে সেসব পদ খালি রাখার সিদ্ধান্ত আছে।
সরকারি কর্ম কমিশন বলেছে- ৩৬তম বিসিএসে ২ হাজার ১৮০টি শূন্য পদের মধ্যে কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারের জন্য ১ হাজার ৬৩৮টি পদ আছে। এসব পদের মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪৯১টি, ১০ শতাংশ মহিলা কোটায় ১৬৪টি, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ৮২টি পদ নিয়ে মোট ৭৩৭টি পদের বেশিরভাগই খালি থাকবে এবং তা সংরক্ষণ করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩৬তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সরকারের শর্ত শিথিল করলে ওইসব পদে নিয়োগ দেয়া যাবে জানিয়ে এ বিষয়ে সরকারের অনুমোদন চায় পিএসসি।
৩৬তম বিসিএসের জন্য প্রাধিকার কোটার পদ সংরক্ষণের বিধান শিথিল করায় ওই বিসিএসের মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে ওইসব পদ পূরণ করা হবে বলে জানান শফিউল আলম।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা যা ছিল তাই আছে, শুধু কোটা শিথিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রিসভা, সংবিধানেও কোটার বিধান আছে।
অন্যদিকে ৩৫তম বিসিএসে কৃতকার্য হয়েও যারা ক্যাডার পাননি তাদের মধ্য থেকে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট পদে ৩০২ জন এবং ধাত্রী পদে ৬০০ জনকে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ৩৫তম বিসিএসের চ‚ড়ান্ত ফলে ৫ হাজার ৫১৭ জন উত্তীর্ণ হলেও এদের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেয়েছেন ২ হাজার ১৫৮ জন। অন্যরা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করলে নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন। আর গত ৭ ফেব্রæয়ারি ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। এই বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার ১৮০ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশসহ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত আছে। তবে যোগ্যপ্রার্থী না পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অনেক পদ শূন্য রয়েছে। বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পদ স্বল্পতায় অনেকেই বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ পান না। এদের মধ্য থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিচ্ছে সরকার।
বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থী পাওয়া না গেলে ওইসব পদ খালি রাখতে ২০১০ সালে নির্দেশনা দেয় সরকার। এর আগে ৩২তম বিসিএসের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পূরণ না হওয়া এক হাজার ১২৫টি পদ ৩৩তম বিসিএসের মেধা তালিকা থেকে পূরণের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।
প্রাণী কল্যাণ আইনের খসড়া অনুমোদন :
মন্ত্রিসভা প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৬-এর নীতিগত অনুমোদন নিয়েছে। এই আইনে প্রাণী (পশু) হত্যা, তাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ ও অতিরিক্ত কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করলে জেল ও জরিমানার বিধান রাখা রয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ১৯২০ সালের বিদ্যমান নিষ্ঠুরতা আইন পরিবর্তন করে নতুন খসড়া আইনটি প্রণীত হয়েছে। মানুষ ছাড়া মেরুদÐী গৃহপালিত ও পোষা প্রাণী এ আইনের আওতামুক্ত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা, হত্যা ও তাদেরকে অতিরিক্ত কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করা হলে এ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে প্রাণী হত্যা ও গুরুতর আহতের ক্ষেত্রে ২ বছর জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং নিষ্ঠুর আচরণের জন্য ৬ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার অনুমোদিত কর্মকর্তা বা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর থেকে ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদা সম্পন্ন কর্মকর্তা এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দফতরে নিবন্ধন সাপেক্ষে পোষা প্রাণীর লালন-পালন ও প্রজনন ব্যবস্থা প্রাণিবান্ধব হতে হবে।
মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড (সংশোধন) আইন-২০১৭-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। এতে কতিপয় ক্ষেত্রে বোর্ডের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি কর্মচারীদের জটিল রোগের চিকিৎসা ব্যয় বহনে বোর্ডের মঞ্জুরির ক্ষমতা বর্তমান এক লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাছাড়া কল্যাণ বোর্ডের জন্য মাসিক চাঁদার পরিমাণ বর্তমানে ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে অনধিক ১৫০ টাকা অথবা মূল বেতনের প্রায় এক শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর যৌথ ইন্স্যুরেন্সের জন্য মাসিক সর্বোচ্চ কিস্তির প্রস্তাব বর্তমানে ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে।
সচিব জানান, প্রস্তাবিত আইনে মাসিক কল্যাণ ভাতা বর্তমানে এক হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা। সাধারণ চিকিৎসা অনুদান বর্তমান ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা। দাফন অনুদান বর্তমানে ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা এবং যৌথ ইন্স্যুরেন্সের জন্য এক কল্যাণ অনুদান বর্তমানে এক লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আইন ২০১৬ এর খসড়াও নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।
শফিউল আলম বলেন, মন্ত্রিসভা ২০১৩ সালের বর্তমান আইনের ধারা ১৭ সংশোধন করে শিশু (সংশোধন) আইন ২০১৭ নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী শিশু আদালত সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত শিশুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে। সাক্ষী হিসেবে আসা শিশুরা এই আইনের ১৭ ধারার আওতায় আসবে না। সংশোধনীতে আলাদা শিশু আদালতসহ এটি সার্বক্ষণিক চালু রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সঙ্গে শিশু অপরাধীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া যাবে না। পাশাপাশি একই মামলায় শিশু ও প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যাক্তিকে আসামি করা হলে, সেক্ষেত্রে শিশু আদালতেই শিশুদের বিচার করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ