Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

হালদার প্যারালাল খাল উদ্বোধন হলো ২২ বছর পর

কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন : পাঁচ হাজার আবাদী জমি কৃষকের মুখে হাসি

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী থেকে : হাটহাজারী উপজেলার বৃহত্তম ইরিদোলন প্রকল্প হালদার প্যারালাল প্রজেক্ট হাজারো জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ২২ বছর পর পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গত ১৭ ফেব্রæয়ারি উদ্বোধন করেন। ৪০ কোটি ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি আসন্ন মৌসুমে কৃষকের কাজে আসবে। পাঁচ হাজার আবাদী জমির কৃষকের মুখে এবার সোনালী সূর্যের হাসি ঝিলিক ভয়ে আনবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার পাহাড়ী উঁচু এলাকায় অনাবাদী জমিতে সারা বছর চাষাবাদের জন্য বৃহত্তর ইরিদোলন প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহয়তায় পানি উন্নায়ন বোর্ড প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। হালদা নদীর বোয়ালিয়া সুইচ গেইট সংযোগ পুল থেকে পশ্চিমে ও উত্তরে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এল আকৃতির প্রকল্পের কৃত্রিম খালকে দু’টি অংশে বিভক্ত করা হয়। সেচ সহজ করার জন্য প্রকল্পের মোহনায় স্থাপন করা হয় রিভার পাম্পিং প্ল্যান্ট এবং ৬ কিলোমিটার দূরে স্থাপন করা হয় হাই লেভেল পাম্পিং প্ল্যান্ট। প্যারালাল খালে প্রায় ১৭টি ¯øুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ৫০০ ফুট পর পর স্থাপন করা হয়েছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি সেতু। পাশাপশি অসংখ্য ড্রেনেজ সুড়ঙ্গ রাখা হয়। ১৯৯৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু করা হয়। প্রকল্পটি নির্মাণের ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় দেখা দেয় নানা যান্ত্রিক ত্রæটি। প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় প্যারালাল খালের আন্ডার ফ্লোরিং এর কথা থাকলেও এই ফ্লোরিং করা হয়েছে মাত্র কয়েক কিলোমিটার। অনিয়মের কারণের প্রকল্পে চালু পাম্প বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে দীর্ঘদিন প্রকল্পের কাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বন্ধ রাখে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে প্রকল্পের কিছু সেকেন্ডারি কাজ শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালিন পানিসম্পদমন্ত্রী ইরিদোলন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের সময় পরিক্ষামলূকভাবে সুইচ অন করেন। সে সময় নানা অনিয়মের কারণে কয়েক ঘন্টা চলার পর আবার বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। এর পর মন্ত্রী আবার প্রকল্পটির কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেও ৩/৪ বছর পরেও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে হালদার প্যারালাল খালটি অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা প্রকল্পটির বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সেতুর যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যায়। মূলত হালদার প্যারালাল খালটি এলাকার কৃষকদের সেচ সুবিধার কথা বিবেচনা করে বর্তমান মহাজোট সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আানিসুল ইসলাম মাহমুদ (এমপি) এরশাদ সরকারের আমলে মন্ত্রী থাকাকালীন ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই জন্য প্রকল্পটি আনিস খাল নামে সবার কাছে অতিপরিচিত। তিনি এরশাদ সরকারের আমলে এই খাল প্রতিষ্ঠা করার দীর্ঘ বাইশ বছর পর প্রকল্পের তৃতীয় দফা কাজ শেষ করে গত ১৮ ফেব্রæয়ারী পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ উদ্বোধন করেন। হালদা সম্প্রসারণ সেচ উপ-প্রকল্পটি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় চট্টগ্রাম নগর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি সড়কের উভয় পাশে এর অবস্থান। প্রকল্পটির উত্তর দক্ষিণ ২১.৫০ কিলোমিটার। পূর্ব পশ্চিম ৩.০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। প্রকল্পের পশ্চিমে সীতাকুন্ড পাহাড়, আর পূর্বে চট্টগ্রাম কর্ণফূলী সেচ প্রকল্প হালদা ইউনিট। বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢল হতে প্রকল্প এলাকা রক্ষা এবং শুল্ক মৌসুমে সেচ সুবিধার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উৎপাদন এবং কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি সর্ব প্রথম পর্বের কাজ শুরু হয় ১৯৮৬ হতে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। তৎকালীন এই প্রকল্পে ব্যয় হয় ৩৫ কোটি টাকা। বর্তমান এই সরকারে আমলে এলাকায় কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে উন্নয়নে বাংলাদেশ। পানি উন্নায়ন বোর্ড চট্টগ্রাম পওর সার্কেল দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল জোন পাউবো হতে আরো ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই বরাদ্দ নিয়ে বর্তমান প্রকল্পের কাজ প্রায় সমাপ্তির দিকে। তবে এখানে মজার বিষয় হলো যে হালদা প্যারালাল খাল বর্তমান পানি সম্পদ মন্ত্রী ও হাটহাজারীর কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ কৃষকদের কথা চিন্তা করে হাটহাজারী পাহাড়ী অঞ্চলে কৃষি সেচ সুবিধার জন্য ২২ বছর পূর্বে হালদা প্যারালাল খাল প্রতিষ্ঠিত করলেও দীর্ঘদিন পর তিনি মন্ত্রী হিসাবে এসে এই হালদা প্যারালাল খাল উদ্বোধন করেন। বর্তমানে কৃষকরা এই খাল থেকে সুবিধা ভোগ করছে। এই ব্যাপারে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান এই হালদা প্যারলাল খাল এলাকার গরিব কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে নির্মাণ করা হয়। আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছার প্রতিফলন হালদা সম্প্রসারণ সেচ প্রকল্প হালদা নদী হতে পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে ১৮২০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করায় এই প্রকল্পের মূূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি বর্ষার মৌসুমে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন খালের মাধ্যমে হালদা নদীতে নিষ্কাশিত হওয়া এবং ইরিদোলন ডাইক ও ব্রীজ কালভার্ট ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি ঘটানো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ