Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

“শেষ হয়ে গেল ১৪ জন নারী শিল্পীর চিত্র প্রদর্শনী”

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আঞ্জুমান আরা (রুমা) : মেঘে মেঘে কেটে যায় অনেকটা বেলা। সংসার, আর স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ততার প্রহরগুলো কাটে শিল্পী মনের অন্তঃপুরের সময়গুলো। সময় ক্ষেপণে কখনও মিলন মেলায়, কখনও গল্প, গুজব, চায়ের হৈ-হুল্লোড়-আড্ডায় কয়েক বন্ধু মিলে মনস্থির হলো- চল্্ আমরা প্রদর্শনী করি। যেই কথা সেই কাজ- শিল্পী বন্ধুদের মনে নাড়া দিয়ে যায় শিল্পী হওয়ার পুনঃবাসনা, জাগ্রত হয় চেতনার, উন্মুক্ত হয় শত বাধাবিঘেœর বন্ধ দুয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১৯৮৯-৯০ ব্যাচের ৩০ জন মেয়ে শিল্পীর মধ্যে ১৩ জন মিলে গড়ে ওঠে ‘কালার্স অফ থার্টিন’। সেটা ২০১৬ ফেব্রুয়ারিতে হয়েছিল প্রথম প্রদর্শনী। তার পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু হয়ে গেল প্রজাপ্রতির পাখা মেলে উড়ে যাবার। সাড়া মেলে চারদিক থেকে। এবারও তাই যোগ হলো আরেক সতীর্থের। সবাই মিলে ১৪ জন, নারী শিল্পীর শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয় ‘কালার্স অফ ফরটিনের’ প্রদর্শনী মাধ্যমে গত ৯ ফেব্রুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর-এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আরো ছিলেন বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। এই প্রদর্শনী চলে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
মন্ত্রী বলেন- শত ব্যস্ততার মাঝেও সৃষ্টিশীল প্রতিভা তাদের চেতনাকে জাগিয়ে রেখেছে। তারই প্রতিফলন আজকের এই প্রদর্শনী। দ্বি-মাত্রিক এবং ত্রি-মাত্রিক শিল্পকর্ম নিয়ে সাময়িক বিরতির পর তাদের এই ফিরে আসা শিল্পের প্রতি অদক্ষ ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতারই বহিঃপ্রকাশ। শিল্পচর্চায় তাদের এই পুনরাগমনকে আমি সাধুবাদ জানাই। শিল্পের সাথে তাদের পথচলা সুদীর্ঘ হোক সেই প্রত্যাশা রইল।
ফাল্গুনের প্রথম সকাল। চারদিকে বাসন্তি রং শাড়ি-চুড়ি আর চুলে হলদে ফুলগুঁজে মেয়েরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে সব দেখে মনটা যেন কেমন অন্যরকম ভাল লাগায় ভরে গেল। তারপর গ্যালারির ভিতরে ঢুকতেই-অপূর্ব সুন্দর সব শিল্পকর্মগুলো আমার মনকে দারুণভাবে আন্দোলিত করছিলÑ এত সুন্দর আর মনঃমুগ্ধকর কাজ আমাদের নারী শিল্পী বোনদের যাদের অনেকেই বহু বছর শুধুমাত্র স্বামী-সন্তান-সংসার সামলাতে সামলাতে অনেকটা সময় পার করে দিয়েছেন। তার পরও শিল্পীর শিল্প সত্তা তো কখনও হারিয়ে যায় না তার প্রমাণ মিললো এই প্রদর্শনীর সব শিল্পকর্ম দেখে।
প্রদর্শনী দেখতে দেখতে হঠাৎ আটকে গেলাম- বিমূর্ত এক শিল্প কর্মের কাছে গিয়ে ভীষণ রকম সুন্দর আর ভাললাগায় মনটা নেচে উঠলো অনেক অনেকভাবে বুঝতে চাইলাম শিল্পী কী বোঝাতে চাইছে। যা হোক ততক্ষণে এই শিল্পকর্মের শ্রষ্টা-কানিজ সোহানী ইসলাম ক্লাস শেষ করে চলে এসেছেন- তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘শিল্প কলার ইতিহাস’ বিভাগের পড়া শিক্ষক। আলাপচারিতায় উঠে এলো- তার ছবির অন্তনিহিত ভাব-রসের কথা তিনি বললেন- “ঞযব ঊঁঢ়যড়ৎরপ ঘধঃঁৎব ড়ভ ঘধঃঁৎব’-অর্থ- (স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ) প্রকৃতিরও নানা রং-রূপ-রস ও ছন্দ আছে। এটা আমরা শুধুমাত্র অনুভব করতে পারি। এই অনুভবটুকু মনের ভিতর জাগ্রত করে মানুষ ও তার আনন্দগুলো মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়াটাই স্বতঃস্ফূর্ততা এই বোধটাকে আমি আমার রং তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে তুলে এনেছি।” তিনি আরো বলেন- একজন নারীকে তার অবস্থান তৈরি করতে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়- স্বামী-সন্তান সামলাতে। হয়তো কেউ তাকে বাধা দেয়নি তারপরও সন্তান লালন-পালনও তার কাছে একটি শিল্পের মতো সুন্দর। একজন নারী যদি তার সন্তানকে ঠিকমতো সুচারুরূপে পরিচর্চা করে, শিক্ষায় শিক্ষিত মানবতাবোধসম্পন্ন মানুষ করতে না পারে তাহলে সেই নারীর শিল্পীর শিল্পী হওয়ার যোগ্যতা কতটুকু আছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাই সংসার, ধর্মও বিশাল ১টি শিল্প। যদিও অনেকটা সময় ক্ষেপণ হয়েছে তারপরও উঠে দাঁড়াবার জন্য এটা কোন ব্যাপার না। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে চারদিক থেকে আমরা যে সাড়া পাচ্ছি সেটা আমাদের সামনে এগুবার পথ আরো খুলে দিচ্ছে। আমাদের অনেকের মনে উৎসাহ বেড়ে গিয়েছে। কেউ ইচ্ছা করলে একক প্রদর্শনীও করার সাহস সঞ্চয় করতে পারছি।” ব্যক্তি জীবনে কানিজ সোহানী ইসলাম দুই সন্তানের জননী ও বাংলাদেশের বিখ্যাত পোট্রেট আঁকিয়ে শাহজাহান আহমেদ বিকাশের সহধর্মীনী রেহেনা ইয়াসমিন শীলা। আমি যেহেতু ভাস্কর্যের ছাত্রী। সুতরাং কাদা-মাটি, লোহা লক্কড়, মেটাল সবকিছু নিয়ে মিস্ত্রিদের মতো কাজ করতে হয় সুতরাং ঐ রকম পরিবেশ সৃষ্টিকরা এক রকম কঠিনই। তাই বিয়ে ও সন্তান-সংসার সামল দিয়ে একটু ডিফিকাল্টই ছিল আমার জীবনযাপন। তারপরও স্বামীর আর্থিক ও মানসিক সহযোগিতায় আমি বেশ কিছু এক্সিভিশনে অংশ নিয়েছি। সামনে মিয়ানমার ও চিটাগঙ্গ যাবো। এবং ইন্ডিয়াতে প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা আছে এসব কিছুই কিন্তু আমি আমার সংসার বাচ্চা-শাশুড়ি-স্বামীকে মেনটেইন করে করি। সুতরাং কষ্ট একটু হলেও সমস্যা তেমনি হয় না। তাই আমি আমার স্বামী (মো. এনামুর রহিম আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের সুপার ভাইজার)-এর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি মূলত পুরনো মরে যাওয়া গাছের গুঁড়ি, গাছপালা, লতা-পাতার প্রতি খুব দুর্বল তাই সেই সব পুরনো কিছু দিয়ে একটা সুন্দর আটিস্টিক অতীত তুলে এনে তাকে শিল্পে রূপ দিতে খুব ভালবাসি। তেমনি ঈযরষফযড়ড়ফ আমার ছেলেবেলাকে মনে করিয়ে দেয় যেখানে ছোট্ট ১টি কিশোরী গাছের ডালে দোল খাচ্ছে। যে শৈশব আমি হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগে। আমার এই শিল্পকর্মটি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গতবারও আমাদের প্রদর্শনীর বেশিরভাগ শিল্পকর্ম বিক্রি হয়ে গিয়েছিল যা আমাদের দ্বিগুণভাবে উৎসাহিত করেছে। আমরা মেয়ে শিল্পীর যদি এই ভাবে কাজ শুরু করি তা’হলে আমাদের জায়গাটা আরো সুদৃঢ় হবে বলে আমি মনে করি। সুন্দরবন নিয়ে মিক্স মিডিয়াতে কাজ করেছেন সুকন্যা আইন, অত্যন্ত ঠা-া আর ধৈর্যশীলা বলে দীর্ঘ পাঁচ বছর রোগের সাথে যুদ্ধ করেছেন তারপরও থেমে থাকেননি শিল্প চর্চা থেকে তবে পুরোদমে ছবি না আঁকলেও লে-আউট করে রাখতেন সেগুলোরই কাজ পরবর্তী সময়ে কন্টিনিউ করেছেন। শিল্প চর্চার সবগুলো মাধ্যমই তাকে টানে তৈল চিত্রও এতে বাদ যায় না। তাই এবারের প্রদর্শনীতে তিনি সুন্দরবন ও সমান্তরাল নামে দু’টো ছবি এঁকেছেন। দু’টোই চমৎকার। তবে আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে তার সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্যটি যেখানে ক্ষয়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ এর কাছে হরিণ শাবকগুলো নিজের আশ্রয়স্থলটুকু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। দৃশ্যটি দেখে আমার মনের ভেতরটা কেমন মুচড়ে উঠেছে মনে হচ্ছে পথ হারিয়ে হরিণ শাবকগুলা বিচলিত। কোথায় যাবে কী করবে ভেবে ভেবে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আমার কেবলই মনে হয়েছে যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে সুন্দরবন ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে এটা যেন তারই পূর্বাভাস। তবে চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের মনোমুগ্ধকর রং আর তুলির আলো-ছাঁয়ার খেলা আর ধোঁয়া ধোঁয়া নিঃশীম বিস্তৃত বনভূমির ধ্বংসাবশেষটি শিল্পকর্ম হিসেবে আমার কাছে অসাধারণ সৃষ্টি। দুই সন্তান আর স্বামী সোহেল রানা রিপনকে নিয়ে তিনি খুবই ভাল আছেন। স্বামীর ঐকান্তিক সহযোগিতা তাকে নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গ্রুপ এক্সিভিশন আগেও হয়েছে তবে ভবিষ্যতে একক প্রদর্শনী করার সাহস সঞ্চয় হয়েছে এই দুই বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কথাটি জানালেন শিল্পী সুকন্যা আইন।
ফারহানা আফরোজ বাপ্পিÑ চারুকলা অনুষদের ছাপচিত্র বিভাগের ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও বাপ্পি শিল্প চর্চার সব মাধ্যমেই নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। কাঠের কাজ, ভাস্কর্য নির্মাণ, জল রং, তৈল চিত্র সব কিছুতে সমান দক্ষতার এগিয়ে আছেন তাইতো গত ১৬ বছর ‘বাঙাল ফ্যাশন হাউজে’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ডিইজাইনার হিসেবে সমাদৃত।  তারপরও শিল্পীর মনের ক্ষুধা কি মিটে? তাইতো তিনি ভাবছেন আর অন্য কোন কাজ নয় শুধু ছবি আঁকবেন আর ছবি আঁকবেন সন্তানরা একটু বড় হয়েছে- তাদের নিয়ে এত টেনশন নেই। তাই ভবিষ্যৎ এর সময়গুলো নিজের শিল্প চর্চার বিমগ্ন থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এই পর্যন্ত তিনি বেশ ক’টি গ্রুপ এক্সিভিশনে অংশ নিয়েছেন তবে একক প্রদর্শনী করার সাহস এতদিন পাননি। কিছুদিন আগে নেপালের পার্লগ্যালারিতে এই শিল্পীর ১টি গ্রুপ এক্সিভিশন হয়েছে ভবিষ্যতেও দেশে-বিদেশে আরো এমনি আয়োজনে অংশ নিবেন বলে আশা করছেন। এবারের কার্লাস অফ ফরটিনে তার (দু’টো তৈলচিত্র স্থান পেয়েছে। ওসঢ়ৎবংংরড়হ-১ ও ওসঢ়ৎবংংরড়হ-২ নামে। এখানে তিনি হলদে ও ম্যাজেন্ডা কালারের কম্পোজিশন দেখিয়েছেন এক্রেলিক তৈল কালার দিয়ে।
মুক্তি ভৌমিকÑ সদা হাসি খুশিতে ভরপুর চঞ্চল উচ্ছ্বল স্বভাবের মেয়ে মুক্তি ভৌমিক সবার কাছে খুব প্রিয় সহপাঠী। সতীর্থ বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বছরান্তে, মিলন মেলা, স্বামী, সন্তান, সংসার গুছিয়ে শিল্প চর্চা করেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। পড়াশুনা শেষ করার পর বিয়ে-ঘর-সংসার-সন্তান সামলাতে হয় প্রতিটা নারীকেই এটা নতুন কিছু নয়। তবে সহপাঠী বন্ধুদের সাথে নিয়ে ২০১৬ ও ২০১৭-তে যে গ্রুপ এক্সিভিশন হলো এটা মুক্তি ভৌমিককে অনেক বেশি আনন্দ দিয়েছে। এছাড়াও তার দেশে-বিদেশে বেশ কয়েকটা গ্রুপ এক্সিভিশন হয়েছে। সামনে ইন্ডিয়াতেও যাবেন চিত্র প্রদর্শনী করতে-এ ব্যাপারে তার স্বামী অবৈত কুমার রায় এর ব্যাপক উৎসাহ। মুক্তি বলেন- আমার স্বামীর আগ্রহ ও শিল্পানুরাগের কারণে আজকে আমার এই অবস্থান তার উৎসাহ প্রেরণা না থাকলে আমি হয়তো এতটা কাজ করার সাহসই পেতাম না। কার্লাস অফ ফরটিনে আমার ৪টি ভাস্কর্য ও দুইটি তৈল চিত্র স্থান পেয়েছে। আমি নিজের যেহেতু মেয়ে তাই আমার শিল্পের বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে নারী চরিত্রই স্থান পায়। তেমনি ঝযবঢ়যবৎফবংং অর্থাৎ মেয়ে রাখাল আমার অন্যতম শিল্পকর্ম যেটাতে আমি দেখাতে চেয়েছি। বর্তমানের এই বিশ্বায়নের যুগে সকল ক্ষেত্রে নারীরা যেহেতু এগিয়ে এসেছে তা’হলে মেয়ে রাখাল হলে কেমন হয়? ঠিক তাই দর্শকরা এই ব্যাপারটাতে দারুণভাবে সাড়া দিয়েছে। সবাই সাদরে তা গ্রহণ করেছে। আসলে ছেলে-মেয়ে আলাদা কোন সত্তা নয় বরং কাজের ক্ষেত্রে সবাই সমান।
শায়েলা আক্তারÑ সুঁই-সুতা দিয়ে কাজ করেছেন শায়েলা আক্তার। এবারের ‘কার্লারস অফ ফরটিনে’-এ তার তিনটি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। (১) তিন কন্যা, (২) যুগল (৩) নির্জনে। তিন কন্যা ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এখানে তিন কন্যা মানে তিন জন বান্ধবী, কন্যা-জায়া-জননী, অথবা মা ও তার দুই কন্যাকেই নিয়ে গল্প করছে এমনই নানান ধরনের কল্পচিত্র এখানে দর্শক বুঝে নিতে পারেন এটাই এই ছবির উপজীব্য। এখন এই সময়গুলোতে আমার শিল্প চর্চা করতে একটু সমস্যা হয় না। আমার পরিবারের সবাই আমাকে খুব সার্পোট করে থাকে। বিশেষ করে আমার স্বামী কাইমুন ইসলাম যদিও আমার শিল্পচর্চার যার বারইনারী চরিত্রগুলো উঠে এসেছে তার পরও আমি নারী-পুরুষ আলাদা কোন সত্তা হিসেবে মেনে নিতে পারছি না কারণ হিসেবে বলতে পারি নারী-পুরুষ সবাই রক্তমাংসে গড়া মানুষ। শিল্পী শুধুই শিল্পী সে নারী বা পুরুষ শিল্পী বলে আলাদা কোন সত্তা নয়।
মোর্শেদা হক বকুল- ‘কার্লাস অফ ফরটিন’-এ একমাত্র মোর্শেদা হক বকুলের কাঠ খোদাই করা দু’টো শিল্পকর্ম যার দিকে অটোমেটিক কেমন করে যেন চোখ চলে যায়। এর রং ও কাজের ভিন্নতার কারণে। খুব যতœ করে শিল্পী বকুল তার ছবিতে মেটাল ও রং-এর ব্যবহার দেখিয়েছেন। ছবি দু’টো উজ্জ্বল চক চকে। এখানে ১টি নারীর মুখশ্রী। এই ছবিটি নারীর সাথে গাছপালা, পাখী, লতা, পাতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে এসব তিনি তার ছবি সম্পর্কে বললেন। আরো বললেন- স্বামী ফায়কুজ্জামানও একজন শিল্পী তাই দু’জন মিলে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কাজ করেন। তাদের নিজস্ব অফিস উত্তরায়। চারুকলার ফাইন আর্টস থেকে পাস করার পর স্বামী হিসেবে একজন শিল্পীকে পেয়ে তার জীবন চলার পথগুলো খুব সহজ ও মসৃণ হয়েছে সেই জন্য স্বামীর প্রতি তিনি খুবই কৃতজ্ঞ। কাঠ, মাটি, মেটাল, ওল, সুতা ও জল রং, তেল রং শিল্পের সব মাধ্যমেই তার দক্ষতা রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। সবাইকে নিয়ে তার সুখের সংসার। বর্তমানে শিল্পচর্চা চালিয়ে যাবেন বলে উত্তরায় অবস্থিত কার্নিভাল স্কুল এন্ড কলেজের পার্টটাইম আর্ট টিচার হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
নিশাত চৌধুরী জুইÑ ছোট্ট বেলায় মা আদর করে তাকে জুই ফুল বলে ডাকতেন। এই শিল্পী ক্যানভাসে ডিমের খোসা আঠা দিয়ে লাগিয়ে তার উপর এক্রেলিক কালার ব্যবহার করে খুব সুন্দর সূর্যমুখী ফুল এঁকেছেন। যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। সদা হাসি-খুশিতে ভরপুর তিনি একাধারে কবি, ভালো লেখিকা, রান্না-বান্নায় পটু সুগৃহিণী বটে। চারুকলার ২য় বর্ষের ছাত্রী থাকাকালীন সময় তার বিয়ে হয়ে যায় তাই সন্তানরাও বড় হয়ে গিয়েছেন। নিজের বাড়িতেই ছোট্ট ১টি আর্ট স্কুল চালান, আর ঘর কন্যার নানান কাজও করেন। পাশাপাশি নিজের শিল্পচর্চায়ও মনোনিবেশ করেছেন। বহুদিন নিজের সহপাঠীদের সাথে কাজ করে জীবনটাকে খুবই অর্থপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে তবে তিনি ছবি আঁকা আর ছাড়তে চান না বলে আমাকে জানালেন। এক সময় তিনি কয়েকটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতাও করেছিলেন। সন্তান ছোট্ট ছিল বলে সব ছেড়ে দিয়েছেন।
সাত দিনব্যাপী প্রদর্শিত হওয়া প্রদর্শনীটির সমাপ্তি হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এই সাত দিনে এর প্রাপ্তি অনেক। শিল্পীদের প্রায় সবগুলো শিল্পকর্মই বিক্রি হয়েগিয়েছে। দর্শন নন্দিত হয় ব্যাপক। প্রচার ও প্রসার হয়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। বহুদনি পর উঠে আসা শিল্পীদের নাম ও যশ যা তাদের আগামীর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। এছাড়াও এই প্রদর্শনীতে রিফাত জাহান কান্তা, মরজিয়া সুমি, মনি ডিপা দেশগুপ্তা, মনিরাসুলতানা, রেবেকা সুলতানা ও ফারজানা ইসলাম মিল্কির শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল কিন্তু স্থান স্বল্পতার কারণে সবার কথা বলা হলো না।





 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন