Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অধ্যাপক আবদুল গফুরের ৮৮তম জন্মদিন আজ

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুরের ৮৮তম জন্মদিন আজ। সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী প্রবীণ ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাবেক কলেজ শিক্ষক ও বর্তমানে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ফিচার সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্ম আবদুল গফুরের জন্ম ১৯২৯ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি রাজবাড়ী জেলার দাদপুর গ্রামে। মেধাবী ছাত্র আব্দুল গফুরের শিক্ষা জীবনের শুরু পিতার প্রতিষ্ঠিত গ্রামের মক্তবে।
১৯৪৫ সালে সমগ্র বাংলা ও আসামের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ফরিদপুর ময়েজ উদ্দীন হাই মাদরাসা থেকে হাই মাদরাসা (প্রবেশিকার সমমানের) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা গভর্নমেন্ট ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে সরকারি নজরুল কলেজ) থেকে ঢাকা বোর্ডের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় নবম স্থান অধিকার করেন।
ছাত্র-জীবনেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ফাইনাল অনার্স পরীক্ষার মাত্র দু’মাস আগে ভাষা আন্দোলনসহ তমদ্দুন মজলিসের কাজে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে আত্মনিয়োগ করার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। ফলে দীর্ঘ ১১ বছর পর ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সমাজকল্যাণে এমএ ডিগ্রি নিতে হয়।
১৯৪৭ সালে ছাত্রাবস্থায় তিনি পাক্ষিক জিন্দেগী পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিস কর্তৃক প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’ এর সহকারী সম্পাদক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তাঁর ছিল অনন্য সাধারণ ভূমিকা।
এতে তিনি সুধীজনের প্রশংসা অর্জন করলেও সরকারের কোপানলে পড়েন। তিনি ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ফলে সরকার তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তিনি ১৯৫৭ সালে দৈনিক মিল্লাত ও ১৯৫৮ সালে দৈনিক নাজাত-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পূর্বসূরি প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম ‘ইসলামিক একাডেমির সুপারিন্টেডেন্ট পদে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে এম এ পাস করার পর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীন চট্টগ্রাম জেলা যুব কল্যাণ অফিসার পদে যোগদান করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজে অধ্যাপনা করেন। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আজাদ পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিক ‘পিপলস’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক এবং ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সূচনা থেকে তিনি এই পত্রিকার ফিচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনি ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস ছাড়াও বাংলা একাডেমি, নজরুল একাডেমি, আবুজর গিফারী সোসাইটি প্রভৃতি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০০৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ইসলাম, বিপ্লবী উমর, কর্মবীর সোলায়মান ঝড়পরধষ ডবষভধৎব, ঝড়পরধষ ঝবৎারপব, সমাজকল্যাণ পরিক্রমা, কোরআনী সমাজের রূপরেখা, খোদার রাজ্য, ইসলাম কি এ যুগে অচল, ইসলামের জীবন দৃষ্টি, রমজানের সাধনা, ইসলামের রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য, আসমান জমিনের মালিক, শাশ্বত নবী, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশ আমার।
স্বাধীনতা, স্বাধীনতার গল্প শোনো, আমার কালের কথা প্রভৃতি। এছাড়াও ইংরেজি ও বাংলায় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ইসলাম ও সমসাময়িক বিশ্ব প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর আরো অনেক গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষা রয়েছে। তার ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে এক আলোচনা সভা আজ বিকাল ৪টায় তমদ্দুন মজলিসের মহানগর কার্যালয় ৭০ হোসাফ শপিং কমপ্লেক্স, মালিবাগ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ