পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রাজধানীসহ সারাদেশে গড়ে উঠেছে শত শত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগেরই অনুমোদন নেই। নেই অভিজ্ঞ চিকিৎসক, কর্মী ও পরীক্ষা-নীরিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ। অনুমোদনহীন এসব কেন্দ্রে মাদকাসক্তের চিকিৎসার নামে চলছে মাদক ব্যবসা। যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও নেই। এতে করে প্রতারিত হচ্ছে হাজার হাজার মাদকাসক্ত রোগী ও তাদের পরিবার। রাজধানীর প্রতি থানা এলাকায় গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সে রকম নজির নেই বললেই চলে। তারপরেও এগুলো চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। আবার মাদকাসক্ত ও মাদকবিরোধী জনসচেতনতা গড়ার নামে সারাদেশে প্রায় আড়াইশ’ এনজিও কাজ করছে। তাদের বেশিরভাগ কার্যক্রম বার্ষিক মাদক দিবস পালনের মিছিল, মিটিং, সেমিনার আর র্যালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এসব এনজিও শুধু মাদক বিরোধী জনসচেতনতার নামে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রতি বছর গড়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, সারা দেশে প্রায় ১২শ’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে। বাস্তবে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। এর মধ্যে ১৮০টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন রয়েছে। বাকিগুলো অনুমোদনহীন। অথচ অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠান দেশের লাখ লাখ মাদকাসক্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে চলেছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। গত দুই বছরে ৯টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্তি পরামর্শ কেন্দ্র, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ২০০৫ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি বিধিমালা প্রণীত হয়। ৪(খ) বিধিমালায় বলা হয়েছে, এ ধরনের কেন্দ্র সুরক্ষিত পাকা বাড়িসহ আবাসিক এলাকায় হতে হবে। এতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সুবিধাসহ নিরিবিলি সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। কেন্দ্রে একজন মাদকাসক্ত রোগীর জন্য গড়ে কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বহুতল ভবনের তৃতীয় তলা বা তার চেয়ে ওপরের তলায় অবস্থিত হলে লিফট থাকতে হবে। বিধিমালার গ ধারায় বলা আছে, প্রতি ১০ বিছানার জন্য আলাদা একটি টয়লেট ও পানির সুব্যবস্থাসহ কমপক্ষে একজন মনোরোগ চিকিৎসক (খÐকালীন বা সার্বক্ষণিক), একজন চিকিৎসক, দু’জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা বয়, একজন সুইপার বা আয়া এবং জীবনরক্ষাকারী উপকরণ ও অত্যাবশ্যক ওষুধপত্র থাকতে হবে। অথচ রাজধানীর বেশিরভাগ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে এসব নিয়ম মানা হয় না।
কয়েকটি মাদকাসক্তি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কেন্দ্রই অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গড়ে উঠেছে। যাত্রাবাড়ীর দিশারী কেন্দ্রটি তার মধ্যে অন্যমত। এই কেন্দ্রে রোগী থাকে না বললেই চলে। তারপরও বছরের পর বছর ধরে চলছে। একইভাবে চলছে দয়াগঞ্জ মোড়ের হাদী মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্র, যাত্রাবাড়ীর নতুন জীবন, তেজগাঁওয়ের আরাধনা, মিরপুরের আহমদনগরে হিরা, উত্তর বিশিলের পরিবর্তন, শ্যামলীর নিরাময়, খিলগাঁও রেলগেটসংলগ্ন নির্বাণ, খিলগাঁওয়ের রূপান্তর, সিপাহীবাগের সৃষ্টি, শান্তিপুরের স্বপ্ন, মোহাম্মদপুরের বারাক, মনোরোগ চিকিৎসালয়, মোহাম্মদী হাউজিংয়ে জীবনের ঠিকানা, ঢাকা উদ্যানে ফিউচার, জীবনের আলো, নিউ তরী, আজিজ মহল্লায় নতুন জীবনে ফিরে আসা, উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে রি-লাইফ, ৭ নম্বর সেক্টরে ফেরা, ৪ নম্বর সেক্টরে গ্রিন লাইফ, ৩ নম্বর সেক্টরে দীপ জ্বেলে যাই, উত্তর শাহজাহানপুরে নির্বাণ, মতিঝিলের হলি লাইফ, বাড্ডার ছোলমাইদ, ক্লিন লাইফ, নবজন্ম, এভারগ্রিন, রামপুরায় সমর্পণ, স্নেহনীড়, খিলগাঁওয়ে আশার আলোসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, মাঝে-মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালিত হয়। তাতে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের একটিও বন্ধ হয়নি। বরং জরিমানা দেয়ার পর এরা আরও চুটিয়ে ব্যবসা করে।
ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে জানা গেছে, নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসার নামে মাদকাসক্ত রোগীদেরকে নির্যাতন করা হয়। এই নির্যাতনে গত দুই বছরে ৯টি নিরাময় কেন্দ্রে ৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। আবার নির্যাতন করে মাদকাসক্তের হাতে জীবন দেয়ার ঘটনাও আছে। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ার ২৪০/৩ নম্বর ভবনের লাইফ লাইন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের তত্ত¡াবধায়ক বশির উদ্দিনের (৪০) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জিমি, জসিম ও কাজী আনোয়ার পারভেজ অনি নামে তিন মাদকাসক্ত রোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, তত্ত¡াবধায়ক বশির উদ্দিন ওই নিরাময় কেন্দ্রের রোগীদের নির্যাতন করতেন। ঠিকমত খেতেও দিতেন না। এতে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েকজন মিলে বশিরের হাত-পা বেঁধে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার বোরহান উদ্দিন নামে একজন অভিভাবক জানান, তার এক ভাই মাদকাসক্ত। তাকে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেখেছেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই সেবার নামে ব্যবসা করছে। চিকিৎসা সুবিধা বলতে কিছু নেই। তিনি জানান, বেশিরভাগ কেন্দ্রেই চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন, মাদক থেকে মুক্ত করার পরিবর্তে চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে মাদক সেবন করানো, জেলখানার আসামিদের মতো বন্দি করে রেখে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করা হয় এসব কেন্দ্রে। জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বলেন, আসলে মনিটরিংয়ের অভাবে দিন দিন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের আবেদন পড়ে থাকার কথা জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা লোকবলের অভাবে অনেক কিছুই করতে পারি না। তবে মাঝে-মধ্যে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোয় অভিযান চালানো হয়। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কথা বলা নিষেধ জানিয়ে ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।