Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভ্যালুওয়াক : যুক্তরাষ্ট্র ও তার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের চোখে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় অক্ষম প্রদর্শন করতে সহিংস সন্ত্রাসী হামলায় দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার কাজে ভারত আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে থাকতে পারে।
পাকিস্তানকে একটি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ ঘোষণা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভারত যখন আবার দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে তখন পাকিস্তানিরা এ সপ্তাহে সংঘটিত বর্বর সহিংস হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার সিন্ধুতে এক সূফি দরবেশের মাজারে হামলা। এতে ৮৮ জন নিহত হয়। অন্যদিকে সোমবার লাহোরে এক বোমা হামলায় নিহত হয় ১৬ জন।
দেশে সহিংস সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র কার্যালয় বলেছে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চলছে আর তাতে ভারত জড়িত। বোমা হামলার পর পাকিস্তান দ্রæত জবাব হিসেবে আফগানিস্তানের সাথে সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং আফগানিস্তানের দু’টি প্রদেশে রকেট হামলা চালায়। শুধু তাই নয়। পাকিস্তানি তালিবান সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালিয়েছে। এতে সারাদেশে ১শ’রও বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে।
ভারতের সাথে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠার মধ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে এই সহিংস ও ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়। দু’ প্রতিবেশী দেশ ক’দিন আগে একই দিনে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পারমাণবিক পেশি সম্প্রসারিত করে যা ইতোমধ্যে তাদের যুদ্ধাবস্থার মতো সম্পর্কে আরো উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পাকিস্তান
বহু পাকিস্তানির দৃষ্টিতে ভারতের এসব চেষ্টা সন্ত্রাস নির্মূলে তাদের দেশের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার কুখ্যাত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তালিকায় পাকিস্তানকে যুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করবে (ট্রাম্পের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক পাকিস্তানকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণায় ভারতের চেষ্টাকে শক্তি যোগাবে)। তাই তারা মনে করে এ সপ্তাহে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলাসমূহের পিছনে আসলেই ভারত জড়িত থাকতে পারে।
লাহোরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তান পররাষ্ট্র অফিসের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বলেন, ভারত সন্ত্রাসী কর্মকাÐে জড়িত রয়েছে। তিনি বলেন, তদন্ত চলতে থাকার পাশাপাশি ইসলামাবাদ সরকার পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাÐে ভারতের জড়িত থাকার বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে উত্থাপন করেছে।
জাকারিয়া জোর দিয়ে বলেন, লাহোর হামলার পরিকল্পনা করা হয় আফগানিস্তানে। পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে চলে যায়। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী সে দেশে প্রবেশ এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে বা শাস্তি দিতে পারে না। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে চলমান অস্থিতিশীলতা সন্ত্রাসীদের সেখানে আশ্রয় পেতে সহায়তা করছে। বহু পাকিস্তানি মনে করে, ভারত পাকিস্তানি তালিবান সন্ত্রাসীদের আফগানিস্তানে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে।
পাকিস্তানে রক্তাক্ত সপ্তাহ
বৃহস্পতিবারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮ এবং আহত হয়েছেন ৩৪৩ জন। তবে সিন্ধুর সূফী দরবেশের মাজারে হামলাই পাকিস্তানে এ সপ্তাহের একমাত্র হামলা নয়। দেশটিতে সূফী, শিয়া মুসলমান ও খ্রিস্টানসহ সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় গ্রæপকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। সোমবার লাহোরে চেয়ারিং ক্রসে এক বোমা বিস্ফোরণে ১৬ জন নিহত ও ৭৩ জন আহত হয়। একটি নতুন আইনের বিরুদ্ধে শত শত ফার্মাসিস্ট রাস্তায় মিছিল করার সময় বোমা হামলা চালানো হয়।
বুধবার উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের পেশাওয়ারের চারপাশের গ্রামগুলো লক্ষ্য করে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ৭ জন নিহত হয়। পাকিস্তানি তালিবান উপদল জামায়াত-উল-আহরার এ হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছে। এ সব হামলার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থায় পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী দেশব্যাপী ১শ’ জঙ্গিকে হত্যা ও বহু লোককে আটক করেছে। সিন্ধুর মাজারে হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ অভিযান চালায় সৈন্যরা।
সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের প্রত্যার্পণের দাবি
সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তান এ ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে এমন ৭৬ জন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর একটি তালিকা আফগানিস্তানের কাছে প্রেরণ করেছে। এ ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে এবং তদন্তের জন্য সন্দেহভাজনদের পাকিস্তানের কাছে প্রত্যার্পণের জন্য ইসলামাবাদ কাবুলকে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত সে অনুরোধ উপেক্ষা করেছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতরে আফগান কর্মকর্তাদের কাছে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের তালিকা হস্তান্তর করা হয়। তবে তালিকায় কাদের নাম আছে সে ব্যাপারে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কিছু বলেনি। দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ যে পাকিস্তানি তালিবানের প্রধান মোল্লা ফজলুল্লাহ ও গ্রæপের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আফগানিস্তানে পালিয়ে আছেন এবং নিয়মিতভাবে পাকিস্তানে সন্ত্রাস চালাচ্ছেন। মাজারে হামলার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তান আফগানিস্তানের সাথে তার সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। সে দেশে থাকা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাবুল সরকারকে বাধ্য করতেই পাকিস্তান এ পদক্ষেপ নেয়।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বাকযুদ্ধ কোনো নতুন ঘটনা নয়। উভয় দেশ তাদের স্ব-স্ব দেশে গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার জন্য পরস্পরকে অভিযুক্ত করে থাকে।
ভারতের সামরিক চাপ বাড়ায় চীনা হুঁশিয়ারি
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস দমন কমিটির পাকিস্তানের জয়শ-ই-ইসলামী প্রধান মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার এক সপ্তাহের অল্প সময় পর পাকিস্তানে এ সপ্তাহের বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলাগুলো সংঘটিত হলো। হতে পারে যে আজহারকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টার পর এ সব সন্ত্রাসী হামলা কাকতালীয় ঘটনা। তবে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদপত্র গেøাবাল টাইমস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে যে ভারত ‘সন্ত্রাস দমন ক্রুসেডে’র অজুহাতের আওতায় পাকিস্তানের উপর সামরিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে।
চীন হচ্ছে আজহারকে নিষিদ্ধের বিরোধিতাকারী কমিটির একমাত্র সদস্য। চীনা দৈনিক হুঁশিয়ার করে বলে যে ভারতের এ ধরনের পদক্ষেপ দু’টি পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। গত সেপ্টেম্বরে উরি হামলার পর থেকে বিভিন্ন ঘটনায় দু’দেশ যুদ্ধের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে।
এ উত্তেজনা গোটা পরিস্থিতিকে এমন নাজুক ও হতাশাপূর্ণ করে তুলেছে যে সম্ভাব্য যুদ্ধে একে অপরকে ধ্বংস করার জন্য ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ভাÐার বাড়িয়ে চলেছে। এমনকি পারমাণবিক প্রাধান্যও যথেষ্ট নয় মনে করে তারা তাদের সামরিক ব্যয় বাড়িয়েই যাচ্ছে।
এ মাসের গোড়ারদিকে জানা যায় যে, ভারত রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইসরাইলসহ কয়েকটি দেশের সাথে বেশ কয়েকটি সামরিক চুক্তি করেছে। গত চার মাসে এ সব চুক্তির আর্থিক পরিমাণ ছিল ৩শ’ কোটি ডলার।
ভারত কেন পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্য করবে
এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে পাকিস্তান ডিফেন্স-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, ভারত লাহোর সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী হতে পারে। ডেইলি পাকিস্তানের মতে, ৫ মার্চ পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ফাইনাল আয়োজন থেকে লাহোরকে বিরত রাখার লক্ষ্যে এটা করা হয়ে থাকতে পারে। পাকিস্তান সুপার লিগের ফাইনাল খেলা মার্চে লাহোরে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণার কয়েক দিন পর লাহোরের এ বর্বর হামলা সংঘটিত হয়। নিবন্ধে বলা হয় যে, পাকিস্তানে খেলা ফিরে আসুক ভারত তা চায় না।
নিবন্ধে বলা হয়, ভারত কেন পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসা চাইবে যখন সে পাকিস্তানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য শত শত কোটি রুপি ঢালছে? এতে আরো বলা হয়, ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলংকা ক্রিকেট টিমের উপর নির্মম সন্ত্রাসী হামলার জন্য ভারত দায়ী যার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজের বিষয়টি পÐ করা। উল্লেখ্য, পাকিস্তানে তখন স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলে দেশটি ক্রিকেট বিশ^কাপের সহ-আয়োজক হতে পারত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ