Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের রহস্যজনক বাংলাদেশ প্রেম!

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : মিডিয়ায় প্রকাশিত গতকালের ছোট্ট একটি খবর নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা-সমালোচনা বিতর্ক হচ্ছে। খবরটি হলো- ভারত ঘোষণা করেছে ঢাকায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ভারতীয় ভিসা ক্যাম্প খোলা হচ্ছে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এ সুযোগ নিতে পারবে। এছাড়া ই-ভিসা নিয়ে বিমানে ভারতে ভ্রমণে গেলে পার্যটকদের মতো তাদের ফ্রি-সিমকার্ড দেয়া হবে। ওই সিমে ৫০ টাকার টক টাইম এবং ৫০ এমবি ইন্টারনেট ডাটা থাকবে। ৩০ দিন মেয়াদী ওই সিমে থাকবে ভারতের বিভিন্ন পর্যটন হেল্পলাইনের নম্বর। অবশ্য খবরে বলা হয় ইলেকট্রনিক ভিসা (ই-ভিসা) নিয়ে যে কেউ ভ্রমণে গেলে তাদের ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের (বিএসএনএল) মোবাইল সিমকার্ড বিনামূল্যে দেয়া হবে। বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন আরও দৃঢ় করা। খবরে আরো কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে। ভারত ভ্রমণে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া নিয়ে প্রশ্ন নয়। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন অন্যত্র। হঠাৎ করে কেন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতীক দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর পরিবারের সদস্যদের জন্য পৃথক ভিসা ক্যাম্প এবং ভ্রমণ সুবিধা দেয়ার চিন্তা করলো ভারত? নেপথ্যে কী কোনো সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধি আছে?
বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সেক্টরগুলোর কর্মকা- ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক ওঠে। যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ইচ্ছামতো করে ব্যবহার করেন। ব্যতিক্রম শুধু দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী এখনো সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। যার জন্য নির্বাচন এলেই এখনো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি তোলেন। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে নির্বাচনে কারো পক্ষে প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম এবং ভোট কারচুপি করা সম্ভব নয়। সে জন্যই দেশের মানুষ এখনো ভরসাস্থল হিসেবে সেনাবাহিনীকেই মনে করেন। শুধু কী তাই? মুক্তিযুদ্ধের অবদানের দিকে তাকালেও আমাদের সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমের ভূমিকা পরিষ্কার। ’৭১ মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার ৬৭৬ জনকে খেতাব দেয়। এর মধ্যে ৫২০ জনই সেনাবাহিনীর সদস্য। আর বাকি ১৫৬ জন বেসামরিক ব্যক্তি। যে ৭ জনকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেয়া হয় তারা সবাই সামরিক বাহিনীর সদস্য। ৬৮ জন বীর-উত্তমের মধ্যে ৬৬ জনই সামরিক বাহিনীর; মাত্র ২ জন অন্যান্য। ১৭৫ জন বীর বিক্রমের মধ্যে ১৪২ জনই সামরিক বাহিনীর সদস্য। সামরিক বাহিনীর ৩০৫ সদস্য বীরপ্রতীক খেতাব পান; আর এই খেতাবে ভূষিত হন সারাদেশের বেসামরিক মাত্র ১২১ জন ব্যক্তি। অতএব বোঝা যায় দেশের স্বাধীনতা,-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর অবদান কোন্ পর্যায়ে! বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর প্রতি দেশের মানুষের আস্থা প্রশ্নাতীত। সেই সেনাবাহিনীর প্রতি কী হঠাৎ কোনো কুদৃষ্টি পড়লো?
বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক নাগরিক প্রতিবছর চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছেন। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ভারতে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেন বাংলাদেশি পর্যটক। প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি ২০১৬ সালে ভারত ভ্রমণ করেন যা ২০১৫ সালের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। ওই বছর ভারতে পর্যটক পরিসংখ্যানে এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালে পর্যটক তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র; এর পরেই আছে যুক্তরাজ্য। ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে দিন দিনই বাড়ছে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা। ২০১২ সালে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটক ভ্রমণের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ লাখ ৮০ হাজার। চার বছরে ২০১৬ সালে এসে তা তিন গুণ বেড়ে যায়। ২০১৬ সালে ভারত ভ্রমণের মোট পর্যটকের প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশই ছিল বাংলাদেশি। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট পর্যটকের সাড়ে ১৪ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের সাড়ে ৯ শতাংশ। চিকিৎসা, ব্যবসা ও কেনাকাটার উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশিরা ভারত ভ্রমণ বেশি করেন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৪ জন বিদেশীকে চিকিৎসা ভিসা দেয় ভারত। যার অর্ধেকই ছিল বাংলাদেশি। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা আরও বেশি। ২০১৬ সালে পর্যটন খাতেই ভারত আয় করেছে প্রায় ২ হাজার ৩শ’ কোটি ডলার। কাজেই বিদেশী পর্যটকদের জন্য আর্কষণীয় সুবিধা ভারত দেবে সেটাই স্বাভাবিক।
যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে যান পর্যটন সেক্টরে লাভালাভের কারণেই ভারতের উচিত তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। পর্যটকরা যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হন সে দিকে দৃষ্টি দেয়া। বিশেষ করে চিকিৎসার লক্ষ্যে ভারতে যাওয়া নারী, শিশু, বৃদ্ধদের জন্য বিশেষ ছাড়-সুবিধা যেমন দেয়া উচিত; তেমনি মানবিক কারণে গরীব দুঃখী রোগীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা উচিত।  ভারত ভিসা প্রক্রিয়াকে সহজতর করছে এটা খুশির খবর। ভ্রমণকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সেটাও ভাল। কিন্তু বাংলাদেশের দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর পরিবারের সদস্যদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নিয়েই যতো সন্দেহ। বাংলাদেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতো সেনাবাহিনী পরিবারের সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা ভারত ভ্রমণে সুযোগ-সুবিধা পাবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন শুধু সেনাবাহিনীর পরিবারের সদস্যদের জন্য পৃথক সুবিধা দেয়ার চিন্তা ভারতের নীতিনির্ধারকদের মাথায় আসে; তখন দেশের মানুষের চিন্তায় নতুন করে সন্দেহের ভাঁজ পড়তে শুরু করে। প্রবাদে আছে ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়’। ’৭১-এর পর এই ৪৫ বছরে প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারত বন্ধুত্বের নামে শুধুই বাংলাদেশের কাছে নিচ্ছে; দিচ্ছে না  কিছুই। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পর ’৭৪ সালে বেরুবাড়ি দেয়া হলেও ভারত সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ৪০ বছর সময় নিয়েছে। ট্রানজিট, করিডোর, সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুবিধাসহ অনেক কিছু নিচ্ছে। অথচ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও তিস্তা চুক্তি ঝুলে রেখেছে ৫ বছর ধরে। এখন উল্টো ফেনি নদী থেকে পানি তুলে নিচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বিবেচনা করে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এলাকায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে বাংলাদেশের রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করছে। এছাড়াও ভারত এমন একটি দেশ যে দেশের সঙ্গে কোনো প্রতিবেশি দেশের সুসম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতীক। অতএব ভারত যখন হঠাৎ করে ঢাকঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক সর্বজন গ্রহণযোগ্য দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর পরিবারের সদস্যদের জন্য পৃথক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়; তখন দেশের মানুষের চিন্তায় আসে এই সুবিধার নেপথ্যে কোনো কূটকৌশল আছে কিনা। কারণ এমন একটি হিন্দুত্ববাদী চানক্যনীতির দেশ ভারত; যাকে পৃথিবীর কোনো দেশই আস্থায় নিতে বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রবাদে আছে ‘দিল্লী যার বন্ধু তার শত্রুর প্রয়োজন পড়ে না’। সিকিমের প্রসঙ্গ না এনেও নেপালের সঙ্গে দেশটি যে আচরণ করছে তা থেকেই বোঝা যায় প্রবাদটি যথার্থই। অতএব ভয়টা সেখানেই।



 

Show all comments
  • আনোয়ার ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৮:১২ এএম says : 0
    অতিভক্তি যে চোরের লক্ষন তাতো আমরা সবাই জানি। সুতরাং সেই অতিভক্তির ...........................
    Total Reply(0) Reply
  • Shimul ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৫১ পিএম says : 0
    asole e bisoy ti khub e sondheho jonok
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    অনেক তথ্যবহুল, যৌক্তিক ও অথ্যান্ত সময় উপযোগী লেখা । লেখককে অসংখ্য মোবারকবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিয়া ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    একটা কথা মনে রাখা উচিত, ভারত স্বার্থ ছাড়া কোন কিছু করে নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৫৫ পিএম says : 1
    আমি মনে করি, আমাদের সেনাবাহিনী অত্যান্ত চৌকস, তারা কারো পাতা ফাঁদে কখনও পা দিবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মমতাজুল ইসলাম ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৩:০০ পিএম says : 0
    আমাদেরকে সব সময় খুব সতর্কতা অবলম্বণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সফিউন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৩:০১ পিএম says : 0
    আসলেই বিষয়টি আমার কাছেও খুবই রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাজ্জাদ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৩:০৩ পিএম says : 0
    সিকিম ও নেপালের কথা আমাদের সর্বদা মাথায় রাখতে হবে। ওগুলো এক মূহূর্তের জন্য ভুলে গেলে চলবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মিলন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৩:০৬ পিএম says : 0
    এগুলো নিয়ে অত ভাবার কিছু নাই আমাদের সেনাবাহিনী অত্যান্ত দেশপ্রেমিক। ভারতের কোন খারাপ টার্গেট থাকলে সফল হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • বিপ্লব ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৩:০৯ পিএম says : 1
    এই জন্যেই দৈনিক ইনকিলাবকে এত পছন্দ করি। তারা সব সময়ই দেশ ও জাতির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। ইনকিলাবের জন্য দোয়া রইলো, তারা যেন এই কাজ অব্যহত রাখতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ