Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে সুখের ইন্ধন দিলেও জনগণ শঙ্কিত : রিজভী

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের (ওকা) বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে সুখের ইন্ধন দিতে পারে, কিন্তু জনগণের মধ্যে তার এই বক্তব্য বড় ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। ষড়যন্ত্র ও অশুভ পরিকল্পনার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচন করার যে কোনো অপচেষ্টা জনগণ রুখে দেবে। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
একই সাথে পদ্মাসেতুর প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে আসা বিশ্বব্যাংকের ঢাকার সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের কাযর্ক্রম তদন্ত এবং তাদের ১৬টি গাড়ি তলবের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। রিজভী আহম্মেদ বলেন, কানাডার আদালতের রায়ের পর প্রচÐ ক্ষুব্ধ সরকারের নির্দেশেই এনবিআর (রাজস্ব বোর্ড) ও দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) বাংলাদেশে অফিসে কাজ করা বিশ্বব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখে তাদের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করছে। ইতোমধ্যে এনবিআর বিশ্বব্যাংকের ১৬টি গাড়ি তলব করেছে।
বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী থেকে শুরু করে দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতারা যেভাবে বক্তব্য রাখছেন, তা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অশনিসঙ্কেত। যা দেশের জন্য শুভ নয়, অশুভ লঙ্ঘন। এতে দেশ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকা অফিসে এত কিছুর পরও বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। তারা যে অভিযোগ করেছিল পদ্মাসেতু নিয়ে, সেই অভিযোগের বিষয় থেকে সরে আসেনি।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বিশ্বব্যাংক সর্বোচ্চ আমাদের নিম্ন সুদে অর্থাৎ শতকরা পয়েন্ট পাঁচ টাকা সুদে ঋণ দেয়। বাংলাদেশে এখনো বিশ্বব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান। দেশের অবুুকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি সেক্টরে তাদের বড় বড় প্রকল্প রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো ও দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থায়নে শতাধিক প্রকল্প চলমান আছে।
কানাডার আদালতের রায়ের পর বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মন্ত্রী-আওয়ামী লীগের নেতাদের লাফা-লাফি ও দাম্ভিকতা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এই সংস্থাটির সাথে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এতে করে দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, যেখানে এই সরকার দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন, এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতি নেই, লুট করে দেশের সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফোকলা করে দেয়া হয়েছে, শেয়ারবাজার থেকে লক্ষ-কোটি টাকা লোপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজনেরা।
শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীনেরা হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাঁচার করে সুইস ব্যাংক ভরে ফেলেছে ও কানাডায় বেগমগঞ্জে বাড়ি তৈরি করেছে। মালয়েশিয়ায় সুরম্য ভিলা বানিয়েছে। তারাই এখন নিজেদের সাফসুতরো হিসেবে জাহির করে উচ্চস্বরে চিৎকার করছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার জন্য নির্বাচন ও সংবিধান বসে থাকবে না। আমি তাকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এ ধরনের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে সুখের ইন্ধন দিতে পারে, কিন্তু জনগণের মধ্যে তার এ বক্তব্য বড় ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। তার বক্তব্যে যে ষড়যন্ত্র ও অশুভ পরিকল্পনার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে, তা কারো হৃদয়াঙ্গম করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ বক্তব্য দখলের প্রতিধ্বনি।
আমরা দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, নির্বাচনে আস্থাশীল ও বিশ্বাসী একটি দল বিএনপিবিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যিনি বারবার অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে অর্গলমুক্ত করেছেন, তাকে ও তার দলকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচন করার যে কোনো অপচেষ্টা জনগণ রুখে দেবে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর রেডিসন হোটেলের সামনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার কিংবা জেলে পাঠানোর কোনো ভাবনা সরকারের নেই। আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সে কারাগারে যাবে কি না, সে মাফ পাবে কি না সেটা আদালত বলতে পারবে। সময় ও স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি বাংলাদেশের সংবিধান ও নির্বাচন কারো জন্য অপেক্ষা করবে না।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থÑ এই দুই মামলার বিচারকাজ চলার পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহসহ নাশকতার অভিযোগে বেশকিছু মামলা রয়েছে।
আগামী ৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য পাবনার সুজানগরে উপজেলা পরিষদে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজারী জাকির হোসেনের বাড়িতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার অভিযোগ করে রিজভী বলেন, গত বৃহস্পতিবার চার মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল বোঝাই করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজারী জাকির হোসেনের বাসায় হামলা চালায়। বাসায় তাকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর চালায় ও পরিবারের সদস্যদের সাথে অশালীন আচরণ করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
আজকে যেহেতু মনোনয়নপত্র প্রদানের শেষ দিন, সেজন্য সন্ত্রাসীরা জোর করে হাজারী জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার লক্ষে এ হামলা চালিয়েছে। সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে গেছে, যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে, তাহলে দেখে নেয়া হবে। এটাই হচ্ছে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে নির্বাচন শুরু হওয়ার নতুন দৃষ্টান্ত। ফেনী স্টাইলের আলামত শুরু হয়েছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. শাহজাদা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ