Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে স্যামসাং প্রধান কে হচ্ছেন নতুন বস?

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : স্যামসাং গ্রুপের প্রধান জে ইয়ং লিকে ঘুষ ও দুর্নীতির কেলেঙ্কারি অভিযোগে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালত। তার অনুপস্থিতিতে কে সামলাবে এত বড় সাম্রাজ্য? আলোচনা তিনজনকে নিয়ে। স্যামসাংয়ের পর্যবেক্ষণকারীরা বলছেন, লির গ্রেপ্তারে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কোম্পানি লিমিটেড বা গ্রæপের অন্যান্য কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রমে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো পেশাদার ব্যবস্থাপকেরা পরিচালনা করেন। তবে লি যদি দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকেন, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে ও পরিকল্পনাগত সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে লির গ্রেপ্তারের ফলে প্রতিষ্ঠানটির তিনজন নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর মানুষের নজর পড়বে বেশি। তারা হচ্ছেন, স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ভাইস চেয়ারম্যান
৬৬ বছর বয়সী চই গি-সা, ৬৪ বছর বয়সী কুন এবং ৪৬ বছর বয়সী লি বু-জিন। কুন ওহ-হুন বর্তমানে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং লি বু-জিন হোটেল শিলা কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এবং স্যামসাং প্রধান জে ইয়ং লিনের ছোট বোন।
এর আগে দুর্নীতি অনুসন্ধান ও প্রভাব খাটানোর তদন্তের অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী লি জে-ইয়ংকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়। স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ভাইস প্রেসিডেন্ট লির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি কিছু সুবিধার বিনিময়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চোই সুন-সিলের অলাভজনক কোম্পানিকে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার (৪৩ বিলিয়ন উন) ঘুষ দিয়েছেন। এই কেলেঙ্কারির কারণে পার্লামেন্টে পার্ককে অভিশংসনের পক্ষে ভোট পড়ে।
গতকাল আদালতের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, নতুন করে আনা ফৌজদারি অভিযোগ ও প্রমাণের আলোকে লি জে-ইয়ংকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন।
গত বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানিতে হাজির হওয়ার পর তাকে আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। স্যামসাং গ্রæপের প্রধান লি কুন-হির ছেলে লি জে-ইয়ং। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হের দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ৪৮ বছর বয়সী লিকে এই কেলেঙ্কারির মূল হোতা হিসেবে ধারণা করা হলেও গত সপ্তাহে অপর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতারের নির্দেশ দেননি আদালত। গত মঙ্গলবার আইনজীবীরা তাকে গ্রেফতারের জন্য দ্বিতীয়বার আরজি পেশ করেন। তারা এ সময় আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করার কথা বলেন।
স্যামসাংয়ের প্রধানকে গ্রেফতারের ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল। এ ঘটনায় পুরো প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ধাক্কা। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমান বিশ্বে বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইলেকট্রনিকস।
বর্তমানে স্যামসাংকে বড় ধরনের ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ফ্ল্যাগশিপ গ্যালাক্সি নোট ৭ স্মার্টফোনে ব্যাটারি সমস্যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত নিতে হয়েছে স্যামসাংকে।
স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি থেকে বড় অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয় অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানকে, যা পরিচালনা করেন প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন-হাইয়ের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন চোই সুন-সিল। চোইয়ের ওপর বলপ্রয়োগ ও প্রতারণা চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চোই সুন-সিল সরকারের বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণে মধ্যস্থতা করছেন এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
২০১৫ সালে ইলেকট্রনিক জায়ান্টটির অধীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান শেইল ইন্ডাস্ট্রিজের একীভূত হয়। এটি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বহুসংখ্যক শেয়ারধারীর ভিন্নমত থাকলেও এই একীভূত হয়। তাদের দাবি ছিল, এই চুক্তির মাধ্যমে সংখ্যালঘু শেয়ারধারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে লাভবান হবে স্যামসাং গ্রæপের মালিক লি কুন-হি-এর পরিবার। দুই প্রতিষ্ঠানেই শেয়ার থাকা জাতীয় পেনশন তহবিল পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল পেনশন সার্ভিস (এনপিএস) এই চুক্তির পক্ষে ভোট দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, এই চুক্তিতে প্রেসিডেন্টের সমর্থন পাওয়ার জন্য চোই সুন-সিল ও তার মেয়েকে ৩১ লাখ ডলার ঘুষ দেয় স্যামসাং। এ বিষয় গত মাসে এক শুনানিতে স্বীকারও করে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, চোই সুন-সিলের মেয়ের কর্মজীবনে উন্নতির জন্য এ অর্থ দেওয়া হয়।
দুর্নীতির অভিযোগে গত মাসে দেশটির পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন-হাইয়ের বিরুদ্ধে অভিশংসন করার পক্ষে ভোট দেন অধিকাংশ আইনপ্রণেতা। পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্ত বহাল বা খারিজ করার ক্ষমতা রয়েছে সাংবিধানিক আদালতের। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পার্ক গুন হে ও চোই সুন-সিল জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সূত্র : রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ