Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমদানি গোঁজামিলে রাজস্ব ফাঁকি

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : আমদানি বাণিজ্যে বিভিন্ন অসদুপায়, জালিয়াতি ও মিথ্যা ঘোষণায় পণ্যসামগ্রী আমদানির প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না। মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যসামগ্রীতে ব্যাপক হারে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে অসৎ সিন্ডিকেট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর সতর্কবাণীও আমলে নিচ্ছে না অসাধু চক্র। আর একইসাথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আনীত পণ্যের চালান আটকও অব্যাহত রয়েছে। কাস্টম হাউস এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নজরদারি বৃদ্ধির ফলে ধরা পড়ছে অসদুপায়ে আনীত চালান। এবার আটক করা হয়েছে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত এলইডি টিভি সেটের অবৈধ চালান।
বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলে আমদানি বাণিজ্যে ব্যাপক গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়ে বিদেশ থেকে এসব চালান আনা হয়ে থাকে। আমদানির ডকুমেন্টে একশ্রেণীর পণ্যের ঘোষণা দিয়ে প্রকৃতপক্ষে আনা হচ্ছে আরেক পণ্য। এতে করে শুল্ক-করের হারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের তারতম্য ঘটানো হচ্ছে। অসৎ ব্যবসায়ী-আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্টদের অতিচাতুর্য ও ধূর্ততার ফলে অনেক চালানই ধরা পড়ে না। হরেক অপকৌশল কাজে লাগিয়ে ‘ঘাট’ পার হয়ে যায় অনেক চালান। এর পেছনে বন্দর-কাস্টমসের অসাধু চক্রের যোগসাজশের অভিযোগও দীর্ঘদিনের। আমদানির গোঁজামিলের কারণে রাজস্ব গচ্ছা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ মিথ্যা ঘোষণায় বা গোঁজামিলের চালান আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
আমদানি সম্পর্কিত ডকুমেন্ট জালিয়াতি কিংবা মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী আমদানি করে শুল্ক-করের বড় ধরনের তারতম্যে নয়-ছয় করার প্রবণতা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যা কোনভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমদানি ছাড়াও অনেক সময়ই রফতানি চালানের ক্ষেত্রেও ডকুমেন্ট জালিয়াতি ও মিথ্যা ঘোষণার অপকোৗশল অবলম্বন করা হয়ে থাকে। জাল, ভূয়া অথবা মিথ্যা ডকুমেন্টের মাধ্যমে শিল্পের যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য ইত্যাদি আমদানির নামে ঘোষণা বহির্ভূত অন্য কোন ধরণের মালামাল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যদিয়েই ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বিপুল অংকের শুল্ক-কর বা রাজস্ব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উচ্চহারের শুল্কায়ন যোগ্য পণ্যসামগ্রীকে কম শুল্কহারের, নিম্নতম শুল্ক-স্তরের এমনকি নামমাত্র কিংবা শূণ্য শুল্কহারের পণ্য হিসেবে আমদানির আনুষঙ্গিক জাল ডকুমেন্টে ঘোষণা দেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া ডকুমেন্টে এক পণ্যের নামে আরেক ধরনের পণ্যের ঘোষণা দেয়া হয়। এভাবে শুল্ককর বা রাজস্বের হারে ব্যাপক তারতম্য করে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। এভাবে গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় ও ডকুমেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে আনীত ২৮টি অবৈধ চালানের বিপরীতে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টার ঘটনা ধরা পড়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব ক্ষেত্রে জরিমানাসহ বাড়তি শুল্ককর আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তবে এর বাইরেও অনেক চালান শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে ছাড় পেয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। আমদানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণাসহ বিভিন্ন গোঁজামিল উদঘাটন করার জন্য কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে পর্যাপ্ত জনবল, দক্ষতা-অভিজ্ঞতা, উন্নততর যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই সাথে বন্দর কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসৎ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে অনেক গোঁজামিলের চালান কর্তৃপক্ষের হাত ফসকে পার পেয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় আনীত একটি চালান সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে টেলিফোন সেট আমদানি করা হয়েছে মর্মে আনুষঙ্গিক ডকুমেন্টে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমদানিকৃত একটি কন্টেইনারে সনি ব্রান্ডের ১৬২টি এলইডি টেলিভিশন সেট মিলেছে। সেই সাথে পাওয়া গেছে ৮৪৮ পিস টেলিফোন সেট। সর্বশেষ আটক এই আমদানি চালানে ৩০ লাখ টাকা শুল্ক-কর তথা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছিল বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান। গত ১৬ ফেব্রæয়ারি বৃহস্পতিবার দিনভর আমদানি কন্টেইনার পরীক্ষা ও শতভাগ কায়িক যাচাই করে উপরোক্ত পণ্যসামগ্রী পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনের এমএম ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর থেকে ৪ হাজার ৫০০পিস টেলিফোন সেট আমদানির ঘোষণা দিয়ে এক কন্টেইনার পণ্য আমদানি করে। আমদানিকারকের পক্ষে সিএন্ডএফ এজেন্ট অর্পিতা এসোসিয়েটস চালানটি খালাসের জন্য কাগজপত্র জমা দেয়। কিন্তু টেলিফোন সেট আনার ঘোষণা দিয়ে উচ্চহারের শুল্ক-আদায়যোগ্য পণ্য আমদানি করা হয়েছে এ ধরনের গোপন সূত্রে তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চালানটি আটক করে। এরপর শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি ধরা পড়ে।
চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস কর্মকর্তা এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আটক কন্টেইনারের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে সেখানে ১৬২টি এলইডি টিভি সেট পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৫৬ পিস ৩২ ইঞ্চি এবং ১০৬ পিস ২৪ ইঞ্চি টিভি সেট। তদুপরি কাগজপত্রে ৪ হাজার ৫শ’ টেলিফোন সেট আমদানির ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবে পাওয়া যায় ৫ হাজার ৩৪৮ পিস। ঘোষণার চেয়ে ৮৪৮ পিস বেশি পাওয়া গেছে টেলিফোন সেট। এর মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ফার্মটি প্রায় ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অপচেষ্টা করে এবং এ ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ