Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গাইবান্ধা-১ উপ-নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী কাদের খান সস্ত্রীক গৃহবন্দি

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নিরাপত্তা প্রদানের নামে আটক করা হয়েছে ড্রাইভার, কর্মচারী ও দুই দলীয় কর্মীকে
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের শুন্য হওয়া গাইবান্ধা-১ আসনের আসন্ন উপ-নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও এই আসনের সাবেক (জাতীয় পার্টি ) এম পি লেঃ কর্ণেল ডাক্তার আব্দুল কাদের খান এমপি ও তার স্ত্রী ডাক্তার নাসিমা খানের মালিকানাধীন বগুড়ার গরীব শাহ ক্লিনিকটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। লেঃ কর্ণেল ডাক্তার কাদের বৃহস্পতিবার রাতে এই ক্লিনিকে প্রবেশের পর থেকে পুলিশ ক্লিনিকটি ঘিরে রেখেছে। কি কারণে পুলিশ তাকে সস্ত্রীক কার্যত গৃহবন্দি করেছে তা’ জানাতে অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে লেঃ কর্ণেল (অব.) ডাক্তার কাদের খানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধানের অজুহাতে পুলিশ ক্লিনিক ঘেরাও করেছে বললেও তার ড্রাইভার হান্নান, ক্লিনিকের কেয়ার টেকার মামুন, দলীয় কর্মী মেহেদী ও শাহীনকে ধরে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে রেখেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কাদের খানের স্ত্রী ডাক্তার নাসিমা খান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের একদল পুলিশ বগুড়া শহরের রহমান নগর এলাকায় অবস্থিত গরীব শাহ ক্লিনিক ঘেরাও করলে প্রথমে অনেকেই ব্যাপারটা মোবাইল কোর্টের কাজ বলে ধারণা করে। তবে ক্লিনিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাতের বেলা মোবাইলকোর্ট কেন জানতে চাইলে পুলিশ তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করে। এই ঘটনার কিছু আগেই নিজের পৈতৃক বাড়ী সাদুল্যাপুর এলাকা থেকে একদফা পুলিশী জেরার মুখোমুখি হয়ে গাড়িযোগে এসে ক্লিনিকে প্রবেশ করেন লে. কর্ণেল (অব.) ডা. কাদের খান। তিনি গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার পর পুলিশ তার গাড়ির চালক হান্নান ও ক্লিনিকের কেয়ার টেকার মামুনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে যায়। ডাক্তার নাসিমা পুলিশের কাছে ব্যাপার কি জানতে চাইলে পুলিশরা বলে,‘আমরা স্যারের নিরাপত্তা দিতে এসেছি এর বেশি কিছু বলতে পারবো না ।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডাক্তার নাসিমা সাংবাদিকদের ফোনে জানান, অতি সম্প্রতি কাদের সাহেব গাইবান্ধা (সুন্দরগঞ্জ)-১ আসনের শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনের ঘোষণা দেন। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনি বৃহস্পতিবার তার পৈতৃক বাড়ীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রজেক্ট পরিদর্শন করে দলীয় কর্মী মেহেদী ও শাহীনকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। কিন্তু বিকেলের দিকে পথিমধ্যে পুলিশ ও একদল সাদা পোশাকধারী মেহেদী ও শাহীনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। পরে গাড়িসহ কর্ণেল কাদেরকে সম্ভবত বগুড়ার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে (পিবিআই) নিয়ে যায়। সেখানেই তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘স্যার আপনার কোন সমস্যা (ভয়) নাই, শুধু বলুন আপনি এদের (মেহেদী / শাহীন ) চিনেন কিনা ?’
জবাবে কাদের খান বলেন ‘ওরা আমাদের দলীয় কর্মী।’
এর পর বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণের পর তাকে চলে যেতে বলা হয়। আনুমানিক রাত ৯টায় কাদের খান নিজের ক্লিনিক কাম বাস ভবনে পৌঁছার আধাঘন্টার মধ্যেই পুলিশ এসে তাকে সস্ত্রীক অবরুদ্ধ করে। লেঃ কর্ণেল কাদের খানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও তার স্ত্রী ডাক্তার নাসিমা খানের সাথে সাংবাদিকরা কথা বলতে পেরেছেন। পুলিশের এই তৎপরতায় ক্লিনিকের স্বাভাবিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার সারাদিনই ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা বগুড়ার আড়াই শ’ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের উল্টোদিকে শহরের রহমান নগরে অবস্থিত গরীব শাহ ক্লিনিকের সামনে অবস্থান করলেও কাউকেই পুলিশ ক্লিনিকের ভিতরে যেতে বা লেঃ কর্ণেল ডাক্তার কাদের দম্পতির সাথে কথা বলতে দেয়নি। পাশাপাশি সেখানে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশদের কেউই নিজেদের পরিচয় দেয়নি।
বিষয়টি নিয়ে বগুড়া পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত) সনাতন চক্রবর্তীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,‘ওখানে কোথাকার পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে, আমি জানি না। দয়া করে এ ব্যাপারে (এসপি) স্যারের সাথে কথা বলুন। এরপর এসপি আছাদুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে প্রথমে মেসেজ আসে ‘আই এ্যাম ইন এ মিটিং।’ পরে তার ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। বগুড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা ফোনে সাংবাদিকদের বলেন,‘তাকে (লেঃ কর্ণেল কাদের)কে পিবিআই-এ আনা বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।’ ফলে বিষয়টি নিয়ে জনমনে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য লিটনের মৃত্যুর পরে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন উপনির্বাচনে সেখানে আওয়ামী লীগের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের আইন উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে স্ব স্ব দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ ফেব্রæয়ারী। সম্ভবত, উপ-নির্বাচনে যেন লেঃ কর্নেল কাদের মনোনয়ন দাখিল করতে না পারেন সেকারণেই প্রভাবশালী কারো ইঙ্গিতে এই পুলিশ হয়রানীর নাটক সাজানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ