পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার ঃ রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বাঁশবাড়ি চাঁন মিয়া বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পুড়ে গেছে শতাধিক বসত ঘর। এতে কোন হতাহত না হলেও সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বস্তির শতাধিক পরিবার। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, এটি নাশকতা, পরিকল্পিত ঘটনা। বস্তির জায়গা দখল করতেই কোন চক্র আগুন লাগিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকা-ের পর শতাধিক পরিবারের কয়েকশ’ মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বস্তির বাসিন্দা ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান জানান, বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটা। তিনিসহ পরিবারের সকল সদস্যই ঘুমে। ঘুমে আচ্ছন্ন বস্তির সকল বাসিন্দাই। হঠাৎ তিনি নিজের ঘরের পাশেই অপর একটি ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন। চোখ মেলে বাইরে তাকিয়ে দেখেন ভয়াবহ আগুন। কোন কিছু না ভেবেই তার পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে তোলেন। পরে সকলকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে প্রাণ রক্ষা করেন।
এদিকে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, পলাশিসহ কয়েকটি স্টেশন থেকে মোট ১৫টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। দীর্ঘ ২ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার কর্মীরা আগুন নেভাতে সক্ষম হন। কিন্তু ততক্ষণে বস্তির সবগুলো অর্ধেকেরও বেশি ঘরই পুড়ে ছাই।
স্থানীয়রা জানান, চাঁন মিয়ার বস্তির প্রায় আড়াইশ’ ঘরে হাজারের বেশি মানুষ থাকে। সবাই অল্প আয়ের মানুষ। দিন আনে দিন খায়। টিন, কাঠ আর বাঁশের তৈরি ঘরের মধ্যে বেশ কয়েকটি দোতলা, তৃতীয় তলা ছিল। বস্তিবাসী বলছে, মনিরের ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। প্রথম ঘরটিতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সেই ঘরের বাসিন্দারা চিৎকার দিয়ে নিচে নেমে আসে। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে বস্তির অন্য বাসিন্দারা তড়িঘড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। আগুনে ১৩০টি ঘর পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক পলাশ চন্দ্র মোদক বলেন, তদন্তের আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বলেন, এক সময় আগুন বস্তি ছাড়িয়ে পাশের একটি ভবনেও ছড়িয়ে পড়ছিলো। ফায়ার কর্মীদের চেষ্টায় ভবনটি রক্ষা হয়।
বস্তির অপর বাসিন্দা সুমন বলেন, বস্তিবাসির চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে শুধু আগুন দেখতে পান। শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বের হন। সঙ্গে স্ত্রী। প্রাণরক্ষার্থে দৌড়াতে গিয়ে পায়েও আঘাত পান তিনি।
সুমনের প্রতিবেশি বসির বলেন, সকলকে নিয়ে ঘর থেকে বের হই। এরপর কিছু মালামাল আনতে ফের ঘরে যাই। কিন্তু আগুনের এতই তীব্রতা ছিলো যে, ঘর থেকে কিছু নিয়ে বের হবার মতো সুযোগ পাইনি।
বস্তিবাসী সুফিয়া বলেন, স্বাভাবিক আগুন লাগলে ধীরে ধীরে জ্বলতো। একের পর এক ঘর পুড়তো। কিন্তু বুধবার রাতে বস্তিতে যে আগুন লেগেছে, তা প্রায় একসাথে লাগে। সুফিয়ার দাবি, এটি নাশকতা। বস্তির জায়গাটি দখল করতেই একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
প্রায় একই সুরে ফারজানা নামে বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, আগুনের লেলিহান শিখায় ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। সব পুড়ে ছাই হয়েছে। ওই বস্তির জমির মালিকানা নিয়ে মামলা চলছে। আগুনের ঘটনা নাশকতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলেও তিনি দাবি করেন।
এদিকে জীবনের সঞ্চিত সহায় সম্বল হারিয়ে সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন পুড়ে যাওয়া বস্তির বাসিন্দারা। তাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি পাশের বাঁশবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের কক্ষ খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন। পরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা সেখানেই আশ্রয় নেন। একই সঙ্গে তদন্ত করে কিভাবে এ আগুনের ঘটনা ঘটেছে তা উদ্ঘাটন করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহায়তায় বস্তিবাসীদের গতকাল দুপুরের ও রাতের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সরকারিভাবে আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও এবং প্রতিষ্ঠান নিঃস্ব এ সকল মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে বলে ইচ্ছে পোষণ করেছেন। তিনি আরো বলেন, বস্তিবাসীরা যাতে ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা চলছে।
এদিকে, গতকাল সকাল সোয়া ৬টার দিকে ফার্মগেইট এলাকায় নিউ স্টার নামে একটি খাবার হোটেলে আগুনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।